বিশ্বজমিন
আদালতে কাঁদলেন অভিনেত্রী জেসিকা, ধর্ষণের অভিযোগ
মানবজমিন ডেস্ক
(৪ দিন আগে) ২১ মে ২০২৫, বুধবার, ৯:০৮ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ২:৫৮ অপরাহ্ন

আদালতে দাঁড়িয়ে কাঁদলেন হলিউডের সাবেক অভিনেত্রী জেসিকা মান। কাঁদতে কাঁদতে তিনি নিউ ইয়র্কের এক জুরিকে বলছেন, হলিউডের প্রযোজক হার্ভে উইনস্টেন কত খারাপ মানুষ ছিলেন। জেসিনা অভিযোগ করেন, ২০১৩ সালে মিডটাউনে এক হোটেল কক্ষে তাকে ধর্ষণ করেছেন হার্ভে উইনস্টেন। হলিউডের এক সময়ের দাপুটে এই প্রযোজকের বিরুদ্ধে এখন থেকে ৫ বছর আগে একই রকম অভিযোগ করেন বেশ কিছু অভিনেত্রী। এখন এতদিন পরে আদালতে নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া কাহিনী প্রকাশ করলেন জেসিকা মান। তিনি বলেন, ২০১৩ সালের ১৮ই মার্চ মিডটাউনের ডাবল ট্রি হোটেলে তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন হার্ভে উইনস্টেন। তার আগে জেসিকাকে ওই কক্ষে কৌশলে ফাঁদে আটকে ফেলেন হার্ভে। তারপর নিজেই একটি ইঞ্জেকশন নেন তিনি। জেসিকা পরে জেনেছেন ওই ইঞ্জেকশন ব্যবহার করা হয় যৌন উত্তেজনা বৃদ্ধি করতে। এরপর জোর করে জেসিকাকে ধর্ষণ করেন হার্ভে। কিভাবে দরজা বন্ধ করে জেসিকাকে আটকে ফেলে তাকে বিবস্ত্র হতে বাধ্য করেছিলেন তিনি সে বিষয়ে জেসিকা বলেছেন- এটা এমন একটি মুহূর্ত, যা আমি মুছে দিয়েছিলাম। জেসিকা মান বলেন, হার্ভে আমাকে ধর্ষণ করার পরে আমি দেখতে পাই বিনের ভিতর পড়ে আছে সূচের একটি লেবেল। তাতে ‘নেক্রো-এরকম’ কিছু একটা শব্দ লেখা ছিল। পরে আমি গুগলে সার্স করে দেখতে পাই এটার অর্থ আসলে নিস্তেজ হয়ে যাওয়া পুরুষত্ব। কি কি ঘটেছিল তা কি আমি সব প্রকাশ করবো? আমার ভয় হয়।
মর্মান্তিক এই ঘটনা সত্ত্বেও জুরিদের কাছে মিস জেসিকা সাক্ষ্যে বলেন, এ ঘটনার পর হার্ভে উইনস্টেনের সঙ্গে জটিল এক সম্পর্ক অব্যাহত রাখেন। তিনি বলেন, আমি স্রেফ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি তার সঙ্গে রিলেশনশিপের। সেটা যদি খারাপ সিদ্ধান্ত হয়, তাহলে তার জন্য আমি দুঃখিত। আমি এটা করেছিলাম। এ বিষয়টি কিভাবে হ্যান্ডেল করতে হবে সেটা আসলে আমি জানতাম না। এ জন্য আমি শুধু সময় নিয়েছি। কখনো কখনো তিনি আমাকে বৈধভাবে ব্যবহার করেছেন। আমি না বললে সেটা তার কাছে ট্রিগারের মতো ছিল। এটাকে আমি ‘দৈত্যের আচরণ’ বলবো। এমন আচরণ বেরিয়ে আসতো।
২০১৩ সালে হোটেল কক্ষে ধর্ষণের আগেই জেসিকা মানের কাছে ‘ওরাল’ সম্পর্ক স্থাপন করতে চেয়েছিলেন হার্ভে উইনস্টেন। এটা ছিল লস অ্যানজেলেসে প্রথম প্রাইভেট মিটিংয়ের সময়। জেসিকা জুরিদের কাছে বলেছেন, হার্ভে তাকে ও একজন বন্ধুকে নিজের হোটেল কক্ষে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কথা ছিল ‘ভ্যাম্পায়ার একাডেমি’ ছবির সংলাপের কপি দেবেন। কিন্তু যখন জেসিকাকে বেডরুমে একা পান, তখন হার্ভে তার বাধা উপেক্ষা করে জেসিকার ওপর চড়াও হন। এক্ষেত্রে শক্তি প্রয়োগ করেন তিনি। তাদের মধ্যে এ সময় একরকম লড়াই হয়। এসব বলতে বলতে কাঁপতে থাকেন জেসিকা মান। তবু তিনি বলেন, ওই ঘটনার পর হার্ভের সঙ্গে রিলেশনশিপে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। আশা করেছিলেন, ভয়াবহ যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, সে বিষয়ে একটি সেন্স জাগ্রত হবে। আমি শুধু বেদনাকে সরাতে চেয়েছি।
জেসিকা মান বলেছেন, ওই সময়ে তিনি এ নিয়ে কথা বলার সাহস পাননি। কারণ, হার্ভের প্রভাব ছিল বিশাল। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক কোনো কোনো প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার শক্তিশালী যোগাযোগ। জেসিকার ভাষায়- আমার মনে আছে, কল্পনা করেছি যদি আমি এসব নিয়ে কোনো কথা বলি তাহলে হার্ভে তার বন্ধু ও সিক্রেট সার্ভিসকে কল করবেন আমাকে ধরতে। হার্ভের কাছ থেকে কখনো কোনো অর্থ নেয়ার কথা অস্বীকার করেছেন জেসিকা। তিনি বলেন, আমার মনে হয়েছে আমি যদি কোনো অর্থ নিই তাহলে তা হবে দেহব্যবসায়ীদের নোংরা উপার্জনের মতো। কখনোই তার নোংরা অর্থ আমি চাই নি। কারণ, আমি তো বিক্রি হতে যাইনি।
এর আগে অন্য অভিনেত্রীদের ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের অভিযোগে হার্ভে উইনস্টেন অভিযুক্ত হন ২০২০ সালে। তবে জেসিকা মানকে থার্ড-ডিগ্রি ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত হলেও তা উল্টে দেয়া হয়। এখন আবার সেই অভিযোগের নতুন করে বিচার হচ্ছে। যদি এতে হার্ভে অভিযুক্ত হন তাহলে তার ২৫ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। হার্ভের বিরুদ্ধে পুনঃবিচারে জেসিকা মান হলেন তৃতীয় ও চূড়ান্ত অভিযোগকারী। এর আগে সাবেক মডেল কাজা সোকোলা, প্রযোজকের সাবেক সহকারী মরিয়ম মিমি হ্যালি একই অভিযোগ আনেন।