দেশ বিদেশ
লক্ষ্মীপুরে টাকার অভাবে চিকিৎসা হচ্ছে না গুলিবিদ্ধ সুজনের
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
১১ অক্টোবর ২০২৪, শুক্রবার
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলিবিদ্ধ হয়ে এখন মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন লক্ষ্মীপুরের কলেজছাত্র খালেদ মাহমুদ সুজন (১৯)। তার ঘাড়-গলায় ও পুরো শরীর জুড়ে আরও ৮টি বুলেট রয়েছে। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছে না পরিবার। তার দেশে চিকিৎসা করানো সম্ভব নয়। তাই বিদেশে উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে শরীর থেকে গুলিগুলো বের করলেই তার জীবন বাঁচানো সম্ভব। সদর উপজেলার চররুহিতা এলাকার বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হতদরিদ্র শাহীন কাদিরের ছেলে ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এইচএসসি অধ্যায়নরত শিক্ষার্থী খালেদ মাহমুদ সুজন। মা-বাবাসহ ৫ জনের সংসার। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি সুজন। পরিবারের সদস্যদের আহার এবং নিজের পড়াশোনার খরচ জোগাতে খণ্ডকালীন একটি ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন।
গত ৪ঠা আগস্ট শহরের মাদাম ব্রিজ ও তমিজ মার্কেট এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে সহপাটিদের সঙ্গে অংশ নেয় সুজন। এ সময় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। একপর্যায়ে শহরের নিজ বাসভবনের ছাদ থেকে প্রকাশ্যেই সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি একেএম সালাউদ্দিন টিপুর নেতৃত্বে ছাত্র-জনতার ওপর এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ শুরু করে। এতে সুজনসহ ৩ শতাধিক শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়। মারা যায় চার শিক্ষার্থী। গুলিবিদ্ধ সুজনকে প্রথমে লক্ষ্মীপুর সদর পরে ঢাকার সিএমএইচ হাসপাতালে ভর্তি করে অপারেশনের মাধ্যমে দু’টি গুলি বের করা হয়। এখনো তার ঘাড়-গলায় ও ফুসফুসসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ৮টি গুলি রয়েছে। যেগুলো এখনো বের করা সম্ভব হয়নি। শরীরে এসব গুলি নিয়ে বাড়িতে মৃত্যুর যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন সুজন। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছে না বুদ্ধি প্রতিবন্ধী এই অসহায় পরিবার।
সুজন বলেন, ৪ঠা আগস্ট দুপুরে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম সালাউদ্দিন টিপুর নেতৃত্বে তাদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করে। এতে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ১০টি বুলেট প্রবেশ করে। অপারেশন করে দু’টি গুলি বের করলেও ৮টি গুলি এখনো শরীরের ভিতর রয়েছে। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না। এখনো সরকারিভাবে কোনো সহায়তা পায়নি। স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে সবার সহযোগিতা চান তিনি। প্রতিবেশী হুমায়ুন কবির, সোহেল ও সামছুল আলম রিটু বলেন, অসহায় এই পরিবার এখন খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছে। বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিল সুজন। সে পড়ালেখার পাশাপাশি খণ্ডকালীন একটি দোকানে চাকরি করে পরিবার ও পড়ালেখা চালিয়ে যেতেন। এখন কীভাবে সামনের দিনগুলো যাবে সে চিন্তায় পরিবার। সুজনকে দ্রুত বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে অন্তর্বর্তী সরকারের নিকট দাবি জানান আহত শিক্ষার্থীর স্বজনরা। সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মো. জয়নাল আবেদিন বলেন, সুজনের দেশে এই চিকিৎসা করানো সম্ভব নয়। প্রতিটি গুলি খুব ক্রিটিক্যাল। গুলির কারণে শরীরে ইনফেকশন দেখা দিবে। তাই বিদেশেই উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে শরীর থেকে গুলিগুলো বের করলেই তার জীবন বাঁচানো সম্ভব। যেকোনো সময় শরীরের ভিতরে গুলিগুলো বিস্ফোরিত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন চিকিৎসক।
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার মো. আকতার হোসেন বলেন, বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনায় একাধিক মামলা হয়েছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গুলিবর্ষণকারীরা ছাড় পাবে না। তাদের ধরতে ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চলছে। অপরাধী যতই বড় বা শক্তিশালী হোক না কেন? ধরা পড়তে হবেই। জেলা প্রশাসক রাজিব কুমার সরকার বলেন, বৈষম্যবিরোধী হতাহত শিক্ষার্থীদের পাশে জেলা প্রশাসন সব সময় আছে, থাকবে। পাশাপাশি যারা তাদের ওপর হামলা ও গুলিবর্ষণ করেছে, কেউ রেহাই পাবে না। তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। উদ্ধার করা হবে অবৈধ সকল অস্ত্র। এ বিষয়ে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
পাঠকের মতামত
যাদের জীবন ও রক্তের বিনিময়ে অর্জিত ক্ষমতায় বসেছেন । তাদের অবহেলা ?