ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

ভিসি অপসারণের একদফা ঘোষণা

তালা ভেঙে হলে প্রবেশ করেছে কুয়েটের শিক্ষার্থীরা

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা থেকে
১৬ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার
mzamin

তালা ভেঙে হলে প্রবেশ করেছে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা উপাচার্যের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত একদফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। গতকাল দুপুর ২টা থেকে ছাত্রদের ৬টি হলের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন তারা। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাতে কোনো বাধা দেয়নি।

এর আগে দুপুর পৌনে একটার দিকে তারা ক্যাম্পাসের দুর্বার বাংলা চত্বরে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এরপর তারা বিক্ষোভ মিছিল সহকারে প্রতিটি বিভাগের সামনে গিয়ে হ্যান্ডমাইকে হল খুলে দেয়ার জন্য শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানান। তবে প্রশাসনের কোনো সাড়া না পেয়ে বিক্ষোভ মিছিল সহকারে স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারে প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা একটি ঘোষণা দেন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একজন ঘোষণাটি পড়ে শোনান। ঘোষণায় বলা হয়, ‘যেহেতু ভিসি কুয়েট শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে, ভিসি ব্যর্থতার দায় নিতে অস্বীকার করেছে, নেট, পানি অফ করে হল থেকে বের করে দিয়েছে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা দিতে ইন্ধন জুগিয়েছে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করেছে তাই আমরা ছয়দফা থেকে একদফা ঘোষণা করছি। এই ভিসিকে অপসারণ আমাদের একমাত্র দাবি। একইসঙ্গে নতুন ভিসির অধীন নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটির মাধ্যমে তদন্তের দাবি জানাচ্ছি। 

ঘোষণাপত্রটি পাঠ করার পর শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন হলের তালা খুলে ভেতরে প্রবেশ করার ঘোষণা দেন। গত রোববার দুপুর ৩টার দিকে শিক্ষার্থীরা এক জোট হয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন। এ সময় ফটকে বিপুলসংখ্যক পুলিশ উপস্থিত থাকলেও তাদের কেউ বাধা দেয়নি। যদিও বিজ্ঞপ্তি জারি করে নিষেধাজ্ঞা, অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ও সন্তান না পাঠাতে অভিবাবককে খুদে বার্তা প্রেরণ করেছিল কুয়েট প্রশাসন। ক্যাম্পাসে প্রবেশের পর থেকে তারা হল খুলে দেয়ার দাবি জানিয়ে আসছিল। তবে প্রশাসনের সাড়া না পেয়ে খোলা আকাশে তারা অবস্থান করছিল। এ ছাড়া সোমবার বিকালে কুয়েটের ১০১তম (জরুরি) সিন্ডিকেট সভায় ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।


কুয়েটের জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা বিভাগের পাবলিক রিলেশনস অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) শাহেদুজ্জামান শেখ জানান, গত ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ঘটে যাওয়া দুঃখজনক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৯শে ফেব্রুয়ারি ৯৮ তম (জরুরি) সিন্ডিকেট সভায় গঠিত তদন্ত কমিটির গঠন করা হয়। তাদের দেয়া প্রতিবেদন সিলগালা অবস্থায় সিন্ডিকেটে উপস্থাপন করা হয় এবং তদন্ত প্রতিবেদনটি সিন্ডিকেট কর্তৃক গ্রহণ করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পাশাপাশি, তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির কাছে প্রেরণের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়া আগামী ৪ঠা মে থেকে শুরু এবং সকল আবাসিক হলসমূহ আগামী ২রা মে শিক্ষার্থীদের জন্য খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

একইসঙ্গে গত বৃহস্পতিবার কুয়েটের ২২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আমলি আদালতে মামলা করেছেন নগরের মহেশ্বরপাশা উত্তর বণিকপাড়া এলাকার হোচেন আলী নামের এক ব্যক্তি। আদালত বাদীর অভিযোগ আমলে নিয়ে খানজাহান আলী থানাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ১৮ই ফেব্রুয়ারি দুপুরে হোচেন আলী কুয়েট রোড দিয়ে বাড়ি যাচ্ছিলেন। পকেট গেটের সামনে গেলে আসামিরা তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে রড ও লাঠি দিয়ে মারধর করে এবং সোনার চেইন ছিনিয়ে নেন। তবে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কুয়েট প্রশাসন বাইরের একজনকে উস্কানি দিয়ে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করিয়েছে। শিক্ষার্থীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহায়তা ছাড়া ২২ জনের নাম ও পরিচয় এভাবে বাইরের কোনো ব্যক্তির পক্ষে জানা সম্ভব না।

গত ১৮ই ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। পরদিন প্রশাসনিক ভবনসহ সব একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। ওইদিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে কমিটিও করা হয়েছে। ওই দিন রাতেই খানজাহান আলী থানায় অজ্ঞাতনামা ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে মামলা করে প্রশাসন। গত ২০শে ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ করে সব রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনকে লাল কার্ড দেখান শিক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে তারা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করেন। ২৩শে ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীরা খুলনা থেকে ঢাকায় এসে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেন। এতে হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার, উপাচার্যের পদত্যাগসহ ৬ দফা দাবি জানানো হয়। ২৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের ৯৯তম (জরুরি) সভায় সব আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। পরদিন সকাল ১০টার মধ্যে সব শিক্ষার্থীকে হলত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়। এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন।

পাঠকের মতামত

এটা তো সেই সরকারি দলের ছাত্র সংগঠনের মত কাজ হলো। ভবিষ্যৎ অন্ধকার আমাদের।

আতাউর
১৬ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার, ১০:২৩ পূর্বাহ্ন

উনি কি ভিসি!!! নাকি নব্য ফ্যাসিস্ট!!!

MD REZAUL KARIM
১৬ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার, ৯:৩২ পূর্বাহ্ন

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status