ঢাকা, ১ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৪ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

শেষের পাতা

করোনার সঙ্গে ডেঙ্গু আতঙ্ক

স্টাফ রিপোর্টার
১২ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার

দেশে আবারো চোখ রাঙাচ্ছে করোনাভাইরাস। সারা দেশে নতুন করে বাড়ছে প্রাণঘাতী ভাইরাসটির সংক্রমণ। একই সঙ্গে চলতি মাসে এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর প্রকোপও দ্রুত বাড়ছে। ফলে করোনার সঙ্গে ডেঙ্গু আতঙ্ক দেখা দিয়েছে মানুষের মধ্যে। এরই মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সতর্কবার্তা জারি করেছে। দিয়েছে নানা দিকনির্দেশনাও। পাশাপাশি দেশের সব স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরে হেলথ স্ক্রিনিং ও নজরদারি জোরদার করতে বলা হয়েছে।

এদিকে, নতুন করে আবারো করোনা পরীক্ষা শুরু করতে যাচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। করোনা পরীক্ষার জন্য ইতিমধ্যে ২৮ হাজার কিট দেশে এসেছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে দেশের বর্তমান করোনা পরিস্থিতি নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় তিনি ১১ দফা নির্দেশনা মেনে চলার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, কিট ইতিমধ্যে আমরা সংগ্রহ করেছি। যেখানে আর্টিফিশিয়ালি হয় সেখানে এখনো পরীক্ষা হচ্ছে। কিছু কিছু জায়গায় মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। এ জন্য যথেষ্ট সংখ্যক কিট আমরা সংগ্রহ করেছি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ইতিমধ্যে ২৮ হাজার র‌্যাপিড এন্ডিজেন্ট কিট এসেছে। আরও ১০ হাজার আর্টিফিশিয়াল এন্টিজেন্ট ও কিট আজকের মধ্যেই আমরা পাবো। এ ছাড়া আমরা অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যোগাযোগ করেছি, আশা করছি কিটের কোনো সমস্যা হবে না। তিনি আরও বলেন, করোনাভাইরাসের কয়েকটি নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট ইতিমধ্যে চিহ্নিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে সংক্রমণ বিস্তারের ঝুঁকি থাকায় দেশের সব স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরে আইএইচআর ডেস্কসমূহে নজরদারি ও স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে সব রোগীর করোনা পরীক্ষার প্রয়োজন নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, সব ধরনের রোগীর করোনা পরীক্ষার কোনো প্রয়োজন নেই। শুধুমাত্র যাদের জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট বা অন্যান্য উপসর্গ রয়েছে এবং যারা জটিল অবস্থায় রয়েছে, তারাই করোনা পরীক্ষা করাবে। চিকিৎসকেরাও সেই অনুযায়ী পরামর্শ দেবেন। ভ্যাকসিন চলমান রয়েছে জানিয়ে ডা. আবু জাফর বলেন, যাদের কখনোই ভ্যাকসিন দেয়া হয়নি তাদের অবশ্যই ভ্যাকসিন নিতে হবে। বিশেষ করে ১৮ বছরের উপরে যারা, ‘ডিফারেন্ট কন্টাক্ট পারসনের’ (বিভিন্ন ব্যক্তিদের) সঙ্গে কাজ করেন, প্রেগনেন্ট উইমেন (অন্তঃসত্ত্বা নারী) তাদের ভ্যাকসিন দিতে হবে। আর পুরাতনদের মধ্যে ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের ভ্যাকসিন দেয়া জরুরি। দেশে করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কে বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত যেমন ছিল এখনো কিন্তু একই রকম আছে। ১২ থেকে ১৩ শতাংশের মধ্যে রয়েছে।  জনসচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এ সময় জনগণ যাতে আতঙ্কিত না হয়, সে জন্য জনসচেতনতা বাড়াতে গণমাধ্যমকর্মীদেরও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া স্বাস্থ্যবিধি প্রচারের আহ্বান জানান তিনি।

২৪ ঘণ্টায় করোনায় নতুন ১০ রোগী শনাক্ত: দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ১০ জনের শরীরে নতুন করে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। তবে এই সময়ে করোনাভাইরাসে কারও মৃত্যু হয়নি। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন নতুন ১০ জন। এ নিয়ে দেশে করোনায় শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ২০ লাখ ৫১ হাজার ৭৭০ জনে। আর এতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ২৯ হাজার ৫০০ জন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ১০৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ সময়ে শনাক্তের হার ছিল ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ। মোট করোনা পরীক্ষায় এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মোট মৃত্যুহার ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এখন পর্যন্ত করোনায় সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ১৯ হাজার ৩৮০ জনে। চলতি মাসে অর্ধশতাধিক মানুষ আক্রান্ত হয়েছে করোনায়। এতে মারা যান একজন।

উল্লেখ্য, সংক্রমণ আশঙ্কাজনক না হলেও দেশে এ করোনার প্রকোপ বাড়ছে। গত বৃহস্পতিবার দেশে করোনায় একজনের মৃত্যু হয়। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) কোভিড-১৯ নজরদারি ডেটা বিশ্লেষণ অনুযায়ী, মে মাসে সংক্রমণের হার বেড়েছে। মে মাসে ১,৪০৯টি নমুনার মধ্যে ৯ দশমিক  ৫১ শতাংশ কোভিড-১৯ পজিটিভ এসেছে, যা ২০২৩ সালের জানুয়ারির পর সর্বোচ্চ। ২০২০ সালের ৮ই মার্চ দেশে প্রথম কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর করোনায় প্রথম মৃত্যু হয়। এরপর থেকে দেশে ২০ লাখ ৫১ হাজারের বেশি আক্রান্ত হয় এবং ২৯ হাজার ৪৯৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।

হাসপাতালগুলোয় করোনা পরীক্ষা শুরু হচ্ছে আবার: দেশে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে হাসপাতালগুলোতে করোনা পরীক্ষা চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে আপাতত এ পরীক্ষা হবে সীমিত পরিসরে। বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার (সিডিসি) লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক হালিমুর রশীদ এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। অধ্যাপক হালিমুর রশীদ বলেন, প্রাথমিকভাবে যেসব মেডিকেল কলেজ ও জেলা হাসপাতালে আরটি-পিসিআর ল্যাব রয়েছে, সেখানেই এই পরীক্ষা শুরু হবে বলে জানা গেছে। প্রাথমিকভাবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহরের হাসপাতালগুলোয় পরীক্ষা চালু হবে। যেসব হাসপাতালে আরটি-পিসিআর ল্যাব রয়েছে, শুধু সেখানেই শুরুতে এই সুবিধা মিলবে।

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি’) তথ্য অনুযায়ী, গত এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহে দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন একজন। কিন্তু গত মে মাসের শেষ সপ্তাহে এতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ২৫-এ।
আইসিডিডিআর,বি’র গবেষকেরা করোনার নতুন একটি ধরন শনাক্তের কথা বলছেন। এর নাম এক্সএফজি। এর পাশাপাশি এক্সএফসি ধরনটিও পাওয়া গেছে। দু’টিই করোনার শক্তিশালী ধরন অমিক্রনের জেএন-১ ভ্যারিয়েন্টের উপধরন।

২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত ২৮৮ রোগী ভর্তি: চলতি মাসে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে সারা দেশে নতুন ২৮৮ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ২৬১ জনই বরিশালের বাসিন্দা। তবে, এসময় নতুন করে কারও মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায়নি। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্বাস্থ্য সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ২৮৮ জন। তাদের মধ্যে বরিশাল বিভাগেই ২৬১ জন, ঢাকা দক্ষিণে ১২, চট্টগ্রাম বিভাগে ১১, ময়মনসিংহে দুইজন এবং রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগে একজন করে আক্রান্ত আছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত এক হাজার ১৬১ জন ও মৃত্যু ১০ জন, ফেব্রুয়ারিতে এক হাজার ৫৩৫ জন ও মৃত্যু ১৩ জন, মার্চ মাসে আক্রান্ত এক হাজার ৮৭১ জন ও মৃত্যু ১৩ জন, এপ্রিল মাসে আক্রান্ত দুই হাজার ৫৭২ জন ও মৃত্যু ২০ জন, মে মাসে আক্রান্ত চার হাজার ৩৪৫ জন ও মৃত্যু ২৩ জন।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status