বিশ্বজমিন
ট্রাম্পের ‘বিগ বিউটিফুল বিল’ নিয়ে শঙ্কা
মানবজমিন ডেস্ক
৫ জুলাই ২০২৫, শনিবার
অবশেষে কংগ্রেসের অনুমোদন পেয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের ‘বিগ বিউটিফুল বিল’। এই বিল উত্থাপনের পর নানা সমালোচনা হলেও এখন যে তা কার্যকর হবে তাতে আর কোনো সন্দেহ নেই। বৃহস্পতিবার রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে ২১৮-২১৪ ভোটে বিলটি অনুমোদন পায়। এতে ট্রাম্পের অভ্যন্তরীণ নীতিগুলোর জন্য অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত হলেও স্বাস্থ্যসেবার আওতায় থাকা লাখ লাখ আমেরিকান স্বাস্থ্য বীমা হারাতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এতে বলা হয়, ট্রাম্পের ২০১৭ সালের কর ছাড়ের বিষয়টি স্থায়ী করেছে এই বিল। তার ২০২৪ সালের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নতুন কর ছাড় যুক্ত হলেও কঠোর হয়েছে অভিবাসন খাত। পাশাপাশি স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচিতেও বড় কাটছাঁট এবং সবুজ জ্বালানির জন্য বরাদ্দকৃত অনেক প্রণোদনা বাতিল করা হয়েছে। কংগ্রেসনাল বাজেট অফিস (সিবিও) জানিয়েছে, এতে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঋণ আরও ৩ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলার বাড়বে। যার বর্তমান পরিসংখ্যান ৩৬ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ডলার।
ট্রাম্পের এই বিল নিয়ে রিপাবলিকানদের মধ্যেও কিছুটা অসন্তোষ রয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত মাত্র দুইজন রিপাবলিকান বাদে সকলেই এই বিলের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। এর আগে বিলটি খুব অল্প ব্যবধানে সিনেটেও পাস হয়। প্রাথমিকভাবে পক্ষে-বিপক্ষের ভোট সমান হয়। পরে ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের ভোটে সেই টাই ভেঙে নিম্নকক্ষ পার হয় ট্রাম্পের বিগ বিউটিফুল বিল। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, স্থানীয় সময় শুক্রবার বিকাল ৫টায় বিলটিতে সই করার কথা রয়েছে ট্রাম্পের। অর্থাৎ এই বিলটি কার্যকর করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবসকেই বেছে নিয়েছেন তিনি।
হাউস স্পিকার মাইক জনসন বলেন, এটা দেশের অর্থনীতির জন্য জেট ফুয়েল হিসেবে কাজ করবে। রিপাবলিকানরা দাবি করছে, এই বিল কর কমাবে, ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করবে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াবে। কিন্তু ডেমোক্রেটদের অবস্থান ছিল এই বিলের বিপরীতে। তারা সবাই এর বিরুদ্ধে ভোট দেন। এই বিল ধনীদের লক্ষ্য করে করা হয়েছে বলে সমালোচনা করেছেন ডেমোক্রেট নেতা হাকিম জেফরিস। তিনি বলেন, এই বিলের মূল লক্ষ্য হলো ধনীদের বিশাল কর ছাড় দেয়া। আর সেই টাকাটা তোলা হবে সাধারণ আমেরিকানদের স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তায় কাটছাঁট করে। তিনি ৮ ঘণ্টা ৪৬ মিনিট বক্তব্য দিয়ে ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ বক্তৃতা দেন। সিবিও-এর বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আগামী ১০ বছরে কর আদায় কমে যাবে। যার পরিমাণ ৪ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন। আর ব্যয় কমবে ১ দশমিক ১ ট্রিলিয়ন। তবে এই ব্যয় কাটছাঁট মূলত মেডিকেইডের মতো স্বাস্থ্য কর্মসূচি থেকে আসবে, যা ৭ কোটির বেশি গরিব আমেরিকানকে সহায়তা প্রদান করে। বিল অনুযায়ী, মেডিকেইডে কড়াকড়ি নিবন্ধন প্রক্রিয়া ও অর্থায়নে কাটছাঁটের ফলে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ আমেরিকান স্বাস্থ্য বীমা হারাবেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে রিপাবলিকান সরকার গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবা রক্ষা করতে ৫০ বিলিয়ন ডলার অর্থ বরাদ্দ রেখেছে বলে জানিয়েছে। যাতে এসব পরিবর্তনে ছোট হাসপাতালগুলো বন্ধ না হয়ে যায়।
বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বলছেন, ধনীরা এই বিল থেকে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবেন। নিম্ন-আয়ের আমেরিকানদের ট্যাক্স কমলেও, সামাজিক সুরক্ষা ছাঁটাইয়ের ফলে তাদের প্রকৃত আয় কমে যাবে। জাতীয় ঋণের ভার বেড়ে যাওয়ায় তরুণ প্রজন্মের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে সবচেয়ে বেশি। ইতিমধ্যে মুডিস সংস্থা যুক্তরাষ্ট্রের ঋণের রেটিং কমিয়ে দিয়েছে। কিছু বিদেশি বিনিয়োগকারী মার্কিন বন্ডে আগ্রহ হারাচ্ছেন। বিলটি ৫ ট্রিলিয়ন ডলার ঋণের সীমা বাড়িয়ে দিচ্ছে, যা আপাতত দেশের ডিফল্ট এড়াবে। তবে অনেকে আশঙ্কা করছেন, দীর্ঘমেয়াদে এটি মার্কিন অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
এই বিলের মাধ্যমে ট্রাম্পের ২০১৭ সালের কর ছাড়ের পরিকল্পনা স্থায়ী হলো। পরিবার, ব্যবসা, প্রবীণ নাগরিক, অতিরিক্ত সময় কাজ করা শ্রমিক, রেস্টুরেন্টে বকশিশ পাওয়া কর্মীদের জন্য নতুন কর ছাড় যুক্ত হয়েছে। প্রথমে হাউসে পাস হওয়া বিলের চেয়ে চূড়ান্ত সংস্করণে কর ছাড় আরও বেশি এবং স্বাস্থ্য খাতে কাটছাঁট আরও গভীর। সিনেটে আলোচনার সময় কিছু বিতর্কিত বিষয় বাদ দেয়া হয়। যেমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ওপর রাজ্য পর্যায়ের নিষেধাজ্ঞা, এবং বিদেশি বিনিয়োগে প্রতিশোধমূলক কর। এই বিল ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে বড় ইস্যু হয়ে উঠতে পারে। ডেমোক্রেটরা আশা করছে, এর ফলে তারা অন্তত একটি কংগ্রেস কক্ষ পুনরুদ্ধার করতে পারবে। তবে রিপাবলিকানরা বলছে, এই কর ছাড় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবে, আর অনেক কাটছাঁট নির্বাচনের পর কার্যকর হবে। জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে, অনেক আমেরিকান বিলের ব্যয় ও গরিবদের ওপর প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন।