ঢাকা, ১৭ এপ্রিল ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ৪ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৬ হিঃ

বাংলারজমিন

বান্দরবানে ফের ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে জেএসএস

জালাল রুমি, চট্টগ্রাম থেকে
৯ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার
mzamin

হাতে ভারী অস্ত্র। পিঠে গুলিভর্তি ব্যাগ। কোমরে সজ্জিত গ্রেনেড। এভাবে বান্দরবান শহরে ঘুরে বেড়াচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সদস্যরা। চাঁদাবাজি করতে এমন রণসাজে প্রকাশ্যে নামার ছবিও এসেছে মানবজমিনের হাতে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখনো পর্যন্ত তাদের গ্রেপ্তারে কোনো অভিযান চালায়নি বলে অভিযোগ করেছে স্থানীয়রা। স্থানীয়দের অভিযোগ, ১৯৭৭ সালে বান্দরবান সাঙ্গু নদে পাঁচ সেনাসদস্যকে গুলি করে হত্যার মধ্যদিয়ে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও এই সংগঠন এ পর্যন্ত ৩৮ হাজার বাঙালিকে হত্যা করেছে। ২০২৩ সালের ৭ই এপ্রিল বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলায় পাহাড়ি সশস্ত্র সংগঠন জনসংহতি সমিতির ব্রাশফায়ারে ৮ জন নিহত হয়েছেন। জেএসএস পার্বত্য চট্টগ্রামে ২৭টি গণহত্যা চালিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বান্দরবানে সেনা অভিযানের ফলে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) দুর্বল ও শক্তিহীন হয়ে পড়েছে। ২০২৪ সালের এপ্রিলে ২ ও ৩ তারিখে রুমা ও থানচিতে সোনালী ও কৃষি ব্যাংক ডাকাতি, পুলিশের অস্ত্র লুট, ব্যাংক ম্যানেজারের অপহরণ এবং মসজিদে হামলার মতো ঘটনার পর নিরাপত্তা বাহিনী কেএনএফ’র বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান শুরু করে। 

এই অভিযানে কেএনএফ তাদের পূর্বের শক্তি ও দখলকৃত এলাকা হারায় এবং সংগঠনটির প্রধান নাথান বম গা-ঢাকা দিয়ে মিয়ানমার ও ভারতের মিজোরামে পালিয়ে যায়। এই শূন্যতার সুযোগ গ্রহণ করে জেএসএস পুনরায় বান্দরবানে তাদের প্রভাব বিস্তার শুরু করেছে। একসময় জেএসএস-এর আধিপত্য ছিল বান্দরবান সদর, রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, লামা ও আলিকদমের মতো এলাকায়। কিন্তু কেএনএফ, ম্রো বাহিনী, ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক এবং মগ লিবারেশন আর্মির উত্থানের ফলে তাদের নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই কমে গিয়েছিল।  এখন কেএনএফ’র দুর্বলতার সুযোগে জেএসএস আবারো প্রকাশ্যে অস্ত্র মহড়া, চাঁদাবাজি ও অপহরণের মতো কার্যক্রম শুরু করেছে। চলতি বছরের ১৯শে মার্চ রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান সীমান্তবর্তী বিলাইছড়ির বড়থলী এলাকায় কেএনএফ ও জেএসএস গোলাগুলিতে লিপ্ত হয়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বর্তমানে বান্দরবানে জেএসএস’র সন্ত্রাসী কার্যক্রম সাধারণ মানুষের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। তারা অপহরণ, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করছে। ২০১৬ ও ২০১৭ সালে মারমা জনগোষ্ঠী জেএসএস’র চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তুলেছিল স্থানীয় জনগোষ্ঠী। তাদের অপকর্মের বিরুদ্ধে আবারো ক্ষোভ জমা হচ্ছে স্থানীয়দের। জেএসএস-এর এই অপকর্ম শুধু আইনশৃঙ্খলার জন্য হুমকি নয়, বরং পাহাড়ের উন্নয়ন ও শান্তি প্রক্রিয়াকেও বাধাগ্রস্ত করছে।

স্থানীয় সাংবাদিক মোহাম্মদ রফিক মানবজমিনকে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে জেএসএস’র সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধ করতে হলে সেনা ক্যাম্পের সংখ্যা বৃদ্ধি করে নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ করে জেএসএস’র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। মারমা জনগোষ্ঠী যেভাবে অতীতে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিল, তেমনি সকল সমপ্রদায়ের মানুষকে একযোগে এই অপশক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। এ ছাড়া সরকারকে পাহাড়ে শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।

এদিকে জেএসএস’র প্রকাশ্যে সশস্ত্র তৎপরতার বিষয়ে  জানতে বান্দরবানের পুলিশ সুপার শহিদুল্লাহ কাওছারকে ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে  অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন)  আব্দুল করিম  জানান, আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ আসলে অথবা মামলা রেকর্ড হলে আমরা ব্যবস্থা নিই। ফেব্রুয়ারি ও মার্চে যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে সেগুলো সীমান্তবর্তী এলাকায় হলেও আমাদের জেলা এলাকায় নয়। আমরা জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হওয়ার মতো কোনো অভিযোগ এখনো পাইনি। পেলে আইনগত ব্যবস্থা নিবো।

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status