শেষের পাতা
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট
রেডিওথেরাপি সেবার অনিশ্চয়তা এখনো
মোহাম্মদ রায়হান
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বৃহস্পতিবার
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউটে বন্ধ হওয়া রেডিওথেরাপি সেবা এখনো চালু হয়নি। কবে চালু হবে এ নিয়ে এখনো রয়েছে অনিশ্চয়তা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানে না কবে নাগাদ চালু হতে পারে ক্যান্সার চিকিৎসার এ গুরুত্বপূর্ণ সেবাটি।
রোববার জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে সরজমিন দেখা যায়, রেডিওথেরাপি কক্ষটি খালি পড়ে আছে। কিছুক্ষণ সেখানে অবস্থান করলে একজন রোগী পাওয়া গেল। নাম বখতিয়ার হোসেন। ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া থেকে স্ত্রীকে নিয়ে এসেছেন। তবে পাননি ডাক্তার বা কাঙ্ক্ষিত সেবা। তিনি বলেন, দেড় বছর আগে এখানে অপারেশন করিয়েছিলাম। কিন্তু পরে ক্যান্সারের জায়গায় ব্যথা শুরু হয়। তাই কয়েক মাস আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়ার জন্য আসি। রেডিওথেরাপি দেয়ার কথা ছিল আরও মাস কয়েক আগে। আজকে ময়মনসিংহ থেকে এসেছি। তারা জানালো, এখন রেডিওথেরাপির ডাক্তার নেই। ডাক্তার নাকি দুইদিন বসে সপ্তাহে। কথা বলে জানা গেছে, বখতিয়ার হোসেন জানেনই না এখানে রেডিওথেরাপি দেয়ার কার্যক্রম বন্ধ আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রেডিওথেরাপির ডেট পাওয়া রোগীরা সময়মতো চলে এলে তাদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে। বলে দেয়া হচ্ছে পরবর্তীতে তাদের ডেট জানিয়ে দেয়া হবে। এলে যেন যোগাযোগ করে আসে। নতুন করে থেরাপি নেয়ার জন্য কোনো কার্ড দেয়া হচ্ছে না। তবে চিকিৎসকদের পরামর্শ নেয়া যাচ্ছে আগের প্রক্রিয়ায়। থেরাপি কক্ষের সামনে লেখা আছে, ‘যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে liniac-3 & liniac-4 মেশিনে রেডিওথেরাপি চিকিৎসা সেবা প্রদান সম্ভব হচ্ছে না। মেশিন মেরামত হয়ে গেলে আমরা কার্ডে দেয়া নম্বরে ফোন করে জানিয়ে দেবো।’
এর আগে গত বছরের ডিসেম্বরে ক্যান্সার হাসপাতাল জানিয়েছিল, জানুয়ারির দিকে হাসপাতালে নতুন দুটো লিনিয়াক এক্সিলেটর মেশিন চালু হবে। কিন্তু এখনো মেশিনগুলোর কার্যক্রম শুরু হয়নি। মেশিন উদ্বোধনের কাজ শেষ হলেও যান্ত্রিক সমস্যার কারণে এখনো সেবা দেয়া যাচ্ছে না এসব মেশিন দিয়ে। কবে নাগাদ চালু হতে পারে এ মেশিন, সে তথ্য হাসপাতালের পরিচালক দিতে পারেননি। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র মারফত জানা গেছে, উদ্বোধন হওয়া লিনিয়াক মেশিন দু’টি রমজানে চালু হতে পারে।
অন্য একটি সূত্র মানবজমিনকে জানায়, হাসপাতালটিতে ক্যান্সার চিকিৎসার থাকা ছয়টি লিনিয়ার এক্সিলেটরের মেয়াদ আজ থেকে ৭-৮ বছর আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। তবুও জোড়াতালি দিয়ে চলছিল মেশিনগুলো।
ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর কবির বলেন, পুরাতন মেশিনগুলো কবে ঠিক হতে পারে এখনো ডেট পাওয়া যায়নি। তবে আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত সমাধান করতে। নতুন দুইটা মেশিন বসানোর কথা ছিল। ওগুলো বসানো হয়েছে, উদ্বোধনও হয়েছে। কিন্তু বসানোর পর যান্ত্রিক সমস্যা হয়েছে, তাই এটা ঠিক করানোর জন্য দেয়া হয়েছে। কবে ঠিক হতে পারে আমার জানা নেই।
চিকিৎসকরা বলছেন, ক্যান্সারের চিকিৎসার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পর্যায় হলো রেডিয়েশন থেরাপি। বাকি দু’টি পর্যায় হলো সার্জারি এবং কেমোথেরাপি। দুই মাস আগেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, হাসপাতালে রেডিওথেরাপির সব মিলিয়ে পাঁচটি মেশিন ছিল, দুইটি মেশিন দিয়ে রেডিয়েশন থেরাপির কাজ করা হয়ে থাকে। দুইটি মেশিনের একটি মাঝে মাঝে নষ্ট হয়ে যায়। আবার চালু হয়। এভাবেই চলছিল রেডিয়েশন থেরাপির কাজ। এর অল্প কয়দিন পরেই খোঁজ পাওয়া যায় ঝিমিয়ে চলা মেশিন দু’টিও চূড়ান্তভাবে অকেজো হয়ে গেছে। প্রায় দেড় মাস ধরে বন্ধ আছে ক্যান্সার চিকিৎসার এই অত্যাবশ্যকীয় প্রক্রিয়াটি।