শেষের পাতা
ফের সংঘর্ষে ঢাকা ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা
স্টাফ রিপোর্টার
১৬ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার
রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় ফের সংঘর্ষে জড়িয়েছে ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার সকাল ১০টার পর থেকেই দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা শুরু হয় যা বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় রূপ নেয়। সংঘর্ষের কারণে সড়কের দুই পাশে কিছু সময়ের জন্য যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সংঘর্ষে অন্তত পাঁচ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। আইডি কার্ড ছিঁড়ে ফেলাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় বলে জানা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা সায়েন্সল্যাব ফুটওভার ব্রিজের নিচে অবস্থান নেয় আর ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা জড়ো হন টিচার্স ট্রেনিং কলেজের সামনে। এ সময় দু’পক্ষই একে অপরের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও লাঠিসোটা নিয়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া করতে থাকে। আহতদের মধ্যে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ননী কুমার সাহাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি সাংবাদিকদের জানান, আমরা সায়েন্সল্যাবে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এ সময় সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা আমাদের কয়েকজনের ওপরে অতর্কিত হামলা চালায়। আমি মাথায় গুরুতর আঘাত পাই। পরে আমার দুই বন্ধু নাহিন ও সাইদুর আমাকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসে। আরও কয়েকজন আহত হয়েছে শুনেছি। তারা ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ধানমণ্ডি জোনের সহকারী কমিশনার শাহ মোস্তফা তারিকুজ্জামান বলেন, সকাল ১০টার পর থেকেই দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। একপর্যায়ে প্রায় আড়াইশ’ থেকে তিনশ’ শিক্ষার্থী মুখোমুখি হলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে আধঘণ্টার মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। দুই কলেজের শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ ক্যাম্পাসে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে এবং পরিস্থিতি বিবেচনায় এলাকায় অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন রয়েছে। তিনি বলেন, প্রায় তুচ্ছ বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। দুপুর ১টা ৫০ মিনিটের দিকে ঢাকা কলেজের সামনে থেকে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে ফের মিছিল নিয়ে সিটি কলেজের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
নিউমার্কেট থানার অফিসার ইনচার্জ মোহসিন উদ্দিন বলেন, তাদের মধ্যে আগে থেকেই রেষারেষি চলে আসছে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ফেসবুক গ্রুপে লেখালেখি নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল। এরই ধারাবাহিকতায় রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থীর আইডি কার্ড ছিঁড়ে ফেলে সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা এ নিয়ে তাদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আমরা শিক্ষার্থীদের তাদের নিজ নিজ ক্যাম্পাসে পাঠিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছি।
ডিএমপি’র নিউমার্কেট জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার তারেক লতিফ বলেন, শিক্ষার্থীরা সংঘর্ষে জড়িয়েছিলেন, কয়েকজন আহত হয়েছেন। সবশেষ মিছিল ঠেকিয়ে আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছি। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক, যান চলাচলও স্বাভাবিক রয়েছে।
এর আগে, গত বছর ১০ই সেপ্টেম্বর সায়েন্সল্যাব এলাকায় ঢাকা কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীরা সংঘর্ষে জড়ায়। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে চলা সংঘর্ষে সেদিন ১৮ জন আহত হন। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের ওইদিন আইডিয়াল কলেজের নামফলকও খুলে নিয়ে যেতে দেখা যায়। এর পাঁচদিন পর সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় ঢাকা কলেজের একটি বাস ভাঙচুর করেন আইডিয়ালের শিক্ষার্থীরা। ঢাকার সায়েন্স ল্যাব মোড়ের কাছে এক কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের ক্যাম্পাস। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রতিবছরই কয়েকবার করে সংঘর্ষে জড়ায় নানা কারণে। গত ২০শে নভেম্বর ঢাকা কলেজের ১৮৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন দুপুরে কলেজের দুটি বাস সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা ভাঙচুর করেন। এ ঘটনার জেরে দুই কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। সেদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত সেই মারামারি চলে, যাতে দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হওয়ার তথ্য দেয় ঢাকা কলেজ। এরপর ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজ, আইডিয়াল কলেজ, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ ও বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজের প্রতিনিধিসহ পুলিশের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। ধানমণ্ডি এলাকার এসব কলেজগুলোর ছোট ছোট সমস্যা যেন বড় রূপ না নেয়, তা নিশ্চিত করতে এই কমিটি কাজ করবে বলে জানানো হয়। কিন্তু এরমধ্যে আবারো সামান্য বিষয় নিয়ে সংঘর্ষে জড়াচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
পাঠকের মতামত
Relocate those colleges in much distance.
পড়া লিখার দরকার নাই। এই কলেজ গুলিকে মার্কেট বানিয়ে ফেললেই হয়।