শেষের পাতা
বেসামাল ‘নেত্রী’ সিলেটের আরজু
স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
১৬ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার
চাল-চলনে ছিল বেপরোয়া ভাব। ভয়ে নারী রাজনীতিকরা তাকে এড়িয়ে চলতেন। সম্মান হারানোর ভয়ে পাশে জায়গা দিতেন
না অনেকেই। কিন্তু সিলেটে পুরুষ রাজনীতিকদের কাছে তার কদর ছিল বেশি। আর কদরেই দিনে দিনে বেসামাল হয়ে ওঠে সিলেটের ‘নেত্রী’ আরজু। নামের পাশে আগে খান ব্যবহার করতো না। সাম্প্রতিক সময়ে খান শব্দটি জুড়ে দিয়েছে। সিলেটের ওই ‘নেত্রী’ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী। বিতর্কিত ওই নেত্রীকে আটক করেছে র্যাব। নগরের বালুচরের বাসা থেকে তাকে আটক করা হয় বলে র্যাব জানায়। পুরো নাম নাজমা আক্তার আরজু। পরে এই নাম পরিবর্তন করে হয় নাজমা খান আরজু। নগরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ছিলেন। কয়েক বছর আগে মহিলা যুবলীগ করতেন। তখন থেকে অন্ধকার জগতে তার পথচলা শুরু। গ্রেপ্তারের পর গতকাল দলের কয়েকজন মহিলা নেত্রীর সঙ্গে আলাপ হয় মানবজমিনের। তার সম্পর্কে জানা গেছে অনেক তথ্য।
তারা জানিয়েছেন- যুব মহিলা লীগে থাকার সময় সিলেটের কয়েকজন অন্ধকার জগতের নারীদের সঙ্গে তার খ্যাতি গড়ে ওঠে। ওই নারীদের সঙ্গে তার রাজপথে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় থাকতো। ফলে ওই সময় থেকে সে জড়িয়ে পড়ে অপরাধ কর্মে। নারীদের দিয়ে নগরে বাসা ভাড়া করে অসামাজিক কাজ, মাদক ব্যবসাসহ নানা কাজে জড়িয়ে পড়ে সে। এ কারণে পুরুষ রাজনীতিকদের কাছে সে ছিল পছন্দের। নিজেও নেতাদের মনোরঞ্জন দিতেন। রাতারাতি তার কদর বেড়ে যায়। এই অবস্থায় কয়েক বছর চলার পর নিজেকে মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী পরিচয় দিতে শুরু করে। মহিলা আওয়ামী লীগে নিজের পরিচয় দিলেও কোনো পদবিতে ছিল না। গ্রেপ্তারের পর সে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে নিজেকে নগরের ৭ নম্বর ওয়ার্ড মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে পরিচয় দেয়। কিন্তু ওই ওয়ার্ডের মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রীরা মানবজমিনকে জানিয়েছেন- আরজু কখনোই ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগে ছিল না। কিছুদিন তার বসবাসস্থল ছিল ওই ওয়ার্ডে। সে বনকলাপাড়া, ফাজিলচিস্তসহ কয়েকটি এলাকায় ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করেছে। ওই সময় আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আফতাব হোসেন খানের ঘনিষ্ঠ নেত্রী ছিলেন। নানা সময় তাদের শেল্টারে থাকায় রাজনীতিতে সে সুবিধাজনক অবস্থানে ছিল বলে জানান তারা।
আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে আরজু সিলেট সদর উপজেলা নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ার জন্য নির্বাচনী মাঠে ছিল। ওইসময় সে তার ঠিকানা ব্যবহার করে জালালাবাদ থানার জাহাঙ্গীরনগর এলাকায়। তবে মনোনয়ন দাখিলের আগে সে নির্বাচন থেকে সরে যায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- ৫ই আগস্টের আগে সিলেটের রাজপথে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের সময় সে নেতাকর্মীদের সঙ্গে রাজপথে ছিল। সংঘর্ষের সময়ও মাঠে অ্যাক্টিভ থাকে। গণ-অভ্যুত্থানের পর সে সুবিদবাজার এলাকা ছেড়ে চলে যায়। তার বিরুদ্ধে নগরের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা হয়। পলাতক অবস্থায় আশ্রয় নেন নগরের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের বালুচর এলাকায়। ওখানে ঘাপটি মেরে থেকে ছিল। তবে সরব ছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সমালোচনাসহ সাম্প্রতিক নানা বিষয় নিয়ে লাইভে এসে অশালীন আচরণ করেছে। একইসঙ্গে সরকারবিরোধী নানা অপপ্রচারে অ্যাক্টিভ ছিল। ফিলিস্তিনে ইসরাইলি হামলার প্রতিবাদে সিলেটে ব্যাপক ভাঙচুর ঘটনায়। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া কয়েকজনের মুখে এসেছে পলাতক থাকা নাজমা খান আরজুর নাম। এরপর তাকে ধরতে অভিযান শুরু করে র্যাব।
গত সোমবার রাতে তাকে বালুচর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। নগরের উপশহরে ছিল আরজুর সবচেয়ে বেশি আড্ডাস্থল। ওই এলাকার এক আওয়ামী লীগ নেত্রী যিনি মৎসজীবী দলের কমিটিতে ছিলেন তার সঙ্গে ছিল সখ্যতা। ওই নেত্রীর নাম নাহার। তার সঙ্গে সখ্যতা থাকার কারণে ওর বাসাতেই তার অসামাজিক কাজের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলেন। গত কয়েক বছর ধরে উপশহরে বসেই তারা অপরাধ নেটওয়ার্ক পরিচালনা করেন। মহিলা আওয়ামী লীগের গত কমিটি গঠনের সময় পুরুষ রাজনীতিকদের দিয়ে মহিলা নেত্রীদের চাপে রেখে কমিটিতে আসার চেষ্টা করে। তবে মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রীদের প্রতিবাদের কারণে তাকে কোনো কমিটিতে জায়গা দেয়া হয়নি বলে জানান কয়েকজন নেত্রী। তারা জানিয়েছেন- শুধু অসামাজিক কাজই নয়, তাদের নেটওয়ার্কে ছিল মাদক বিক্রেতারা। মদ, গাঁজা ও ইয়াবা আরজু ও সিন্ডিকেটের সদস্যরা বিক্রি করতো। উপশহরে অপরাধীদের একটি গ্রুপ লোকজনকে ধরে নিয়ে উলঙ্গ করে নারীদের দিয়ে ছবি তুলে ব্ল্যাকমেইল করতো। ওদের নেটওয়ার্কের সক্রিয় সদস্য হিসেবে আরজু কাজ করেছে। নানা সময় পুলিশের রোষানলে পড়লেও সে ও তার সিন্ডিকেট রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে পার পেয়ে যায়। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া কর্মকর্তা এডিসি মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম মানবজমিনকে জানিয়েছেন, ছাত্র আন্দোলনের সময়ের দুটি মামলার আসামি দেখিয়ে র্যাব সদস্যরা তাকে কোতোয়ালি থানায় হস্তান্তর করেছে। এ মামলা তাকে পুলিশ আদালতে সোপর্দ করেছে বলে জানান তিনি।
পাঠকের মতামত
সিলেটেতো এখন কতো কিছুই হচ্ছে,কেউ তিরিশ বছর বিদেশে পালিয়ে থেকে এখন দেশে এসে হিরো হচ্ছেন, এমন অনেককেই দেখবেন এরা দেশে ছিলোনা অথচ দেশে এদের কদর হঠাৎ করে বেড়ে গিয়েছে যেনো হাসিনাকে এর ক্ষমতার মসনদ থেকে নামাতে বিশাল ভূমিকা রেখেছে।আসলে ওরা ঐক্যের সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজ ছিল এখন আবার সুসময়ে হাজির হয়েছে আবার অসময়ে পালাবে।