ঢাকা, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ৩০ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৩ শাবান ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

রয়টার্সকে ড. ইউনূস

হাসিনার উচ্চ প্রবৃদ্ধির বয়ান পুরোটাই ‘ভুয়া’

মানবজমিন ডেস্ক
২৫ জানুয়ারি ২০২৫, শনিবারmzamin

ক্ষমতাচ্যুত বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের উচ্চ প্রবৃদ্ধি নিয়ে যা প্রচার করতেন তার পুরোটাই ছিল ‘ভুয়া’। 
এমনটাই বলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৃহস্পতিবার সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনের ফাঁকে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি। এসময় হাসিনার সীমাহীন দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্ন না তোলায় বিশ্বকেও দোষারোপ করেছেন ড. ইউনূস।

রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এরপর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নেন ৮৪ বছর বয়সী ড. ইউনূস। ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পেয়েছিলেন এই অর্থনীতিবিদ। 

ক্ষমতায় বসে টানা ১৫ বছর দেশ শাসন করেন শেখ হাসিনা। ওই সময়ে দেশের অর্থনীতি এবং বিশাল পোশাক শিল্পের পুনরুজ্জীবনের কথা বলে এর পুরো কৃতিত্ব দাবি করেন তিনি। তবে তার বিরুদ্ধে সমালোচকদের গুরুতর অভিযোগ হচ্ছে, তিনি বাকস্বাধীনতা ও ভিন্নমত দমনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত। 

২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশ শাসন করা হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা, জোরপূর্বক গুম, দুর্নীতি এবং অর্থ পাচারের শক্ত অভিযোগ রয়েছে। যা তদন্ত করছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ ছাড়া নয়াদিল্লির কাছে তাকে প্রত্যর্পণের জন্য অনুরোধ জানিয়েছে ঢাকা। যদিও এসব অপকর্মের কথা স্বীকার করেন না হাসিনা এবং তার দল। অন্যদিকে এখনো ঢাকার অনুরোধে সাড়া দেয়নি দিল্লি।

দাভোসে অর্থনৈতিক সম্মেলনের ফাঁকে ড. ইউনূস উপস্থিত সকলকে উদ্দেশ্য করে কীভাবে দেশ পরিচালনা করতে হয়, তা বলেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, কেউই হাসিনার বিষয়ে প্রশ্ন তোলেনি। যা ভালো বিশ্ব ব্যবস্থার লক্ষণ নয়। ড. ইউনূস বলেন, এমনটা হওয়ার জন্য পুরো বিশ্বই দায়ী। তাই হাসিনা গোটা বিশ্বের জন্যই একটি ভালো শিক্ষা। 

তিনি বলেন, প্রবৃদ্ধির জন্য আমরা সকলকে ছাড়িয়ে গেছি, এ কথা পুরোটাই মিথ্যা।
কেন ওই প্রবৃদ্ধিকে ভুয়া মনে করেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলেননি ড. ইউনূস। তবে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির ওপর বিশেষ জোর দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। কোভিড মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আগে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি প্রায় ৮ শতাংশে পৌঁছায়। যেখানে হাসিনার ক্ষমতা গ্রহণের সময় অর্থাৎ ২০০৯ সালে প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ শতাংশ। 
২০২৩ সালে বাংলাদেশকে বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। ১৯৭১ সালের পর ২০১৫ সালেই প্রথম দরিদ্রতম দেশ থেকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের মর্যাদা অর্জন করে বাংলাদেশ।

সরকারি চাকরিতে কোটা বৈষম্যের বিরুদ্ধে গত বছরের জুলাইয়ে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। পরে হাসিনার দমন-পীড়নে এক সময় শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন সহিংস হয়ে ওঠে। যা বিশ্বব্যাপী সমালোচনার ঝড় তোলে। যদিও হাসিনা সবসময়ই তার অতিরিক্ত বল প্রয়োগের কথা অস্বীকার করেন।

হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে ড. ইউনূসের নাম সুপারিশ করেন ছাত্রনেতারা। এই অন্তর্বর্তী সরকারই বাংলাদেশে পরবর্তী নির্বাচন বাস্তবায়ন করবে বলে তাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। যার ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণা করেছেন ড. ইউনূস। ২০২৫ সালের শেষ অথবা ২০২৬ সালের প্রথমদিকে নির্বাচন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আগ্রহী নন।

‘দরিদ্রদের ব্যাংকার’ হিসেবে পরিচিত ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য ১০০ ডলারের কম ঋণ দেয় তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক। এই ক্ষুদ্র ঋণে উপকৃত হয়ে অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েছেন বলে নোবেল পান ড. ইউনূস। সাধারণত ঐতিহ্যবাহী ব্যাংকগুলো এভাবে কাজ করতে পারছে না।

রয়টার্সকে ড. ইউনূস বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আমি প্রবৃদ্ধির হার দ্বারা খুব বেশি প্রভাবিত নই। সমাজের প্রান্তিক মানুষের জীবনযাত্রার মান দ্বারা প্রভাবিত। তাই আমি এমন একটি অর্থনীতির কথা চিন্তা করি যেখানে সম্পদকে কেন্দ্রীকরণের ধারণা থেকে বের হওয়া যাবে।

হাসিনার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক গলায় গলায় থাকলেও তার পতনের পর পুরোপুরি পাল্টে যায় সে চিত্র। এখন ঢাকা ও নয়াদিল্লির সম্পর্কে এক ধরনের উত্তেজনা বিরাজ করছে। যদিও উভয় দেশই বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্কে আবদ্ধ। 
ঢাকা-দিল্লির তিক্ততার মূল কারণ শুধু শেখ হাসিনাকেই সমর্থন দিয়ে গেছে ভারত। এরমধ্যে জুলাই অভ্যুত্থানে আন্দোলনকারীদের ওপর দমন-পীড়নের অভিযোগে হাসিনাকে ফেরত চেয়েছেন ড. ইউনূস। যাতে এখনো সাড়া দেয়নি দিল্লি। ফলে দুই দেশের তিক্ততা বেড়েছে আরও কয়েক গুণ। 

রয়টার্স বলছে, ভারতের সঙ্গে বৈরী সম্পর্কের কারণে বাংলাদেশ এখন কিছুটা কঠিন পরিস্থিতিতে রয়েছে। এক্ষেত্রে এই কঠিন মুহূর্তে ভারতের চির প্রতিদ্বন্দ্বী চীনকে বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি বন্ধু হিসেবে অভিহিত করে ড. ইউনূস বলেন, নয়াদিল্লির সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েন ‘ব্যক্তিগতভাবে আমাকে অনেক কষ্ট দেয়’। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক যতটা সম্ভব শক্তিশালী হওয়া উচিত। আপনি জানেন, বাংলাদেশের মানচিত্র না এঁকে আপনি ভারতের মানচিত্র আঁকতে পারবেন না। কেননা, বাংলাদেশের স্থল সীমান্ত প্রায় পুরোটাই ভারতের সঙ্গে যুক্ত।

পাঠকের মতামত

ইউনুস সাহেবের বক্তব্যের সাথে আমি একমত নই।

Andalib
২৫ জানুয়ারি ২০২৫, শনিবার, ৫:৪১ অপরাহ্ন

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status