ঢাকা, ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, শনিবার, ১১ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪ রজব ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

সিলেটে সীমান্ত নদী দেখতে ভোলাগঞ্জ জাফলংয়ে তদন্ত দল

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
৮ ডিসেম্বর ২০২৪, রবিবারmzamin

সিলেটের সীমান্ত নদী নিয়ে অনেক প্রশ্ন। বর্ষার প্রলয়ংকরী রূপ নেয়। আর শুষ্ক মৌসুমে ধু-ধু বালুচর। পানির ছিটেফোঁটাও থাকে 
না। বর্ষা এলেই আতঙ্কে থাকেন সবাই। হঠাৎ বন্যায় ডুবে যায় সিলেট নগর। লোকালয় ভেঙে তীব্র বেগে পানি ঢুকে বাংলাদেশে। ফলে সীমান্ত নদী নিয়ে গঠন করা হয়েছে একটি তদন্ত কমিটি। কয়েকদিন আগে সীমান্ত এলাকার নদীর বর্তমান পরিস্থিতি ঘুরে দেখে এসেছিলেন বিভাগীয় কমিশনার। আর গতকাল পরিদর্শন করেছেন এ সংক্রান্ত তদন্ত কমিটির সদস্যরা। সিলেট হচ্ছে মেঘালয়ের বিস্তীর্ণ পাহাড়ি এলাকার পাদদেশে অবস্থিত। সীমান্তের ওপারে রয়েছে বিশ্বের বৃষ্টিবহুল এলাকা চেরাপুঞ্জি। বারো মাসই বৃষ্টি হয় ওই এলাকায়। এ কারণে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে বৃষ্টি হলে ডুবে যায় সিলেট। মেঘালয় থেকে সিলেট জেলা দিয়ে কোম্পানীগঞ্জে ধলাই, গোয়াইনঘাটে পিয়াইন, বিছনাকান্দি, জৈন্তাপুরে সারি, কানাইঘাটে লোভা এবং আসামের বরাক থেকে জকিগঞ্জের অমলসীদে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর সৃষ্টি হয়েছে। এসব সীমান্ত নিয়ে সিলেটে দুশ্চিন্তার অন্ত নেই। প্রতিটি নদীর উৎসমুখে পলি ও পাথর জমে নদীর গতিপথ পরিবর্তন করে দিচ্ছে।  জাফলং, বিছনাকান্দি ও ধলাই নদীর উৎসমুখ খননের দাবি দীর্ঘদিনের। 

উৎসমুখে জমে আছে শত শত কোটি টাকার পাথর। এসব পাথর ভারত থেকে পানি আসতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। এ কারণে এ তিনটি নদীর উৎসমুখ খনন করে নদীগুলোর গতি প্রবাহ স্বাভাবিক করার দাবি উঠেছে। একইসঙ্গে তিনটি নদীর উৎসমুখের পাথর কোয়ারি খুলে দেয়ার দাবি জানাচ্ছে শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতারা। এ নিয়ে গত তিন মাস ধরে আন্দোলনে রয়েছে তারা। প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- স্থানীয়দের কিছু কিছু দাবি যৌক্তিক। এ কারণে প্রশাসন থেকে এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে উৎসমুখ খনন ও কোয়ারি খুলে দেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে। এদিকে গতকাল অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) দেবজিৎ সিংহের নেতৃত্বে ১১ সদস্যবিশিষ্ট প্রতিনিধিদল ভোলাগঞ্জ ও জাফলং জিরো পয়েন্ট এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এ সময় জাফলং পর্যটক জিরো পয়েন্ট থেকে নদীর পথে নৌকাযোগে সংগ্রামপুঞ্জি বল্লা ঘাট পর্যন্ত এলাকা ঘুরে ঘুরে দেখেন প্রতিনিধিদলের সদস্যরা।

 গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং জিরো পয়েন্ট ও বিছনাকান্দি জিরো পয়েন্টে পুঞ্জীভূত পাথর অপসারণ, একইসঙ্গে পাথর পুঞ্জীভূত হওয়ার ফলশ্রুতিতে নদীর গতিপথ পরিবর্তন, নদীর ভাঙন রোধে নদীর নাব্য বৃদ্ধির বিষয়ে করণীয় সংক্রান্ত সুপারিশ প্রদানের উদ্দেশ্যে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরিদর্শনকালে উপস্থিত ছিলেন- সিলেট ব্যাটালিয়নের (৪৮ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. হাফিজুর রহমান, সিলেট রেঞ্জের পুলিশ সুপার ও এনটি আমিনুল ইসলাম, সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম, সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব হোসাইন মোহাম্মদ আল জুনায়েদ, গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার সদ্য পদোন্নতি প্রাপ্ত (অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক) মো. তৌহিদুল ইসলাম, জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মে ছালিক রুমাইয়া, গোয়াইনঘাট সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সহিদুর রহমান, গোয়াইনঘাটের সহকারী কমিশনার ভূমি সাইদুল ইসলাম, গোয়াইনঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ সরকার তোফায়েল প্রমুখ। পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) দেবজিৎ সিংহ জানিয়েছেন-জাফলং জিরো পয়েন্ট ও ভোলাগঞ্জ জিরো পয়েন্টে পুঞ্জীভূত পাথর অপসারণ, একইসঙ্গে পাথর পুঞ্জীভূত হওয়ার ফলশ্রুতিতে নদীর গতিপথ পরিবর্তন, নদীর ভাঙন রোধ, সিলেট ব্যাটালিয়ন (৪৮ বিজিবি) এর অধীনস্থ বিওপিটি ধলাই নদীর ভাঙন  থেকে রক্ষার্থে রক্ষামূলক কাজ নির্মাণ এবং জাফলং ও সাদা পাথর পর্যটন স্পট থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত নদীর নাব্য বৃদ্ধির বিষয়ে করণীয় সংক্রান্ত সুপারিশ প্রদানের উদ্দেশ্যে গঠিত কমিটির সদস্যদের নিয়ে ভোলাগঞ্জ, ও জাফলং জিরো পয়েন্ট এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। পরিদর্শনে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হবে। পাথর ব্যবসায়ী ও শ্রমিক নেতারা গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন- বর্তমানে সীমান্ত পথে বৈধ ভাবে পাথর আমদানি বন্ধ রয়েছে। এ কারণে পাথরের সংকট দেখা দিয়েছে। এই অবস্থায় নির্মাণাধীন প্রকল্পের কাজ চালু রাখতে কোয়ারি খুলে দেয়ার দাবি সব মহল থেকে উচ্চারিত হচ্ছে। এদিকে জাফলং, ভোলাগঞ্জ ও বিছনাকান্দি কোয়ারি থেকে প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর থেকে প্রায় ৩শ’ কোটি টাকার পাথর লুটপাট করা হয়েছে। ফলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। পাথরখেকোদের থাবায় ধ্বংস হয়েছে জাফলংয়ের জুমপাড় এলাকার একটি বাঁধ। এই বাঁধ থেকে শতকোটি টাকার পাথর লুটপাট করছে চিহ্নিত পাথরখেকোরা। এ নিয়ে গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর নয়াবস্তি ও কান্দুবস্তির লোকজন বাঁধ এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষোভ জানিয়েছেন। পাথর লুট করে বাঁধ নিশ্চিহ্ন করে দেয়ায় ঢলে নয়াবস্তি, কান্দুবস্তি ও লাখের পাড়সহ কয়েকটি এলাকা পানিতে তলিয়ে যাবে বলে জানান তারা।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

Hamdard

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status