বাংলারজমিন
১২ বছর ধরে গুম
ওয়ালীউল্লাহ ও মুকাদ্দাসকে আজও খুঁজে বেড়াচ্ছে পরিবার
ইবি প্রতিনিধি
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, শুক্রবার
২০১২ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি। ঢাকা থেকে কুষ্টিয়া যাওয়ার পথে গুম হয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী ওয়ালীউল্লাহ ও আল-মুকাদ্দাস। এরপর দিন গুনে গুনে বছর হয়ে গেল ১২টা। তাদের কোথায় রাখা হলো? বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে? এসব প্রশ্নের জবাব আজও কেউ দিতে পারেনি। তাদের ফিরে পাওয়ার আশায় আজও ছটফট করছে বাবা-মা। ওয়ালীউল্লাহ দাওয়া অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজের মাস্টার্সের ছাত্র ছিলেন। অনার্সে ছিলেন ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট। বাড়ি ঝালকাঠির কাঠালিয়া উপজেলার সোজালিয়া গ্রামে। বাবার নাম মাওলানা ফজলুর রহমান। আর মুকাদ্দাস ছিলেন আল-ফিকহ্ বিভাগের অনার্স চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। বাড়ি পিরোজপুর সদর উপজেলার খানাকুনিয়ারী গ্রামে। বাবার নাম মাওলানা আবদুল হালিম।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ১২ বছর আগে ঢাকা থেকে হানিফ পরিবহনের একটি বাসে (৩৭৫০) কুষ্টিয়া ফিরছিলেন তারা। কল্যাণপুর থেকে রাত সাড়ে ১১টায় বাসটি যাত্রা শুরু করে। তখন রাত ১টা। সাভারের নবীনগর পৌঁছালে গাড়িটি হঠাৎ থমকে যায়। সামনে ছিল র্যাব-৪ এর কালো গাড়ি। র্যাবের পোশাক পরা ৮-১০ জন। সঙ্গে সাদা পোশাকধারী কয়েকজন। হনহন করে সবাই গাড়িতে উঠলো। র্যাব ও ডিবি পরিচয়ে সবার মাঝ থেকে উঠিয়ে নেয়া হলো ওয়ালীউল্লাহ ও মুকাদ্দাসকে। এরপর থেকে তাদের আর কোনো খোঁজ মেলেনি। ওয়ালীউল্লাহ ছাত্রশিবিরের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার তৎকালীন অর্থ সম্পাদক এবং মুকাদ্দাস সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিলেন। এই ঘটনার কয়েকদিন পর ৬ ও ৮ই ফেব্রুয়ারি ঢাকার দারুসসালাম ও আশুলিয়া থানায় জিডি করেন তাদের পরিবার। এরপর পুলিশ ও র্যাবসহ প্রশাসনের কাছে বারংবার ধরনা দিয়েছেন। হাইকোর্টে রিটও হয়। তাদেরকে উদ্ধারের দাবিতে ক্যাম্পাসে ধর্মঘট, মানববন্ধন, মিছিলসহ বিভিন্ন আন্দোলন করে ইবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে প্রধানমন্ত্রী আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আকুল আবেদন জানায় পরিবার। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো থেকেও সরকারকে আহ্বান করা হয়। এত কিছুর পরও কেউই তাদের সন্ধান দিতে পারেনি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও গুমের খবর অস্বীকার করে। এদিকে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের গুম বিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপ বিভিন্ন সময়ে গুমের শিকার ৭৬ জনের একটি তালিকা দেয় বাংলাদেশ সরকারকে। তালিকায় নাম আছে ওয়ালীউল্লাহ ও মুকাদ্দাসেরও। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সম্প্রতি পতন হয় আওয়ামী লীগ সরকারের। পরে গুম হওয়া অনেককেই উদ্ধার করা হয়েছে গোপন বন্দিশালা থেকে। এ ছাড়া আওয়ামী সরকারের আমলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান ও এসব ঘটনার তদন্তে ২৭শে আগস্ট কমিশন গঠন করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এরপরই যেন নতুন করে আশার আলো দেখতে শুরু করেছেন তাদের পরিবার। ওয়ালীউল্লাহ ও মুকাদ্দাসকে ফিরে পাওয়ার আশায় পথপানে তাকিয়ে আছেন স্বজনরা।
ওয়ালীউল্লাহ কোথায় আছে, কেমন আছে সেটা অন্তত জানতে চান পরিবার। সম্প্রতি গুমের ঘটনা তদন্তে সরকার কমিশন গঠন করেছে। তদন্তে ওয়ালীউল্লাহর খোঁজ পাওয়ার আশা করছেন স্বজনরা। এদিকে মুকাদ্দাসের মা আয়শা সিদ্দিকা আজও ছেলের ফেরার অপেক্ষায় আছেন। তিনি বলেন, এখনো স্বপ্ন দেখি ছেলে বাড়ি ফিরে এসেছে, মা বলে ডাকছে। বাবা আব্দুল হালিমের ভাষ্য, ছেলে এখনো বেঁচে আছে নাকি মেরে ফেলা হয়েছে আজও জানতে পারিনি। তবে ছেলের ফেরার আশা ছাড়েননি তিনি। বাবা-মায়ের বিশ্বাস, একদিন তাদের ছেলে ঠিকই ফিরে আসবে।