ঢাকা, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

জু লা ই অ ভ্যু ত্থা ন

হাসপাতালেই ঈদ কাটবে তাদের

আরিফুল ইসলাম ও আফজাল হোসেন
২৬ মার্চ ২০২৫, বুধবার
mzamin

প্রায় আট মাস আগে জুলাই অভ্যুত্থানে আহত হয়েছিলেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে ঝাঁঝরা হয়েছিল শরীর। গুলিতে কারও হাতকাটা পড়েছে। কারও পা। কারও চোখের আলো নিভেছে আজীবনের জন্য। আন্দোলনে প্রায় দেড় হাজার মানুষ জীবন দিয়েছেন। আহত হন ২২ হাজারেরও বেশি মানুষ। আহতদের একটি অংশ এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ঈদ কড়া নাড়লেও তারা বাড়ি ফিরতে পারছেন না। রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্র (পঙ্গু হাসপাতাল), চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটসহ আরও কয়েকটি হাসপাতালে ভর্তি আছেন এসব আহতরা। নির্যাতনের ক্ষত নিয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন তারা। 

তারা শুধু নিজেদের আহত শরীর নিয়ে নয়, বরং পরিবার পরিজনের সঙ্গে ঈদ না করতে পারার আফসোস নিয়েও দিন কাটাচ্ছেন। আগের বছরগুলোতে পরিবারের সঙ্গে ঈদের খুশি ভাগ করে নেয়া হলেও, এবার  শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা তাদের পিছু ছাড়ছে না। আগের  বছরগুলোতে পরিজনের সঙ্গে কাটানো ঈদের স্মৃতি মনে করে কেউ কেউ কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। কেউ কেউ ছুটি নিয়ে বাড়ি যাওয়ার পরিকল্পনা করলেও শারীরিক অবস্থার অবনতির আশঙ্কা থাকায় ছুটি দিতে চাইছে না হাসপাতাল। আহতরা বলছেন, প্রতি বছর পরিবার পরিজন, বন্ধুদের সঙ্গে ঈদ উদ্‌যাপন করতাম। এবার সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যেতে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করছি। 

সরজমিন রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল), জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তিকৃত জুলাই আন্দোলনে আহতদের সঙ্গে কথা বললে আহতরা জানিয়েছেন, তারা ছুটি নিয়ে বাড়ি যেতে চান, তবে শারীরিক অবস্থার কারণে শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হবে কিনা, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। কেউ কেউ এতটাই গুরুতর আহত যে, আপাতত হাসপাতালের শয্যা ছাড়া আর কোনো আশ্রয় নেই। তাদের ঈদ হাসপাতালেই করতে হবে। 
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বেশির ভাগেরই অপারেশনসহ চিকিৎসা কার্যক্রম চলমান। অনেকেরই ২/৩ বার করে অপারেশন হয়েছে। অনেকের বিশ্রাম দরকার। আবার কারও কারও থেরাপি দিতে হচ্ছে। এমন রোগীরা চাইলে নিজ দায়িত্বে ছুটি নিয়ে যেতে পারবে। নিয়মিত চেকআপের অংশ হিসেবে তাদের আসতে হবে মাঝেমধ্যে। 

মো. আলম শেখ। পেশায় রিকশাচালক। বাগেরহাট সদর উপজেলার বৈথপুর গ্রামের বাসিন্দা। ৮ মাস হলো পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তিনি বলেন, বাগেরহাটের কোর্টের সামনে ছাত্রদের ওপর পুলিশ গুলি চালালে আহত হই। ছাত্রদের বাঁচাতে গেলে আমাকেও পিটিয়ে আহত করে তারা। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও এসে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে আহত করে। আমার পায়ের লিগামেন্ট ছিড়ে যায়। ঈদে বাড়ি যেতে পারবো কিনা জানি না। তবে এখন আগের থেকে অনেকটা ভালো আছি। ডাক্তার যেতে দিলে যাবো। না দিলে থেকে যাবে। এখনো সিদ্ধান্ত নেইনি। তবে মনে হচ্ছে যেতে পারবো না এ অবস্থায়। ঈদের আনন্দ এবার আর আমার কপালে নেই মনে হচ্ছে।
একই হাসপাতালে আহত  কুষ্টিয়ার জয় ইসলাম  বলেন, আমার ডান হাতের ভেতরের জয়েন্ট পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। ডাক্তার বলছেন দেশের বাইরে চিকিৎসা করাতে হবে। এবার ঈদে বাড়ি যাওয়ার ইচ্ছে ছিল। এজন্য কিছু টাকা  রেখেছিলাম। গতকাল রাতে সব টাকা হারিয়ে গেছে। কে যেন চুরি করে নিয়ে গেছে আমার টাকাগুলো। এখন মনে হয় আর যেতে পারবো না।
পটুয়াখালির আরিফুল ইসলাম বলেন, আতর টুপির ব্যবসা করতাম। ঈদ এলে বেচাবিক্রি বাড়তো। এবার আমি নিজেই হাসপাতালের বেডে, ঈদ নিয়ে কোনো আশা নেই মনে। বউ ছেলে মেয়েরা এখানেই আছে। ঈদ হাসপাতালেই করতে হবে।

যাত্রাবাড়ীর মো. আব্দুল্লাহ বলেন, বাড়িতে আর যাওয়া হবে না। ঈদের আনন্দ পরিবারের সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে হতে পারবো না। এটাই সবচেয়ে কষ্টের। 
জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে আহত ইমরান। পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি এখনো। সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে পুলিশের গুলিতে পায়ের হাড় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। হাসপাতালে কাতরাচ্ছিলেন। কথা বলতে গেলে কান্নার্ত কণ্ঠে  ইমরান বলেন,  শরীরের যা পরিস্থিতি, কবে ভালো হবো তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। আমি কাজ করে মাসে ১৫ হাজার টাকা আয় করতাম। ঘরে বৃদ্ধ বাবা-মা রয়েছে। প্রতি বছর তাদেরকে নতুন জামা-কাপড় কিনে দিতাম। আমার টাকা দিয়েই সংসার চলতো অথচ সে জায়গায় এখন হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে আছি। ঈদে কতো আনন্দ করতাম বন্ধুদের সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যেতাম। আগের মতো আর কখনো স্বাভাবিক ভাবে হাঁটতে পারবো না। 

কুষ্টিয়ার মেজবাহুর রহমান বলেন, আমাদের আন্দোলন ন্যায়ের জন্য ছিল। কিন্তু এখন আমরা শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। ঈদে পরিবারের সঙ্গে থাকতে পারবো না, এটাই সবচেয়ে কষ্টের। 
গত ১৮ই জুলাই মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদের সামনে পুলিশের গুলিতে আহত হয়েছিলেন রোমান। তখন থেকেই হাসপাতালে ভর্তি। তিনি বলেন, আট মাস ধরে হাসপাতালে কাতরাচ্ছি। হাড় জোড়া লাগছে না, সেইসঙ্গে নার্ভগুলো ঠিকমতো কাজ করছে না। পা নিয়ে খুব শঙ্কিত আছি। যেই জায়গায় বাবা-মায়ের সেবাযত্ন আমি করতাম সে জায়গায় তারা আমার সেবাযত্ন করছে। ঈদে কতো রকমের মজা করতাম। জীবনের সুখের মুহূর্তগুলো শেষ হয়ে গেল।    

৫ই আগস্ট সাভারের আশুলিয়া থানার সামনে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন মামুন। সেদিন ই তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তিনি বলেন, পায়ের আঙুল গুলো কাজ করছে না। কয়েকবার অস্ত্রপাচার করা হয়েছে পায়ে, পা নাড়াতেই পারি না। সারাক্ষণ শুয়ে থাকা লাগে। বেডের পাশ দিয়ে যারা হেঁটে যায় তাদের দেখলেই মন খারাপ হয়ে যায়, আমি কবে হাঁটতে পারবো তা ভেবে। ঈদের কথা শোনা মাত্রই চোখের পানি ছেড়ে তিনি বলেন, যে হাঁটতেই পারে না তার আবার ঈদ। জীবনের সবচাইতে খারাপ ঈদ এবার কাটবে। প্রতি ঈদে বাবা মায়ের সঙ্গে ২৫ রমজানের পরেই গ্রামের বাড়িতে যেতাম চাচাতো ভাইদের সাথে কতো স্মৃতিময় সময় কাটিয়েছি। এখন সেগুলো স্বপ্নের মতো লাগে। আরো বেশি খারাপ লাগে বাবা-মা আমার জন্যে এবারের ঈদে বাড়ি যেতে পারবে না। হাসপাতালে থাকতে হবে তাদের। কী জীবন! মুহূর্তেই কী হয়ে গেল!    

গত ১৮ই জুলাই মোহাম্মদপুর আল্লাহ করীম মসজিদের সামনে পুলিশের গুলি এসে চোখে লাগে মাদ্রাসা শিক্ষার্থী শামিম হোসেনের। তখন থেকেই তিনি জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি আছেন । শামিম বলেন, আমার বাম চোখ অকেজো হয়ে গিয়েছে এ চোখে কিছু দেখতে পাই না। আরেকটি অপারেশন করা লাগবে ।

 

 

পাঠকের মতামত

হাসিনাকে হাজার হাজার কোটি বার ফাঁসি দিতে হবে।

সোহাগ
২৬ মার্চ ২০২৫, বুধবার, ৪:২০ অপরাহ্ন

জুলাইয়ের ইতিহাস অত্যান্ত মর্মান্তিক।

Md Humaun Azad
২৬ মার্চ ২০২৫, বুধবার, ৯:৫৮ পূর্বাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status