শেষের পাতা
ঈদ ঘিরে নির্বাচনী তৎপরতায় জামায়াত
আহমেদ জামাল
১৩ জুন ২০২৫, শুক্রবারঈদের দীর্ঘ ছুটিতে নির্বাচনী আমেজে ব্যস্ত সময় পার করছেন জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা। বসে নেই তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির। ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখেই তাদের এই ব্যস্ততা। এজন্য রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে গ্রামের পাড়া-মহল্লা পর্যন্ত ঈদ শুভেচ্ছাবিনিময়, ঈদ পুনর্মিলনী, ঈদ উপহার বিতরণ, মতবিনিময় সভা, ব্যক্তিগত জনসংযোগসহ নানা সামাজিক রাজনৈতিক ও ধর্মীয় কর্মসূচিতে যুক্ত হচ্ছেন দলের শীর্ষ থেকে তৃণমূলের নেতা কর্মী সমর্থকরা।
টানা কর্মসূচিতে ছুটে চলেছেন নিজ নিজ এলাকার সাধারণ মানুষ ও ছাত্রজনতার মাঝে। বিষয়টি স্বীকার করে জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং কক্সবাজার-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ড. এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, আমাদের নির্বাচনী তৎপরতা এবং প্রস্তুতি অনেক আগেই শুরু হয়েছে। তবে সমপ্রতি সরকার নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা দেয়ায় এতে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। তিনি বলেন- দীর্ঘ পনেরো বছর পর মানুষ মুক্ত মনে, মুক্ত পরিবেশে স্বস্তির ঈদ উদ্যাপন করেছে। এজন্য অনেক মানুষ গ্রামমুখী হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণার মধ্যে দিয়ে নির্বাচনের ব্যাপারে মানুষের মাঝে আগ্রহও বেড়েছে। এতে ঈদ উৎসবকে কেন্দ্র করে গ্রামেগঞ্জে, মাঠে-ঘাটে খানিকটা নির্বাচনী আমেজ লক্ষ করা যাচ্ছে। ফলে ঈদের দীর্ঘ ছুটিকে কাজে লাগিয়ে আমাদের সম্ভাব্য প্রার্থীরা জনগণের কাছাকাছি যাওয়ার প্রয়াস পাচ্ছেন। ডক্টর হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, আমরা আশাবাদী সরকার ঘোষিত সময়ের মধ্যে সংস্কার সম্পন্ন এবং বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে জুলাই সনদ ঘোষণার মাধ্যমে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হবে। সেইসঙ্গে জাতি একটি অবাধ নিরপেক্ষ এবং দৃষ্টান্তমূলক নির্বাচন উপভোগ করবে। উল্লেখ্য, ঈদের আগের দিন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে আসন্ন নির্বাচনের সম্ভাব্য রোডম্যাপ ঘোষণা করেন। তবে তার অনেক আগেই ২৮৯ আসনের সম্ভাব্য প্রাথমিক প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে জামায়াতে ইসলামী। এসব প্রার্থী ঈদের ছুটিতে ছুটে যান নির্বাচনী এলাকায়। এক্ষেত্রে দলের আমীর ডাক্তার শফিকুর রহমান থেকে শুরু করে প্রথম দ্বিতীয় ও তৃতীয় সারির প্রায় সব নেতা পবিত্র ঈদুল আজহা উদ্যাপন করেছেন ঢাকার বাহিরে। উল্লেখযোগ্য প্রার্থীরা যেসব স্থানে পবিত্র ঈদ উদ্যাপন করেছেন তারা হলেন, জামায়াত আমীর ডা. শফিকুর রহমান মৌলভীবাজার জেলায় নিজ গ্রামে, নায়েবে আমীর সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলায় নিজ গ্রামে, নায়েবে আমীর সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় নিজ গ্রামে, নায়েবে আমীর সাবেক এমপি মাওলানা শামসুল ইসলাম চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায় নিজ গ্রামে, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম কুমিল্লা জেলার লাকসাম উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামে, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলায় নওকৈড় গ্রামে, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ কক্সবাজারে, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় ভাঙ্গাপুষ্কুরুনী গ্রামে, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এড. মুয়ায্যম হোসাইন হেলাল বরিশাল জেলায় নিজ গ্রামে, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এড. এহসানুল মাহবুব জুবায়ের সিলেট জেলায় নিজ গ্রামে, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মো. শাহজাহান চট্টগ্রাম মহানগরীতে, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন ঢাকায়, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি এড. মতিউর রহমান আকন্দ ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা উপজেলায় নিজ গ্রামে, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য আবদুর রব ঢাকায়, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মো. শাহাবুদ্দিন বগুড়ায়, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় নিজ গ্রামে, ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মো. সেলিম উদ্দিন সিলেট জেলায় নিজ গ্রামে পবিত্র ঈদুল আযহা উদ্যাপন করেন।
এদিকে চলমান কর্মসূচির অংশ হিসেবে মঙ্গলবার চাঁপাইনবাগঞ্জ-৩ আসনের প্রার্থী জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য নূরুল ইসলাম বুলবুল স্টুডেন্ট ফেস্ট ও কৃতী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এছাড়া তিনি অসহায়দের মাঝে গোশ্ত বিতরণ ও একাধিক ঈদ-পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন। নির্বাচনী তৎপরতা প্রসঙ্গে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, কেন্দ্র থেকে আলাদাভাবে কোনো নির্দেশনা না থাকলেও জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচনের স্বাভাবিক প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই নিজ এলাকায় নানা কর্মসূচি পালন করছেন। একইভাবে পটুয়াখালী-২ আসনের প্রার্থী, জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ মঙ্গলবার বাউফল সরকারি কলেজ মাঠে ছাত্র ও তরুণ সমাবেশে যোগ দেন। তিনি বিভিন্ন এলাকায় মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা, কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনা, বাজারে সৌজন্য সাক্ষাৎসহ নানা কর্মসূচিতে নির্বাচনী গণসংযোগ ও শোডাউন করেন।
অপরদিকে জামায়াতের এই নির্বাচনমুখী তৎপরতার পাশাপাশি জনমানুষের মনোযোগ আকর্ষণে সচেষ্ট হয়েছে তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির। ঈদের দিন সারা দেশে কোরবানির পশু কাটার শ্রমিক সংকট দূরীকরণে সম্পৃক্ত হয়েছে ৭১ হাজার শিবিরকর্মী। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আড়াই হাজার শিক্ষার্থী এবং ঢাকা কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আবাসিক শিক্ষার্থীদের মাঝে ঈদের দিন খাবার বিতরণ করে ছাত্রশিবির।