ঢাকা, ৪ জুলাই ২০২৫, শুক্রবার, ২০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৭ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

শেষের পাতা

ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক

প্রেসিডেন্টের ক্ষমা ও ঢাকার বাইরে হাইকোর্ট বেঞ্চ নিয়ে ঐকমত্য

স্টাফ রিপোর্টার
৪ জুলাই ২০২৫, শুক্রবার

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি ড. আলী রীয়াজ বলেছেন, সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে প্রেসিডেন্টের ক্ষমা প্রদর্শন সহ সব নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগে আইন প্রণয়নসহ ঢাকার বাইরে প্রতিটি বিভাগীয় শহরে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ বিভাগীয় পর্যায়ে করার বিষয়ে সকল রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। গতকাল রাজধানীর বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের নবম দিনের বৈঠক শেষে এসব কথা বলেন তিনি।

ড. আলী রীয়াজ বলেন, সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে প্রেসিডেন্টের ক্ষমা প্রদর্শনসহ সব নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগে আইন প্রণয়নের ব্যাপারে ঐকমত্য হয়েছে। রাষ্ট্রপতি এই উদ্দেশ্যে প্রণীত আইন অনুসরণ করে ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য  প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমা প্রদর্শনের জন্য, পূর্বে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা বৈধ উত্তরাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ক্ষমা প্রদর্শনের জন্য অধিকার অনুচ্ছেদ ৪৯, কোনো আদালত বা ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত যেকোনো দণ্ডের মার্জনা, বিলম্বন ও বিরাম মঞ্জুর করিবার এবং যেকোনো দণ্ড মওকুফ বা স্থগিত বা হ্রাস করিবার ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের থাকিবে। এবং আইন দ্বারা নির্ধারিত মানদণ্ড ও নীতি ও পদ্ধতি অনুসরণ করে উক্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করা হবে। 

তিনি আরও বলেন, রাজধানীর বাইরে প্রতিটি বিভাগে প্রধান বিচারপতি কর্তৃক নির্ধারিত হাইকোর্টের এক বা একাধিক স্থায়ী বেঞ্চ থাকবে। অর্থাৎ হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ বিভাগীয় পর্যায়ে করার বিষয়ে সকল রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য হয়েছে। এজন্য সুস্পষ্টভাবে সংবিধানের ১০০ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন করার প্রয়োজন হবে। জরুরি অবস্থা নিয়ে আজকে আলোচনা হয়নি। এর একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে যে প্রস্তাব ছিল- সেই প্রস্তাবটি ছিল এনসিসিকেন্দ্রিক। যেহেতু এনসিসি’র প্রস্তাবটি এখন টেবিলে নেই। সেহেতু ঐকমত্য কমিশন আবার বসে নতুন করে, অতীতে দুই মাস ধরে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যে আলোচনা হয়েছে এরই পরিপ্রেক্ষিতে জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত বিষয়ে আমরা একটি নতুন প্রস্তাব হাজির করবো। আগামী তিনদিন আলোচনা হবে না। আগামী সপ্তাহে আরও অগ্রগতি অর্জন করা যাবে বলে আশা করছি। 
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিগত সময়ে আমরা দেখেছি প্রেসিডেন্টের ক্ষমা প্রদর্শন করার ক্ষমতা যথেষ্ট অপব্যবহার করা হয়েছে। বিভিন্ন অপরাধে যাদের ফাঁসির রায় হয়েছিল তাদেরকেও ক্ষমা করা হয়েছে। প্রেসিডেন্টের ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতা আইনের মাধ্যমে প্রয়োগ করার বিষয়ে আমরা একমত পোষণ করেছি। বিদ্যমান আইনে যে বিধান রয়েছে তার সঙ্গে একটা বাক্য সংযোজন করার বিষয়ে সবাই একমত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, তবে প্রেসিডেন্টের ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতা সংসদের আইনের দ্বারা পরিচালিত হবে।

তিনি বলেন, সংসদ যে আইন করবে সে আইন করার সময় সবাইকে নিয়ে আলোচনা করা হবে যেন অপব্যবহার না হয়। ক্ষমা করার আগে ভিকটিমের পরিবার থেকেও অনুমতি নিতে হবে। এসব বিষয়ে সবাই একমত হয়েছে। এ ছাড়া হাইকোর্টের বিকেন্দ্রীকরণ নিয়ে সবাই একমত পোষণ করেছে। 

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিএনপি থেকে প্রস্তাব ছিল যে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে আলোচনা করে হাইকোর্টের বেঞ্চগুলো ঢাকার বাইরে স্থাপন করা যাবে উল্লেখ করতে হবে। হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চগুলো যেন প্রতি বছর এক বা দু’বার প্রয়োজন অনুসারে ঢাকার বাইরে স্থাপন করা হয়।  এ ছাড়া একটা বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছি যদি সংবিধানের পরিবর্তন এনে হাইকোর্ট ডিভিশনের পার্মানেন্ট বেঞ্চ করতে হয় তাহলে সুপ্রিম কোর্টের আলোচনা সাপেক্ষে করা উচিত। আমরা চাই জনগণ যেন অতিসহজে পায়। জনগণের কাছে আমাদের দায় অনেক বেশি। ঐকমত্যের জন্য আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করছি। 
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন,  প্রেসিডেন্টের ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ নিয়ে আমরা সকলে একমত পোষণ করেছি। বিগত সময়ে আমরা দেখেছি চিহ্নিত শীর্ষ সন্ত্রাসীদের ক্ষমা করা হয়েছে। কমিশন থেকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে যে, একটা বডি করে  তাদের সুপারিশক্রমে  প্রেসিডেন্ট ক্ষমা করবেন। কোন কোন ক্রাইটেরিয়া অনুসরণ করে কমিটি সুপারিশ করবে, তার একটি বিস্তারিত তালিকা করা হয়েছে। 

জামায়াতের পক্ষ থেকে নতুন প্রস্তাব দেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ব্যক্তিগত অপরাধে যে মামলাগুলো হয়েছে-যেমন কারও পিতাকে কেউ হত্যা করলো এসব মামলায় প্রেসিডেন্ট একক ভাবে ক্ষমা করতে পারবে না।  প্রেসিডেন্ট ক্ষমা করার আগে ভিকটিমের পরিবারের অনুমতি লাগবে। এ ছাড়া হাইকোর্টের বিকেন্দ্রীকরণ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিভাগীয় পর্যায়ে হাইকোর্টের বেঞ্চগুলো সমপ্রসারণের বিষয়ে সকলে একমত হয়েছে।  এখানে কিছু সমস্যা এসেছে, এত বিচারপতি পাওয়া যাবে কিনা, বিচারপতিরা এলাকায় যেতে রাজি হবে কিনা। সেজন্য আমরা বলেছি- বাজেট বৃদ্ধি করতে।     

এবি পার্টির সাধারণ সমপাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, ব্যক্তিগত অন্যায়, অবিচার ও জুলুমের বিরুদ্ধে যে ফৌজদারি মামলা হয়েছে, সে মামলাগুলোর শাস্তি ক্ষমা করার ক্ষমতা  প্রেসিডেন্টের থাকা উচিত না বরং বিচারিক প্রক্রিয়াতে কোনো অন্যায্যতা হলে রাষ্ট্র একটা আলাদা কমিশন করতে পারে। 

ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব ও মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন,  প্রেসিডেন্টের ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতা নিয়ে আমরা সকলে একমত হয়েছি। প্রেসিডেন্টের ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতা আইনের মাধ্যমে প্রয়োগ হবে। 

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, আলোচনায় প্রেসিডেন্টের ক্ষমা প্রদর্শন করার ক্ষমতা ও হাইকোর্টের বেঞ্চ বিকেন্দ্রীকরণ নিয়ে সবাই ঐকমত্য পোষণ করেছে।  

আমরা জাতীয় নাগরিক পার্টি মনে করি প্রেসিডেন্টের ক্ষমা প্রদর্শনের বিষয়টি অবারিত এবং নিরঙ্কুশ করে রাখা হয়েছিল, সেই জায়গায় আইনের বিধিবিধান প্রয়োজন। এমনভাবে এটা হওয়া প্রয়োজন যাতে করে কোনো অন্যায্য বিষয়ে, এমন কোনো ঘটনা যা সমাজের মধ্যে নানা ধরনের অন্যায়, অবিচার আরও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। এই বিষয়ে প্রেসিডেন্টের ক্ষমা অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। বিচারব্যবস্থার ভোগান্তির নিরসনে একটি প্রস্তাব আজকে এসেছে। ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব প্রতিটি বিভাগীয় শহরে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ তৈরি করা হবে। এ বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি। 
বৈঠকে কমিশনের সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, সফর রাজ হোসেন, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।

অন্যদিকে, বৈঠকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী,  জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, ইসলামী আন্দোলন, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। 
 

পাঠকের মতামত

অপরাধীকে রাষ্ট্রপতির খমা করে দেয়া একটি অগণতান্ত্রিক ও জোচ্চুরি। এই খমতা দিয়ে অনেক কঠিন অপরাধীকে রাজনৈতিক দলীয় বিবেচনায় খমা করে দেয়া হয়, যা বিগত সময়ে দেখেছি আমরা জনগণ। হাসিনা আবদুল হামিদকে দিয়ে বহু দুর্ধর্ষ অপরাধীকে খমা করে দেয়াইছে। সর্ব শেষ হামিদ অনৈতিক ভাবে সাবেক সেনাপ্রধান আজিজের দুর্ধর্ষ খুনি যোসেফ কে খমা করে অপরাধীদের উত্সাহিত করছে।

জনতা
৪ জুলাই ২০২৫, শুক্রবার, ১২:৪৫ অপরাহ্ন

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status