ঢাকা, ১৭ এপ্রিল ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ৪ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

বিনিয়োগ সম্মেলন

প্রথমদিনেই পরিবেশের ধারণা নিলেন বিদেশি ব্যবসায়ীরা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
৮ এপ্রিল ২০২৫, মঙ্গলবার
mzamin

বিনিয়োগ সম্মেলন উপলক্ষে ৪০টি দেশের ৫০০ এর বেশি বিদেশি বিনিয়োগকারী বাংলাদেশ সফর করেছেন।  

এর মধ্যে কোরিয়া, চীন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের প্রায় ৭০ জন ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা চট্টগ্রামের আনোয়ারায় অবস্থিত কোরিয়ান রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা বা কেইপিজেড এবং মিরসরাইয়ে অবস্থিত জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘুরে দেখেন। বিনিয়োগ বিষয়ে নানা খোঁজ-খবর নেন। বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে বর্তমান সরকারের নানামুখী উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। বলছেন, এসব পদক্ষেপের কারণে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে উৎসাহিত হবেন।

সরজমিন পরিদর্শনের মধ্য দিয়ে গতকাল থেকে শুরু হয়েছে বিনিয়োগ সম্মেলনের অনানুষ্ঠানিক যাত্রা। আনুষ্ঠানিকভাবে এই সম্মেলনের উদ্বোধন করা হবে আগামী বুধবার। রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে ওই দিন সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট-২০২৫’- শীর্ষক এ বিনিয়োগ সম্মেলনের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। এ সম্মেলন বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চলবে।

সম্মেলনের প্রথমদিনে দেশি-বিদেশি আগ্রহী বিনিয়োগকারীদের চট্টগ্রামের দু’টি বিশেষ শিল্প এলাকা পরিদর্শন করানো হয়। এদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এসব বিনিয়োগকারী কেইপিজেড-এ অবস্থিত ইয়াংওয়ান করপোরেশনের বিভিন্ন কারখানা ঘুরে দেখেন। কারখানা পরিদর্শন শেষে ইয়াংওয়ান করপোরেশনের পক্ষ থেকে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সামনে কেইপিজেডে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের বিষয়ে সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরা হয়।
উল্লেখ্য, বেসরকারি বিদেশি বিনিয়োগকারীর উদ্যোগে গড়ে তোলা কেইপিজেড পরিচালনা করে কোরিয়ার বিশ্বখ্যাত শিল্পগ্রুপ ইয়াংওয়ান করপোরেশন।
পরিদর্শনকালে আগ্রহী বিনিয়োগকারীরা ইয়াংওয়ান গ্রুপের বিনিয়োগ, উৎপাদিত পণ্য, রপ্তানির পরিমাণ, কর্মসংস্থান, বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কী কী বাধা ইত্যাদি বিষয়ে জানতে চান।

ইয়াংওয়ান কর্তৃপক্ষ ও সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের তথ্যানুযায়ী, ৭০ লাখ বর্গফুটের বেশি আয়তনের কেইপিজেড-এ ৪৮টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। সবক’টি প্রতিষ্ঠানই সবুজ শিল্প হিসেবে স্বীকৃত। ৪৮টি প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগই তৈরি পোশাক খাতসংশ্লিষ্ট। এর বাইরে জুতা ও ব্যাগের একাধিক কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় সব মিলিয়ে প্রায় ৩৫ হাজারের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।

শুধু কারখানা গড়ে তোলার মধ্যে নিজেদের কর্মকাণ্ড সীমিত রাখেনি ইয়াংওয়ান গ্রুপ। কেইপিজেড এলাকায় শ্রমিকদের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে ১০০ শয্যার হাসপাতাল। রয়েছে কর্মকর্তাদের আবাসন, বিনোদন সুবিধা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। নতুন করে গড়ে তোলা হচ্ছে ৬০০ শয্যার হাসপাতাল ও টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট।

বিদেশি বিনিয়োগে গড়ে ওঠা এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মীরাও কর্মক্ষেত্র নিয়ে তাদের ব্যাপক সন্তুষ্টির কথা তুলে ধরেন পরিদর্শনকারী দেশি-বিদেশি আগ্রহী বিনিয়োগকারীদের কাছে।

পরিদর্শনকালে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কথা বলেন ইয়াংওয়ান গ্রুপের চেয়ারম্যান কিহাক সাং। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আগে অনেকবার বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, তবে সে সময় কার্যকর উদ্যোগ ছিল না। বর্তমান সরকার বিনিয়োগ সংশ্লিষ্ট আইন-কানুন সহজীকরণ ও একত্রীকরণের উদ্যোগ নিয়েছে। এখন বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে সত্যিকার অর্থে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।’ তিনি উপস্থিত ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন বিদেশি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানান।

চীনের একজন বিনিয়োগকারী প্রতিনিধি কিহাক সাংয়ের কাছে জানতে চান, বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তিনি অন্যতম প্রধান বাধা কী মনে করেন? জবাবে তিনি বলেন, প্রশাসনিক জটিলতা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অন্যতম বাধা। তবে এই বাধা সত্ত্বেও বাংলাদেশ লাভজনক বিনিয়োগের জন্য উত্তম গন্তব্য বলে মন্তব্য করেন তিনি। এ কারণে তিনি এদেশে ধারাবাহিকভাবে বিনিয়োগ ও ব্যবসা সমপ্রসারণ করছেন বলে জানান।

এদিকে, বিনিয়োগ সম্মেলনের আয়োজক প্রতিষ্ঠান বিডা জানিয়েছে, দেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে আয়োজিত এই আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলনে বিশ্বের ৫০টি দেশের ৫৫০ জনের বেশি বিনিয়োগকারী ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন। এজন্য সরাসরি বিনিয়োগ করবেন এমন বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি বিশ্বের নামিদামি বেশ কিছু কোম্পানির শীর্ষ নির্বাহী কিংবা প্রতিনিধিরাও নিবন্ধন করেছেন।

পরিদর্শন শেষে তাদের অনেকেই বলেন, বাংলাদেশের বিগত সরকার বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে অনেক আলোচনা করেছিল। কিন্তু সেই তুলনায় বিনিয়োগ আসেনি। তবে বর্তমান সরকার বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে যেমনি কথা বলছে, তেমনি নানা উদ্যোগও নিচ্ছে। ফলে এখন বিনিয়োগ আসার ভালো সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। 

বেজার উদ্যোগে যাওয়া পরিদর্শন প্রতিনিধি দলে বেজার কর্মকর্তারা ছাড়াও প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার, সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব প্রমুখ ছিলেন।
 

পাঠকের মতামত

পতিত আওয়ামী স্বৈরাচার বিনিয়োগ বিঘ্নিত করতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সামনে কেএফসি ও বাটায় হামলা-ভাংচুর করেছে। তাদের প্রত্যেককে ধরে এনে বিচারের মুখোমুখি করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

সৈয়দ নজরুল হুদা
৯ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার, ১০:১১ পূর্বাহ্ন

শুধু নিজের ঢোল পেটানোর অভ্যাস ছাড়তে হবে গত সরকার শুধু কথাই বলতো কিছু করে নাই এটা কেমন কথা মিরসরাইয়ে এই শিল্প জোন কে করলো এগুলো লুকানো যায় না আর যখন বিনিয়োগকারীরা সত্য জানবে তখন সবাইকেই বাটপার ভাববে।

চৌধুরী
৮ এপ্রিল ২০২৫, মঙ্গলবার, ১:১৮ অপরাহ্ন

গাজার জন্য তো সারা বিশ্বেই মিটিং মিছিল হচ্ছে। ‌ দুইটা টাকার বিনিয়োগের ভয় দেখিয়ে যারা এর প্রতিবাদ করছে তারা ইসরাইল এবং ভারতের দালাল। তবে যারা লুটপাট, ভাঙচুর করেছে তাদেরকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে। আর বিনিয়োগকারীরা কচি খোকা না, তারা জানে এটা একাত্তরের সংগ্রামের দেশ, স্বৈরাচার বিরোধী‌ আন্দোলনের দেশ, আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দেশ, আবার উত্তাল জুলাই বিপ্লবের দেশ। এদেশের মানুষ নৃশংস অন্যায় এর মুখে চুপচাপ বসে আঙ্গুল চুষার মানুষ না। জেনে শুনেই তারা এসেছে।

বড়লাট
৮ এপ্রিল ২০২৫, মঙ্গলবার, ১২:৫৮ অপরাহ্ন

দেশে যেদিন বিনিয়োগ সম্মেলন‌ শুরু হলো সেদিনই সারা দেশে গাজাবাসীর সাথে একাত্ম ঘোষনা করতে গিয়ে সারা দেশে প্রতিবাদ মিছিল এবং সিলেটে কেএফসিতে ভাঙচুর একটি ভুল বার্তা দিল। সরকার বিষয়টিকে কেন এতো হালকাভাবে নিল এটি আমার বোধগম্য নয়।‌

Andalib
৮ এপ্রিল ২০২৫, মঙ্গলবার, ২:৩৭ পূর্বাহ্ন

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status