শেষের পাতা
সিলেটে নেতাদের প্রতি মুক্তাদিরের কঠোর মেসেজ
ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, সোমবার
সিলেট বিএনপি’র অভিভাবক এখন দু’জন। একজন হলেন বিএনপি’র চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির ও অন্যজন হলেন সাবেক মেয়র ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী। দলের সাংগঠনিক বিষয়টি কয়েক বছর আগে থেকেই দেখভাল করছেন খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। তার হাত দিয়ে সাজানো সিলেট বিএনপি’র নেতারা এখন মূল দায়িত্ব থেকে দলকে পরিচালিত করছেন। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে সিলেট বিএনপি’র নেতাদের কঠোর ‘মেসেজ’ দিয়েছেন খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। গতকাল সিলেটে বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বকে নিয়ে বৈঠক করে এ নির্দেশনা দেন। এ সময় খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির সাফ জানিয়ে দিয়েছেন; ব্যক্তির কোনো বিতর্কিত দায় দল নেবে না। দলের ভেতরে কেউ বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি করলে সঙ্গে সঙ্গে নেয়া হবে ব্যবস্থা। তার এই নির্দেশনা তৃণমূল পর্যন্ত পৌঁছে দিতে সিলেট বিএনপি’র নেতাদের নির্দেশ দেন। বৈঠকে আলাপ-আলোচনা শেষে যে ক’টি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে; বিএনপি কিংবা সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা নগরের পাড়ায় পাড়ায় আড্ডা দেয়া বন্ধ করতে হবে। মানুষের দৃষ্টিকটু হয় এ ধরনের সব ঘটনা এড়িয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়।
বর্তমানে যে যে সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিশৃঙ্খলা বা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত তাদের নাম ওই সংগঠনের সভাপতি ও সম্পাদকরা জানাবেন। যদি তারা জানাতে ব্যর্থ হন তাহলে পরবর্তীতে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দলের ভেতরে অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। অনুপ্রবেশকারীদের দলের অন্তর্ভুক্তকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ছাড়া দলের ভেতরে যারা অপরাধ করবে তাদের ধরতে প্রশাসনকে গ্রিন সিগন্যাল দেয়া হবে বলে জানানো হয়। নগর বিএনপি নেতাদের মহানগর এলাকা ও জেলা বিএনপি নেতাদের জেলা এলাকার পরিস্থিতি সবসময় পর্যবেক্ষণে রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়। বৈঠকে উপস্থিত থাকা সিলেট বিএনপি নেতারা মানবজমিনকে জানিয়েছেন- অতীতে নানা বিতর্কিত ঘটনায় বিএনপি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এর লাগাম টেনে ধরা হলেও ঘটে যাওয়া কর্মকাণ্ড মানুষ ভালো চোখে নেয়নি। এ কারণে এবার খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরের তরফ থেকে কঠোর নির্দেশনা এসেছে। আর এসব নির্দেশনা সম্পূর্ণ মনিটরিং করার জন্য জেলা ও নগর বিএনপি’র সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ সময় খন্দকার মুক্তাদির বলেন- বিএনপি’র বিরুদ্ধে বিভিন্ন মহল প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। দেশের ভেতরে ও বাইরে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। ষড়যন্ত্র করে বিএনপিকে দমিয়ে রাখা যাবে না। কারণ বিএনপি জনগণের দল। আমাদের জনগণের আস্থা অর্জনে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন- ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। রোববার নগরীর চৌকিদিঘীতে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলসহ অঙ্গসহযোগী সংগঠনের যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জেলা বিএনপি’র সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরীর বলেন- জনগণের আস্থা ধরে রাখার জন্য নিজেদের কাজ করতে হবে। আমাদের শুধুই জনগণের কথা চিন্তা করে কাজ করতে হবে। শুধু তাই নয়, এই ৩১ দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা সকল জুলুম নির্যাতনের প্রতিশোধ নেবো। মহানগর বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী বলেন, জনগণের আস্থা নষ্ট হয় এমন কোনো কাজ করা যাবে না। মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা অর্জনে দলের নেতাকর্মীদের এক থাকতে হবে। বিগত ১৭ বছর অবৈধভাবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার কারণে প্রশাসনে ফ্যাসিবাদের দোসরদের শিকড় অনেক গভীর পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। প্রত্যেকটা সরকারি প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালতের নিচের স্তর থেকে একেবারে উপরের স্তর পর্যন্ত ফ্যাসিবাদের দোসর। তারা সুযোগ খুঁজছে ছোবল মারার। সেইদিকে আমাদের নজর রাখতে হবে। জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী ও মহানগর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী যৌথভাবে সভা পরিচালনা করেন। জেলার সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী বলেন- ফ্যাসিস্টের একেকজন মন্ত্রী, এমপি ও আওয়ামী লীগ নেতার ব্যাংকে লেনদেন পাওয়া যাচ্ছে হাজার কোটি টাকার।
তারা গোটা দেশকে, গোটা জাতিকে আওয়ামী লুণ্ঠনের স্বর্গরাজ্য বানিয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সজাগ থাকতে হবে। নগর সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ চৌধুরী জানান- দলের ভেতরে শৃঙ্খলা রক্ষায় যে নির্দেশনা এসেছে সেটি পালন হচ্ছে কিনা সিনিয়র নেতারা পর্যবেক্ষণ করবেন। দেশের স্বার্থে এখন বিএনপি’র নেতাকর্মীদের বিতর্কের ঊর্ধ্বে থেকে কাজ করতে হবে। মানুষের মন জয় করে দেশের উন্নতি সাধনের জন্য বিএনপি যাতে আরও অগ্রণী ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারে সেদিকেই আমাদের দৃষ্টি রয়েছে। যৌথ সভায় সিলেট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এডভোকেট আশিক উদ্দিন, মহানগর বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম, জেলা বিএনপি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান পাপলু, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আব্দুল আহাদ খান জামাল, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মাহবুবুল হক চৌধুরী, মহানগর যুবদলের সভাপতি শাহ নেওয়াজ বখত চৌধুরী তারেক, জেলা যুবদলের সভাপতি এডভোকেট মোমিনুল ইসলাম মোমিন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব শাকিল মুর্শেদ, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আফসর খান, মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মির্জা সম্রাট হোসেন, মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি সুদীপ জ্যোতি এষ, জেলা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জুবের আহমদ, মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বী আহসান, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক দিলোয়ার হোসেন দিনার উপস্থিত ছিলেন।
পাঠকের মতামত
Khandakar Muktadir Advisor To BNP Chairperson❤️