শেষের পাতা
সিলেটে দৃশ্যপটে নেই তারা
ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
৭ এপ্রিল ২০২৫, সোমবার
সিলেটে দৃশ্যপটে নেই তারা চারজন। নেতাকর্মীরা জানেন না তারা কোথায়? যোগাযোগও নেই তাদের সঙ্গে। ফলে তাদের নিয়ে সিলেটের রাজনীতিতে গুঞ্জন চলছে। নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, দলের এই ক্রান্তিলগ্নে তাদেরকেই সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখার কথা ছিল। দুর্যোগে দলকে চাঙা করার দায়িত্ব তাদের নেয়ার কথা ছিল। গত ৮ মাসে তাদের অবস্থানও জানা যায়নি। তবে ১২ই ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকাশ্য ছিলেন মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। অপহরণের ঘটনার পর থেকে একেবারেই আত্মগোপনে চলে গেছেন। পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও কেউ তার অবস্থান জানেন না। মিসবাহ সিরাজ হচ্ছেন আওয়ামী লীগের সাবেক তিন বারের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক। সিলেটের আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রবীণ নেতা। আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ দিকে এসে তিনি দলীয় পদ হারান। একইসঙ্গে পাবলিক প্রসিকিউটরের পদও চলে যায় তার। এরপর থেকে দলের ভেতরেই তিনি নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছিলেন।
পটপরিবর্তনের পর চলে যান আড়ালে। স্বজনরা জানিয়েছেন- শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর নিজ এলাকায় বসবাস করতেন তিনি। ছদ্দবেশে চলাফেরা করতেন। এই অবস্থায় ১২ই ডিসেম্বর রাতে সুবিদবাজারকেন্দ্রিক একটি অপরাধী গ্রুপ তাকে অপহরণ করে। দাবি করে কোটি টাকা মুক্তিপণ। রাতের মধ্যে পরিবারের পক্ষ থেকে অপহরণকারীদের হাতে ২৫ লাখ টাকা তুলে দিলেও অক্ষত অবস্থায় পাওয়া যায়নি মিসবাহ সিরাজকে। সাগরদিঘীরপাড়ের ড্রিমসিটিতে ধরে নিয়ে তার হাত ও পায়ে কুপানো হয়। এরপর রক্তাক্ত অবস্থায় ছেড়ে দেয়া হয়। ঘটনার পরদিন ভোরে নগরের আর হারমাইন হাসপাতালে কয়েক ঘণ্টা চিকিৎসা নিয়ে হাওয়া হয়ে যান তিনি। এরপর থেকে মিসবাহ সিরাজ কোথায় আছেন কেউ জানেন না। মাসুক উদ্দিন আহমদ সিলেট নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি। প্রবীণ রাজনীতিকদের মধ্যে একজন। আওয়ামী লীগের জামানায় অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয় তাকে। সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন দেয়া হলেও প্রশাসনিক ভাবেই তাকে পরাজিত করা হয়। জেলার রাজনীতি করতেন। নিয়ে আসা হলো মহানগরের শীর্ষ পদে। সেখানেও নিজেকে খাপ-খাওয়াতে পারেননি। বিচ্ছিন্নই ছিলেন। অভ্যুত্থানের পর থেকেও তিনি পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন। দলীয় নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন- হাওয়া হয়ে যাওয়া মাসুক উদ্দিনের সঙ্গে দলীয় নেতাকর্মীদের কোনো যোগাযোগ নেই। তার বাড়ি নগরে মীরবক্সটুলা এলাকায়। মূল বাড়ি জকিগঞ্জে।
দলের এই এই দুর্দিনে তার কোনো এক্টিভিটিজ না থাকায় হতাশ নেতাকর্মীরা। নগর আওয়ামী লীগও এ মুহূর্তে অভিভাবকহীন। পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে- গণ-অভ্যুত্থানের আগেই মাসুক উদ্দিন আহমদ বৃটেনে চলে গেছেন। এখন সেখানেই বসবাস করছেন। তার বড় ছেলে বৃটেন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ভুমিকা পালন করছেন। আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মসূচিতে তাকে সক্রিয় অবস্থায় দেখা গেছে। মাসুক উদ্দিনের ছোটো ভাই সিলেট নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ। সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান যে কমিটির সভাপতি ছিলেন সেই কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। কামরানের সঙ্গে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মনোনয়ন নিয়েও টক্কর দিয়েছিলেন। আলোচিত নেতা তিনি। সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে সরে যাওয়ার পর আসাদ উদ্দিন আহমদ নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হলেও রাজনীতিতে নীরব ছিলেন।
৫ই আগষ্টের পর থেকে আসাদ উদ্দিন আহমদের দেখা নেই। দলীয় নেতাকর্মীদের ধারণা; ৫ই আগস্ট পর্যন্ত সিলেটেই ছিলেন আসাদ উদ্দিন আহমদ। এরপর থেকে তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। গত ৮ মাসে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছেন। আলোচিত নেতা সিলেট নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন। তার সাধারণ সম্পাদক হওয়াটাও ছিল চমক। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের আস্থাভাজন লোক হিসেবে তিনি সিলেটে পরিচিত ছিলেন। এ কারণে ২০১৯ সালের কাউন্সিলে তাকে ওবায়দুল কাদেরের কৌটায় সিলেট নগরের সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। দলীয় নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন; গণঅভ্যুত্থানের আগে সিলেট আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তেমনটা তিনি সক্রিয় ছিলেন না। অভ্যুত্থানের পর থেকে তাকে আর দেখা যায়নি। ভার্চ্যুয়ালিও নীরব তিনি। সিলেট আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত চার নেতার মধ্যে জেলার দুই নেতা সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী লন্ডনে রয়েছেন। আর সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান রয়েছেন ভারতে। দলীয় কর্মকাণ্ডে তাদের সক্রিয় থাকার বিষয়টি দৃশ্যপটে এলে নগর সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির পুরোপুরি দৃশ্যপটের বাইরে। ফলে তাদের নিয়ে দলের ভেতরেই ক্ষোভ বাড়ছে।