ঢাকা, ১ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৪ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

শেষের পাতা

সিলেট বিএনপি

বিতর্কিত ‘কাণ্ডে’ বহিষ্কার কুহিনুর

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
১৩ জুন ২০২৫, শুক্রবার
mzamin

ঘটনা গত মঙ্গলবারের। শহরতলীর সিলামে একটি সড়কের নামকরণ নিয়ে সংঘর্ষ হয় দু’পক্ষের। সড়কটি ‘খন্দকার বাড়ি’ নামকরণের পক্ষে গ্রামের জুবেল, রুহেল সহ একাংশের অবস্থান। আর জামায়াত নেতা মজম্মিল আলী সহ অন্যরা বিপক্ষে। গেল কয়েকদিন ধরে এ নিয়ে গ্রামের দু’পক্ষ মুখোমুখি অবস্থায় ছিল। মঙ্গলবার যখন জুবেল, রুহেলরা অনেকটা জোরপূর্বক নামকরণের স্মারক বসাতে যান তখন মজম্মিল আলী সহ অন্যরা বাধা দেন। এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে গুরুতর আহত হন মজম্মিল আলী। তার ওপর হামলার জন্য দায়ী করেন দক্ষিণ সুরমা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক কুহিনুর আহমদকে। তার দাবি- কুহিনুর আহমদের নেতৃত্বে তার ওপর হামলা হয়েছে। তার সঙ্গে বিরোধকারী ব্যক্তি জুবেল, রুহেল সহ অন্যরা হচ্ছে কুহিনুরের শ্বশুরবাড়ির লোক। এজন্য কুহিনুর শ্বশুরবাড়ির পক্ষে এসে সংঘর্ষে অংশ নেন এবং তাকে আহত করেন। এদিকে, আহত অবস্থায় দেয়া মজম্মিলের বক্তব্য ভিউজ্যুয়াল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। এতে করে ব্যাপক আলোচিত হন কুহিনুর। তিনি দক্ষিণ সুরমা বিএনপি’র নেতা। গণ-অভ্যুত্থানের পর নানা বিতর্কিত ঘটনায় তিনি বিতর্কিত। ফলে এলাকায় ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নজরে পড়ে সেটি। জেলা বিএনপি’র এক নেতার মতে, গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে কুহিনুরের নানা বিতর্কিত ঘটনার অভিযোগ দলটির কেন্দ্রের কাছে জমা ছিল। নতুন করে বিতর্কিত ঘটনায় তার নাম আসায় শেষ পর্যন্ত কুহিনুরের বিরুদ্ধে কঠোর সিদ্ধান্ত এসেছে। তার মতে, বহিষ্কারের মতো পরিণতির জন্য দায়ী কুহিনুর নিজেই। এর আগে দলের পক্ষ থেকে তাকে মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু কুহিনুর সেই সতর্কবার্তা আমলে না নেয়ার কারণে তার ওপর শাস্তির খড়গ নেমে এসেছে। বুধবার রাত ১০টার পর কুহিনুরের বহিষ্কারের একটি চিঠি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হতে থাকে। পরবর্তীতে জেলা বিএনপি’র একাধিক নেতা এই চিঠির সত্যতা স্বীকার করেন। বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সহ-দপ্তর সম্পাদক মুহাম্মদ মুনির হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে কুহিনুরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে- ‘দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং দলের নীতি ও আদর্শ পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে সিলেট জেলাধীন দক্ষিণ সুরমা উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক কুহিনুর আহমেদকে বিএনপি’র প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।’ বহিষ্কারের পর বিএনপি’র অভ্যন্তরেই কুহিনুরকে নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। কেউ কেউ বলছেন, কুহিনুর গ্রুপিং রাজনীতির বলি হয়েছেন। আবার কেউ কেউ বলছেন; তার কর্মকাণ্ডের কারণেই সে বহিষ্কারের পথ তৈরি করে দিয়েছিল। অথচ সিলেটের রাজপথে আন্দোলনকালীন সময়ে কুহিনুরের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। নিজেকে গুলির মুখে রেখে কুহিনুর রাজপথে আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তার বাড়ি দক্ষিণ সুরমার মোল্লারগাঁওয়ে। যখন কুহিনুরকে দলের উপজেলার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয় তখন অনেকটা চ্যালেঞ্জ নিয়েই তিনি সেটি গ্রহণ করেন। একাধিক মামলার আসামি হয়ে হুলিয়া মাথায় নিয়ে আন্দোলন করেন। ওই সময় পুলিশের টার্গেটেও ছিলেন তিনি। এই অবস্থায়ও সিলেট নগরের প্রবেশমুখ দক্ষিণ সুরমার কর্তৃত্ব ছাড়েননি কুহিনুর। সড়কে গাছ ফেলে অবরোধ, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ সবই করেছেন। এ কারণে আন্দোলনকালীন সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজর থাকতো দক্ষিণ সুরমায়। জেলা বিএনপি’র শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে তিনি ছিলেন আদরের। এই অবস্থায় গণ-অভ্যুত্থানের পর বদলে যান কুহিনুর আহমদ। গোটা দক্ষিণ সুরমার কর্তৃত্ব চলে আসে তার কাছে। রাতারাতি ক্ষমতার স্বাদ গ্রহণ করা কুহিনুর সিলেটে প্রথমেই আলোচনায় আসেন চিনিকাণ্ডে। ৫ই আগস্টের আগে সিলেটে চোরাই চিনি ব্যবসা ছিল রমরমা। ৫ই আগস্টের পর সেই ব্যবসা পুনরায় চালু হলে দক্ষিণ সুরমা হয়ে ওঠে চিনি ব্যবসায়ীদের কাছে আতঙ্কের আস্তানা। চিনির গাড়ি গেলেই আটকে দেয়া হতো। বড় অঙ্কের চাঁদা না দিলে গাড়ি থেকে চিনি ছিনিয়ে নেয়া হতো। কখনো কখনো গাড়িরও হদিস মিলতো না। কয়েকটি চিনির গাড়ির ঘটনা তখন গোটা সিলেট জুড়ে আলোচিত হয়। জৈন্তাপুরের হরিপুরের চোরাই রাজ্যের এক ব্যবসায়ী ওই সময় দক্ষিণ সুরমার সিলামে অপহৃত হয়ে কয়েক লাখ টাকা খুইয়েছেন। পরে মুক্তিপণ দিয়ে তিনি উদ্ধার হয়ে নিজ এলাকায় যান। সেখানে গিয়ে দক্ষিণ সুরমার চিনি ছিনতাইয়ের লোমহর্ষক বর্ণনা দেন। চিনির ছিনতাইয়ের ঘটনা যারাই ঘটিয়েছেন সেখানে শীর্ষ নাম হিসেবে প্রচারিত হয়েছে কুহিনুরের। শুধু চিনিই নয়, চোরাই সব মালামাল দক্ষিণ সুরমা থেকে ছিনতাই করা হয়। এসব ছিনতাইকারীদের হেডকোয়ার্টারে পরিণত হয় সিলাম এলাকা। চণ্ডিপুল সহ আশপাশ এলাকা থেকে চিনি ছিনতাই করে নিয়ে যাওয়া হতো ওই এলাকায়। এলাকার মানুষ এ কারণে অতিষ্ঠ ছিলেন। দক্ষিণ সুরমা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল দখল সহ পরিবহন ব্যবসায় রাতারাতি আধিপত্য বিস্তার করেন কুহিনুর। পরে তিনি পরিবহন মালিক সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। ঈদের আগে ট্রাক টার্মিনাল ও জালালপুর পশুর হাট নিয়ে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়। আর এই বিতর্কে বিতর্কিত হন কুহিনুরও। যারা এ দু’টি হাট পরিচালনা করেন তারা কুহিনুরেই মানুষ বলে এলাকার লোকজন জানিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, দক্ষিণ সুরমায় এমন কোনো ব্যবসা নেই যেখানে কুহিনুরকে ট্যাক্স দিতে হতো না। সবখানেই তার লোকজন ছায়ার মতো থাকতো। গত রমজানে বরইকান্দি এলাকায় নিজ দলের কর্মীদের হাতে হেনস্তা হয়েছিলেন কুহিনুর। জানা গিয়েছিল, চাঁদার টাকা ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে ওই সময় বরইকান্দির ১ নম্বর রোড এলাকায় হাতাহাতির সূত্রপাত হয়। এ সময় তারা কুহিনুরকে ধাওয়াও দেয়। এ ঘটনায় কুহিনুর নিজেই বাদী হয়ে দক্ষিণ সুরমা থানায় নিজ দলের কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। কুহিনুরের নিজস্ব লোক বলে পরিচিত দক্ষিণ সুরমা বিএনপি’র সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক রিপল আহমদ বিতর্কিত ঘটনায় ছাত্রদলের নেতাদের হাতে মারধরের শিকার হন। বহিষ্কারের বিষয়ে গতকাল বিকালে মানবজমিনের সঙ্গে কথা বলেন দক্ষিণ সুরমা বিএনপি’র বহিষ্কৃৃত সাধারণ সম্পাদক কুহিনুর আহমদ। তিনি জানিয়েছেন, কেন তিনি বহিষ্কার হলেন সেটি নিজেও জানেন না। বহিষ্কারের চিঠি তিনি এখনো পাননি। নিয়ম হচ্ছে বহিষ্কারের পূর্বে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেবেন। যিনি নোটিশপ্রাপ্ত হবে তিনি আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পাবেন। কিন্তু তার বেলায় সেটি করা হয়নি। এতে করে তার সঙ্গে ইনজাস্টিজ করা হয়েছে বলে দাবি করেন। সিলামের মারামারি ঘটনায় তার সম্পৃক্ততা নেই দাবি করে কুহিনুর বলেন, দক্ষিণ সুরমা বিএনপিকে দুর্বল করার জন্য পরিকল্পিতভাবে একটি ঘটনা সাজিয়ে লন্ডন থেকে মিসগাইডেড করে বহিষ্কার করা হয়েছে। সকল ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করে দলে ফিরবেন বলে জানান কুহিনুর।
 

পাঠকের মতামত

আমরাও চাই তিনি ত্যাগী হয়ে ফিরে আসুন। তার তৈরি করা ক্যাডার বাহিনী কে প্রশাসনের হাতে তুলে দিয়ে, দলে ফিরে আসুক

M 2991
১৩ জুন ২০২৫, শুক্রবার, ২:৪০ পূর্বাহ্ন

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status