ঢাকা, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

স্বাধীনতা পুরস্কার গ্রহণ করলেন ছয় প্রয়াতের পরিবার

স্টাফ রিপোর্টার
২৬ মার্চ ২০২৫, বুধবার
mzamin

জাতীয় পর্যায়ে নিজ নিজ ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সাত বিশিষ্ট ব্যক্তিকে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৫’ এ ভূষিত করেছে সরকার। এর মধ্যে ছয়জন মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন এবং জীবিতদের মধ্যে রয়েছেন লেখক ও বুদ্ধিজীবী বদরুদ্দীন উমর। গতকাল রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্তদের পরিবারের হাতে পদক তুলে দেন প্রধান উপদেষ্টা। এবার স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে প্রফেসর জামাল নজরুল ইসলাম (মরণোত্তর), সাহিত্যে মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ (মরণোত্তর), সংস্কৃতিতে নভেরা আহমেদ (মরণোত্তর), সমাজসেবায় স্যার ফজলে হাসান আবেদ (মরণোত্তর), মুক্তিযুদ্ধ ও সংস্কৃতিতে মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান ওরফে আজম খান (মরণোত্তর), শিক্ষা ও গবেষণায় বদরুদ্দীন মোহাম্মদ উমর এবং প্রতিবাদী তারুণ্যে আবরার ফাহাদ (মরণোত্তর)। 

মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ মো. আব্দুর রশীদ পুরস্কার বিতরণী পর্বটি সঞ্চালনা করেন। তিনি পুরস্কার বিজয়ীদের সাইটেশন পাঠ করেন। অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাগণ, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত ও বিশেষ সহকারীবৃন্দ এবং সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দীর্ঘদিন এদেশের মানুষকে তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে। দুর্নীতি, লুটপাটতন্ত্র ও গুম-খুনের রাজত্ব চালিয়ে দেশে একটি ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা কায়েম করা হয়েছে। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের উদ্দেশ্য ছিল একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে আইনের শাসন থাকবে, মানুষের মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত হবে এবং একটি বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু ন্যায়ভিত্তিক সমাজ এখনো প্রতিষ্ঠা করা যায়নি। স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে ড. ইউনূস বলেন, আজ (গতকাল) ২৫শে মার্চ। মানব সভ্যতার ইতিহাসে কলঙ্কিত এক হত্যাযজ্ঞের দিন। ১৯৭১ সালের আজকের রাতে পাক হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র, ঘুমন্ত বাঙালির ওপর নির্মমভাবে গুলি চালিয়ে হাজারো মানুষকে হত্যা করে। ২৫শে মার্চ থেকেই এ দেশের মানুষ সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। 

৯ মাসের যুদ্ধের মধ্যদিয়ে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। তিনি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে বলেন, তাদের আত্মত্যাগের কারণে আমরা একটি ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার স্বপ্ন দেখার সুযোগ পেয়েছি। এ সুযোগ আমরা কোনোক্রমেই বৃথা যেতে দেবো না। জীবিত থাকা অবস্থায় স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদানের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যারা আজ এ সম্মাননা পেলেন তারা জীবদ্দশায় এ প্রাপ্তি দেখে যেতে পারেননি। এটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। আজকের দিনে তাদের অবদানকে আমরা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছি। জীবিত থাকতে পুরস্কার পেলে সেটা নিজের এবং পরিবারের জন্য আরও আনন্দের হতো উল্লেখ করে তিনি বলেন, যাকে আমরা সম্মান দেখাচ্ছি তিনি আমাদের মধ্যে নেই। আমরা যেন আগামীতে এমন একটা নিয়ম করতে পারি যাদের মরণোত্তর দেয়ার, তাদের পালা শেষ করে যারা জীবিত আছেন, প্রতিবছর তাদের অর্ধেককে যেন  পুরস্কার দেয়া যায়। স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্তরা দেশ ও জাতিকে অনেক কিছু দিয়ে গেছেন উল্লেখ করে ড. ইউনূস আরও বলেন, যাদেরকে পুরস্কার দেয়া হচ্ছে আমরা কেবল তাদেরকে সম্মানিত করছি না, জাতি হিসেবে আমরাও সম্মানিত হচ্ছি। তারা এই জাতির জন্য অনেক কিছু দিয়ে গেছেন। তাদের কথা তাদের জীবদ্দশায় স্মরণ করতে না পারলে আমরা অকৃতজ্ঞ জাতি হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবো। যাদেরকে আমরা এই সম্মান দিতে চাই-সেটা যথাসময়ে যেন আমরা দিতে পারি। 

স্বাধীনতা পুরস্কার পাওয়া বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যে জেন-জি প্রজন্ম, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের অনুপ্রেরণার নাম বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ। সে ন্যায়বিচারের জন্য, বাকস্বাধীনতার জন্য জোরালো প্রতিবাদ করে সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হয়েছিল। তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা জানাতে পেরে আমরা গর্বিত। এবার স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত একমাত্র জীবিত ব্যক্তি লেখক ও বুদ্ধিজীবী বদরুদ্দীন উমরের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বদরুদ্দীন উমরকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা জানাতে পেরে আমরা আনন্দিত। তার সম্মাননা স্মারক আমাদের পরের প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত থাকবে। ‘স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৫’-এ ভূষিত ব্যক্তিদেরকে বাংলার সূর্যসন্তান বলে অভিহিত করেন তিনি। মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কারের পদক গ্রহণের পর আবরার ফাহাদের মা মোসা. রোকেয়া খাতুনসহ অন্যরা তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন।
 

পাঠকের মতামত

এটা একটা বাংলাদেসের tradition মরে যাওয়ার পর পুরুস্কার। " জীবনে যারে দাওনি মালা, মরনে কেন দিতে এলে ফুল"।

Muhammad Hussain
২৭ মার্চ ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১০:৪৫ পূর্বাহ্ন

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status