শেষের পাতা
চানখাঁরপুলে ৬ হত্যা
৮ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ ১৪ই জুলাই
স্টাফ রিপোর্টার
৪ জুলাই ২০২৫, শুক্রবার
জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে রাজধানীর চানখাঁরপুলে ৬ ছাত্র-জনতা হত্যা মামলায় পলাতক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন ৩ সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ আগামী ১৪শে জুলাই অভিযোগ গঠনের এ দিন ধার্য করেন।
ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, বি এম সুলতান মাহমুদ ও গাজী এম এইচ তামিম। এ দিন আসামিপক্ষে শুনানি করেন- আইনজীবী সাদ্দাম হোসেন অভি, ব্যারিস্টার সিফাত মাহমুদ শুভ, এবিএম শিবলী সাদেকীন ও আইনজীবী আবুল হাসান। মামলায় পলাতক ৪ আসামির পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্রীয় খরচে নিযুক্ত (স্টেট ডিফেন্স) আইনজীবী মো. কুতুব উদ্দিন।
আলোচিত এ মামলার আসামি কনস্টেবল সুজনসহ ৪ জনকে গতকাল সকালে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। বাকি ৪ জন পলাতক রয়েছেন। উপস্থিত অভিযুক্ত ৪ আসামি হলেন- শাহবাগ থানার সাবেক ওসি (অপারেশন) মো. আরশেদ হোসেন, কনস্টেবল মো. সুজন মিয়া, মো. ইমাজ হোসেন ইমন ও মো. নাসিরুল ইসলাম। আসামিদের উপস্থিতিতেই অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষে আদেশের জন্য ১৪ই জুলাই দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল। পলাতক ৪ আসামি হলেন- ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শাহ আলম মো. আখতারুল ইসলাম, রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল। এই ৪ আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে গত ৩রা জুন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আদেশ দেয়া হয়। তবে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়ার পরও পলাতক আসামিরা হাজির না হওয়ায় তাদের পক্ষে রাষ্ট্রীয় খরচে আইনজীবী (স্টেট ডিফেন্স) কুতুবউদ্দিনকে নিযুক্ত করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
শুনানিতে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা টার্গেটেড কিলিং, ওয়াইডস্প্রেড, সিস্টেমেটিক কিলিং ও সুপিরিয়র রিসপন্সসিবিলিটি নিয়ে আপত্তি জানায়। তারা বলেন, আন্দোলনে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা হয়েছিল। সুতরাং ওপরের নির্দেশে আসামিরা তাদের দায়িত্ব পালন করেছে মাত্র। পরে প্রসিকিউশন থেকে জানায় সারা দেশে ৫০টিরও বেশি জেলায় একই রকমের অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এই অপরাধ সংঘটনে চাইনিজ রাইফেল, এসএমজি ব্যবহার করা হয়েছে। আন্দোলনকারীদের শনাক্তকরণে ড্রোন ব্যবহার করে ও হেলিকাপ্টর থেকে গুলি ছুড়া হয়েছে। বাড়ি, বাড়ি যেয়ে আন্দোলনকারীদের ধরতে অভিযান চালানো হয়েছে। সুতরাং আসামিপক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য সঠিক নয়। চার্জ গঠন করার মতো যথেষ্ঠ আলামত রয়েছে। কাজেই তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করাই যুক্তিযুক্ত হবে।
শুনানি শেষে প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, জুলাই বিপ্লব চলাকালে পলাতক শেখ হাসিনা তার অবৈধ ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত প্রচেষ্টা চালিয়ে ছিলেন। মূলত ১৪ই জুলাই আন্দোলনে সম্পৃক্তদেরকে রাজাকারের বাচ্চা ও নাতি-পুতি বলার মাধ্যমে হাসিনা এই আন্দোলনের তীব্রতা দেন। পরবর্তীতে সারা দেশে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়লে তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও দলীয় নেতাকর্মীদেরকে তা দমনের নির্দেশ দেন। আন্দোলন দমনে ড্রোন, হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, গত ৫ই আগস্ট হাসিনার পতনের দিন চানখারপুলে চাইনিজ রাইফেল দিয়ে ৬ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। ওইদিন ঊর্ধ্বতন এক পুলিশ কর্মকর্তার সরাসরি নির্দেশ ও তত্ত্বাবধায়নে সেখানে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি ছোড়া হয়। আসামি কনস্টেবল মো. সুজনের সেদিন তার থেকে অনেক দূরে দাঁড়িয়ে থাকা লোকদের টার্গেট করে গুলি করেছে। আরাম-আয়েশে বসে রেস্ট নিচ্ছেন, আবার উঠে যেয়ে গুলি করছেন। এই ঘটনার ওপর আমরা ফরমাল চার্জ দাখিল করেছি। চার্জ গঠনের শুনানিতে আমরা আমাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেছি। আজকে ডিফেন্সের বক্তব্য দিয়েছে। তারা আসামিদের ডিসচার্জের আবেদন করেছে। আমরা আমাদের পাল্টা উত্তর দিয়েছি। ট্রাইব্যুনাল সব পক্ষকে শুনেছেন। চার্জগঠন হবে কিনা তার ওপর ট্র্রাইব্যুনাল আগামী ১৪ই জুলাই নিদের্শ দিবেন।