বিশ্বজমিন
অতি গরমে হজযাত্রীদের প্রতি সৌদি আরবের নির্দেশনা
মানবজমিন ডেস্ক
(২ দিন আগে) ৩১ মে ২০২৫, শনিবার, ১:৩০ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:১২ পূর্বাহ্ন

পবিত্র হজ মৌসুম এখন। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হজযাত্রীরা গিয়ে সমবেত হচ্ছেন বা হয়েছেন পবিত্র মক্কায়। কিন্তু অসহনীয় তাপমাত্রা সেখানে। সৌদি আরব নিশ্চিত করেছে হজ পালনের উদ্দেশ্যে যাওয়া ১০ লক্ষাধিক হজযাত্রীর মধ্যে পাঁচজনের অতিমাত্রায় তাপে অসুস্থ গয়ে পড়েছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে উদ্ধৃত করে অনলাইন আরব নিউজ বলছে, আক্রান্ত সবাইকে দ্রুত চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। তাদের অবস্থা স্থিতিশীল।
মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, হজযাত্রীদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা রক্ষায় চিকিৎসা দল সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে এবং প্রয়োজনে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণে প্রস্তুত। সৌদি আরবের জাতীয় আবহাওয়া কেন্দ্র পূর্বাভাস দিয়েছে যে, এবারের হজ মৌসুমে পবিত্র স্থানগুলোতে আবহাওয়া থাকবে গরম থেকে অতিমাত্রায় গরম। তাদের তথ্যমতে, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকবে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৭ ডিগ্রি থেকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে উঠানামা করবে। আর্দ্রতার মাত্রা শতকরা ১৫ ভাগ থেকে শতকরা ৬০ ভাগ পর্যন্ত হতে পারে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তাদের এক্স অ্যাকাউন্টে একটি পোস্টে হজযাত্রীদেরকে পর্যাপ্ত পানি পান করার, সরাসরি রোদে দীর্ঘক্ষণ না থাকার, ছায়াযুক্ত পথ ব্যবহার করার, উপযুক্ত সুরক্ষা সামগ্রী পরিধান করার এবং দুর্বলতা অনুভব করলে দ্রুত চিকিৎসা সহায়তা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। আরও উল্লেখ করা হয়, যদি সময়মতো চিকিৎসা না নেয়া হয়, তবে তাপজনিত কারণে ১০-১৫ মিনিটের মধ্যেই হিট স্ট্রোকে হতে পারে- যা জীবন ঝুঁকিপূর্ণ করতে পারে। হজযাত্রীদেরকে এমন কোনো উপসর্গ দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে হাত, মুখ ও গলা ধুয়ে ফেলার, ঠাণ্ডা স্থানে চলে যাওয়ার এবং পর্যাপ্ত ঠাণ্ডা পানি পান করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় মাথাব্যথা, অতিরিক্ত ঘাম, বমিভাব, মাথা ঘোরা ও প্রবল তৃষ্ণাকে হিট এক্সাসনের প্রধান লক্ষণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। বহুভাষিক সচেতনতামূলক প্রচার অভিযানও শুরু করা হয়েছে এবং মৌসুমি তাপঝুঁকির প্রতিক্রিয়ায় মাঠ পর্যায়ের প্রস্তুতিও জোরদার করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য খাতের প্রস্তুতি ঘোষণা করে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত বছরের তুলনায় এ বছর শয্যার পরিমাণ ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে হাসপাতালগুলোতে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফাহাদ আল-জালাজেল জানিয়েছেন, হজযাত্রীদের সেবা দিতে ৫০,০০০-এর বেশি চিকিৎসক ও প্রযুক্তিগত কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। কোনো সংক্রামক রোগ বা মহামারির প্রাদুর্ভাব এবার দেখা দেয়নি। সৌদি প্রেস এজেন্সিকে উদ্ধৃত করে বলা হয়- স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম শুরু হয়েছে হজযাত্রীদের নিজ নিজ দেশ থেকেই, যেখানে আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যঝুঁকি বিশ্লেষণ করে স্পষ্ট স্বাস্থ্য নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে ইয়েলো ফিভার, মেনিনজাইটিস, পোলিও, কোভিড-১৯ এবং ইনফ্লুয়েঞ্জার টীকা। মন্ত্রী আরও বলেন, হজ মৌসুমে স্বাস্থ্য সার্টিফিকেট হলো প্রথম প্রতিরক্ষা স্তর। প্রথম মক্কা রুট ইনিশিয়েটিভ ফ্লাইট আসার সঙ্গে সঙ্গে সৌদি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা তাদের কার্যক্রম শুরু করে। সৌদি আরবের বিস্তৃত প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ১৪টি স্থল, বিমান ও নৌবন্দর সম্পূর্ণরূপে সজ্জিত করা হয়েছে। শুক্রবার পর্যন্ত ৫০,০০০-এর বেশি স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৪০টি অস্ত্রোপচার, ৬৫টি হার্ট ক্যাথেটারাইজেশন এবং ৬টি ওপেন হার্ট সার্জারি রয়েছে।
হিট স্ট্রোক মোকাবিলায়, আল-জালাজেল জানিয়েছেন যে- মক্কা নগর ও পবিত্র স্থান বিষয়ক রয়্যাল কমিশনের সঙ্গে সমন্বয়ে বেশ কয়েকটি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে- যেমন ১০,০০০টির বেশি গাছ রোপণ, ৪০০টি অতিরিক্ত পানির কুলার ও মিস্টিং ফ্যান স্থাপন এবং ছায়াযুক্ত পথ সম্প্রসারণ। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বহুভাষিক সচেতনতামূলক প্রচারণা জোরদার করেছে, মাঠ পর্যায়ে দল মোতায়েন, মিডিয়া কর্মসূচি চালু এবং চিকিৎসা মিশনের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য বার্তা হজযাত্রীদের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেছে।
মন্ত্রী আরও জানান, কিদানা ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির সহযোগিতায় মিনা অঞ্চলে ২০০ শয্যার একটি নতুন জরুরি হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে। তাছাড়া জাতীয় গার্ড, প্রতিরক্ষা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয়ে ১২০০ শয্যার তিনটি নতুন ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে। এগুলো উদ্বোধন করা হয়েছে ৭১টি জরুরি সহায়তা পয়েন্ট, ৯০০টি অ্যাম্বুলেন্স, ১১টি ইভাকুয়েশন এয়ারক্রাফট এবং ৭,৫০০-এর বেশি প্যারামেডিক্সসহ। স্বাস্থ্যমন্ত্রী হজযাত্রীদের স্বাস্থ্য নির্দেশিকা অনুসরণ করার আহ্বান জানান এবং বলেন- সৌদি আরবের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পূর্ণ সক্ষমতায় কাজ করছে, যাতে সবার জন্য একটি নিরাপদ ও সুস্থ হজ মৌসুম নিশ্চিত করা যায়।