শেষের পাতা
আওয়ামী লীগ সমর্থক ৭০ জন আইনজীবীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ
স্টাফ রিপোর্টার
৭ এপ্রিল ২০২৫, সোমবারজুলাই আন্দোলনে হত্যাচেষ্টায় জড়িত থাকার অভিযোগে আওয়ামীপন্থি ৭২ আইনজীবীর জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল ঢাকা মহানগর দায়রা জজ তাদের জামিন নামঞ্জুর করেন। তবে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করা আইনজীবীর মধ্যে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি আবু সাঈদ সাগর ও ১০ জন নারী আইনজীবীকে জামিন দিয়েছেন আদালত।
বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে তাদের জামিন শুনানি শুরু হয়। দীর্ঘ শুনানি শেষে বিকাল ৫টার পর আদালত এই আদেশ দেন। শুনানিকালে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আদালতকে জানান, তাদের মক্কেলরা হাইকোর্ট থেকে আট সপ্তাহের জন্য আগাম জামিন পেয়েছেন। আগাম জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। আদালতের আদেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে তারা আদালতে আত্মসমর্পণ করে মামলায় জামিন আবেদন করেছেন। তবে প্রসিকিউশন এ আবেদনের বিরোধিতা করে বলেন, অভিযুক্ত আইনজীবীদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো গুরুতর। তাই তাদের জামিন আবেদন খারিজ করে কারাগারে পাঠানো উচিত। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক আসামিপক্ষের ৭২ জনের জামিন আবেদন খারিজ করে তাদের কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর এডভোকেট ওমর ফারুক ফারুকী মানবজমিনকে বলেন, আজ ৮৩ জন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামি পক্ষের দীর্ঘ শুনানি শেষে আদালত হত্যাচেষ্টায় জড়িত থাকার অভিযোগে আওয়ামীপন্থি ৭২ আইনজীবীর জামিন নামঞ্জুর করেছেন। তবে বয়স বিবেচনায় ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি আবু সাঈদ সাগর ও ১০ জন নারী আইনজীবীসহ ১১ জনের জামিন মঞ্জুর করেছেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগপন্থি এই আইনজীবীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের ওপর হামলা করেছেন। শুধু তাই নয় বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের চেম্বারে চেম্বারে গিয়ে ভাঙচুর চালিয়েছে।
জামিন আবেদন নাকচের পর এজলাস থেকে আসামিদের কারাগারে নেয়া হয়। এ সময় একজন বয়স্ক আইনজীবীকে কান্না করতে দেখা যায়। আবার কয়েকজন আইনজীবীকে এজলাস থেকে প্রিজনভ্যানে নেয়ার সময় কয়েকজন আইনজীবীকে জয় বাংলা স্লোগান দিতে দেখা যায়। আবার কাউকে হাসতেও দেখা যায়। জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে আদালতে সকাল থেকেই বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্যদের হামলা, আইনজীবীদের চেম্বার ভাঙচুর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে আওয়ামী লীগপন্থি ১৪৪ জন আইনজীবীর বিরুদ্ধে মামলা হয়। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ আলী বাবু এ মামলা করেন। পরে ১১৫ জন আইনজীবী উচ্চ আদালত থেকে ৮ সপ্তাহের জামিন নেন। জামিনের মেয়াদ শেষ হবে আজ। রোববার ৮৩ জন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। কারাগারের পাঠানোর মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন- ঢাকা বারের সাবেক সভাপতি সাইদুর রহমান মানিক, গাজী শাহ আলম, মাহবুবুর রহমান, আবু সাইদ সাগর, সাইবার ট্রাইব্যুনালের পিপি নজরুল ইসলাম শামীম ও মোরশেদ হোসেন শাহীন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ৪ঠা আগস্ট দুপুরে আসামিরা ঢাকা আইনজীবী সমিতির সম্মুখ থেকে বেআইনি জনতাবদ্ধে আবদ্ধ হয়ে অস্ত্র, লাঠিসোটা নিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি ও হামলা করেন। তারা বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ‘শেখ হাসিনার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। গত ৬ই ফেব্রুয়ারি ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ আলী বাবু। এ ঘটনায় হাইকোর্ট থেকে ৮ সপ্তাহের জামিন নিয়েছিলেন ১১৫ জন। ৭ই এপ্রিল অন্তর্বর্তীকালীন জামিনের মেয়াদ শেষ হবে। এ মামলার আসামিরা হলেন- আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক কাজী নজিবুল্লাহ হিরু, ঢাকা মহানগর আদালতের সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মো. আব্দুল্লাহ আবু, আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান বাদল, মো. সাইদুর রহমান মানিক, মো. মিজানুর রহমান মামুন, আব্দুর রহমান হাওলাদার, গাজী মো. শাহ আলম, আব্দুল বাতেন, মাহবুবুর রহমান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক খন্দকার গোলাম কিবরিয়া জুবায়ের, মোহাম্মদ আনোয়ার শাহাদাৎ শাওন, মো. ফিরোজুর রহমান মন্টু, মো. আসাদুজ্জামান খান রচি ও সাবেক সংসদ সদস্য সানজিদা খানম।
পাঠকের মতামত
Right decision.
কারাগারে কেন? আগে রিমান্ড দেয়া হয়নি কেন? আর নারী বিবেচনা মানে বুঝলাম না। নারীরা এদেশে সমান অধিকার ভোগ করছে এবং কিছু কিছু খেএে বেশি অধিকার ভোগ করছে। অপরাধীর কোন লিংগ পরিচয় নেই। অপরাধী মানে অপরাধী। লিংগ পরিচয়ে এভাবে ছাড় দিলে দেশে সামনে অপরাধীরা আরো উৎসাহী হবে।
why zamin.The lawyars give zamin should be mobbed
হাস্যকর !