শেষের পাতা
মধ্যস্থতায় এগিয়ে এলেন আরিফ
স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বৃহস্পতিবারপূর্ব সিলেটের বিরোধ নিষ্পত্তিতে এগিয়ে এলেন সাবেক মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী। বিরোধের বিষয়টি শুনে নিজেই ছুটে গিয়েছিলেন হরিপুর মাদ্রাসার সমাবেশে। আলেম-ওলামাদের কাছ থেকে সময় চেয়ে ফিরেছিলেন সিলেট নগরে। এরপর গত তিনদিনে বৈঠকের পর বৈঠক করেন তিনি। খোঁজেন সমাধানের পথও। তাকে সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন রাজনৈতিক দলের নেতারাও। গতকাল বুধবার রাতে সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সহ সিলেটের রাজনৈতিক নেতারা হরিপুর মাদ্রাসায় যান। সেখানে তিনি আলেম-উলামা সহ স্থানীয় মুরব্বিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। অনুরোধ করেছেন ‘জৈন্তা ঘেরাও’ কর্মসূচি প্রত্যাহারের। শেষ খবরে জানা গেছে, বৈঠক চলছে। এ নিয়ে ইতিবাচক ফলাফল আসতে পারে বলে জানিয়েছেন বৈঠকে থাকা রাজনৈতিক দলের নেতারা। পূর্ব সিলেটের জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট হচ্ছে আলেম-উলামাদের এলাকা। ওখানে রয়েছে দারুল উলুম কানাইঘাট মাদ্রাসা, হরিপুর মাদ্রাসা, লাফনাউট মাদ্রাসা, আকুনি মাদ্রাসা সহ কয়েকটি স্বনামধন্য মাদ্রাসা। এবারের ঘটনা কানাইঘাট থেকে সূত্রপাত। আগের বিরোধকে সামনে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেয়া এক পোস্টকে কেন্দ্র করে পাল্টাপাল্টি চলছিল। বিষয়টি নিয়ে গত ২৯শে জানুয়ারি দারুল উলুম কানাইঘাট মাদ্রাসায় কথা বলেছিলেন আল্লামা আব্দুল্লাহ হরিপুরী (র.)’র সুযোগ্য সন্তান ও মাদ্রাসার বর্তমান মুহতামিম মাওলানা হেলাল আহমদ। এই বক্তব্যের পর গাছবাড়ি বড়দেশ উত্তর এলাকার বাসিন্দা জামাল হোসাইন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আল্লামা আব্দুল্লাহ হরিপুরী (রহ.) ও তার ছেলে মাওলানা হেলাল আহমদকে নিয়ে কটাক্ষ করে মন্তব্য করেন। পরবর্তীতে দারুল উলুম কানাইঘাট মাদ্রাসার মুহতামিম লক্ষ্মীপুরী হুজুর সহ আলেম-উলামাদের নিয়ে মন্তব্য করা হয়। এর পাল্টাও দেন কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক ও ছাত্ররা। বিষয়টি নিয়ে আলেম-উলামারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রথমে দারুল উলুম কানাইঘাট মাদ্রাসায় বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে উলামাদের নিয়ে মন্তব্যকারীদের প্রকাশ্যে এসে ক্ষমা চাওয়ার আল্টিমেটাম দেয়া হয়। আলেম-উলামারা দাবি করেন- মন্তব্যকারী ব্যক্তিরা জামায়াতে ইসলামী ঘরানার ব্যক্তিবর্গ। তারা একের পর এক কটাক্ষ করে পরিস্থিতিকে উসকে দিয়েছেন। তবে জামায়াতে ইসলামী সিলেটের নেতারা কটাক্ষকারীদের তাদের কেউ মানতে নারাজ। বিষয়টির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর কোনো সম্পর্ক নেই বলে তারা জানিয়ে দিয়েছেন। সোমবার এ নিয়ে হরিপুর মাদ্রাসায় দারুল উলুম কানাইঘাট, হরিপুর মাদ্রাসা সহ কয়েকটি মাদ্রাসার আলেম-উলামারা বৈঠকে বসেন। তাদের সঙ্গে যোগ দেন হরিপুর সহ জৈন্তা এলাকার মুরব্বিয়ানরা। বৈঠকে উপস্থিত হয়েছিলেন আরিফুল হক চৌধুরী।
বৈঠকের আগে পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে সিলেটের প্রশাসনের কর্মকর্তারা আলেম-উলামাদের নিবৃত করার চেষ্টা চালিয়েও পারেননি। এদিকে, সোমবার যে বৈঠক হয়েছিল সেখানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মন্তব্যকারীদের প্রকাশ্য ক্ষমা প্রার্থনা, তওবা করার দাবি জানিয়ে আজ বৃহস্পতিবার থেকে বৃহত্তর ‘জৈন্তা ঘেরা’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। উপস্থিত থাকা সিলেটের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ওই বৈঠক থেকে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য সময় নিয়ে এসেছিলেন। সিলেটে এসে তিনি প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেন। প্রশাসনের কর্মকর্তারাও ঘটনাটি সামাজিকভাবে নিষ্পত্তি করার পক্ষে মত দেন। একইসঙ্গে সিলেটের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান। প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছে, বিষয়টি এলাকাভিত্তিক দ্বন্দ্ব। কোনো পক্ষই আইনের আশ্রয় নেননি। ফলে সামাজিকভাবে নিষ্পত্তির দিকেই তারা জোর দেন। আরিফুল হক চৌধুরী বিবদমান বিরোধ নিষ্পত্তিতে মঙ্গলবার রাতে তার কুমারপাড়াস্থ বাসভবনে সিলেটের রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও আলেম-উলামাদের নিয়ে বৈঠক করেন। বৈঠকে দারুল উলুম কানাইঘাট, হরিপুর মাদ্রাসার মুহতামিম ও নায়েবে মুহতামিমরা উপস্থিত ছিলেন। এতে সিলেট জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ কয়েকজন নেতাও উপস্থিত ছিলেন বলে বৈঠকে থাকা রাজনৈতিক দলের নেতারা জানিয়েছেন। কয়েক ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠকে সামগ্রিক বিষয় নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়। এতেও প্রাধান্য দেয়া হয় ক্ষোভের বিষয়টি। এ বৈঠকের মতামত অনুযায়ী গতকাল রাতে হরিপুর মাদ্রাসায় আলেম-উলামা সহ স্থানীয় মুরব্বিদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। এতে হরিপুর মাদ্রাসার আলেম-উলামা ছাড়াও দারুল উলুম কানাইঘাট সহ কয়েকটি মাদ্রাসার উলামারা এসে শরিক হন। সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, বিষয়টি নিয়ে আলেম-উলামা ও স্থানীয় মুরব্বিদের সঙ্গে বৈঠক চলছে। মধ্যস্থতায় থাকা সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী আলেম-উলামা ও মুরব্বিদের আজকের কর্মসূচি থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। কর্মসূচি স্থগিত করে বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ খোলা রাখার জন্য তিনি অনুরোধ করেন। তার এই প্রস্তাবে আলেম-উলামারা সম্মতি দিয়েছেন। তবে কর্মসূচি প্রত্যাহারের ব্যাপারে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোনো ঘোষণা আসেনি। সিলেটের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী মানবজমিনকে জানায়, ‘সিলেটের প্রশাসনের কর্মকর্তারা বিষয়টি আমার ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। আলেম-উলামাদের সঙ্গে এ নিয়ে কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে আমরা হরিপুর মাদ্রাসায় বৈঠকে বসেছি। তবে যে বা যারা আলেম-উলামাদের নিয়ে কটাক্ষ করেছেন তারাও বিষয়টি নিয়ে নমনীয় হয়েছেন। আশা করি, খুব দ্রুত বিবদমান এ ঘটনার সমাপ্তি হবে এবং এলাকায় শান্তিপূর্ণ অবস্থান ফিরে আসবে।’ বৈঠকে উপস্থিত থাকা রাজনৈতিক দলের নেতারা জানান, উলামাদের কথা মতো কটাক্ষকারীদের নিয়ে জৈন্তাপুর ও কানাইঘাটের কোথাও মীমাংসা বৈঠক হলে নিরাপত্তার প্রশ্ন সামনে চলে এসেছে। এ কারণে নিরপেক্ষ কোনো স্থানে বসে বিষয়টির সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। এতে উভয়পক্ষ রাজি হলে দ্রুতই ঘটনাটির নিষ্পত্তি হয়ে যাবে বলে মনে করেন তারা।