ঢাকা, ৮ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১২ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

বিশ্বজমিন

দ্য ওয়াশিংটন টাইমসের রিপোর্ট

ট্রাম্পকে নোবেলে মনোনয়ন নেতানিয়াহুর, গাজাকে রিসোর্ট বানানোর পরিকল্পনায় সমর্থন

জেফ মরডক

(৮ ঘন্টা আগে) ৮ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ১০:১৩ পূর্বাহ্ন

mzamin

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সেই প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়েছেন, যাতে গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে দিয়ে অঞ্চলটিকে বিলাসবহুল ‘রিভেরা’ রিসোর্টে পরিণত করার কথা বলা হয়েছে। হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে নৈশভোজে নেতানিয়াহু এ পরিকল্পনাকে ‘চমৎকার এক দূরদর্শী পরিকল্পনা’ বলে অভিহিত করেন এবং ইঙ্গিত দেন যে ফিলিস্তিনিরা চাইলে সম্পূর্ণভাবে গাজা ত্যাগ করতে পারে।

নেতানিয়াহু বলেন, এটিকে বলে স্বাধীন পছন্দ। যদি কেউ থাকতে চায়, তারা থাকতে পারে। তবে যদি কেউ চলে যেতে চায়, তবে তাদের সেই সুযোগ থাকা উচিত। নেতানিয়াহু আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল বর্তমানে অন্য কয়েকটি দেশের সঙ্গে কাজ করছে, যাতে গাজা থেকে সরিয়ে নেয়া ফিলিস্তিনিদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা যায়। তিনি বলেন, তারা ফিলিস্তিনিদের একটি উন্নত ভবিষ্যৎ দিতে চায়। আমরা কয়েকটি দেশের সঙ্গে ইতিবাচক অবস্থানে এগোচ্ছি। এটি তাদের পছন্দের স্বাধীনতা দেবে। আমি আশা করি আমরা সেটি নিশ্চিত করতে পারব।
এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে ওয়াশিংটনে নেতানিয়াহুর প্রথম সফরের সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক বিবৃতিতে বলেন যে, প্রায় ২০ লাখ ফিলিস্তিনিকে গাজা থেকে সরিয়ে দিয়ে সেই অঞ্চলকে মার্কিন নিয়ন্ত্রণে এনে উন্নত রিসোর্ট হিসেবে গড়ে তোলা যেতে পারে। পরবর্তীতে তিনি ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভিরা’ মন্তব্যটি থেকে খানিকটা পিছু হটেন। এই আলোচনা তাদের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের অংশ, যেখানে গাজার ভবিষ্যৎ, ইসরাইল-হামাস যুদ্ধবিরতি এবং হামাসের হাতে জিম্মি ব্যক্তিদের মুক্তির সম্ভাব্য চুক্তি নিয়ে কথা হয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে নেতানিয়াহু নোবেল পুরস্কার কমিটিকে একটি চিঠি দিয়েছেন, যেখানে তিনি ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দিয়েছেন। ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছেন, শান্তি উদ্যোগে অবদানের পরও তিনি পুরস্কার পাননি। কারণ (নোবেল) কমিটি ‘বামপন্থী’।

(ওয়াশিংটনে দুই নেতার এই) ব্যক্তিগত নৈশভোজ ছিল মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সর্বশেষ প্রচেষ্টা। এটি এমন এক সময়ে হয়েছে, যখন যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালিয়েছে- ইসরাইলের বড় অভিযানের অংশ হিসেবে। ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছেছে, যেটিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার প্রশাসনের অন্যতম বড় অর্জন বলে দাবি করেছেন। ট্রাম্প ইরানে হামলার সিদ্ধান্তের তুলনা করেন প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যানের ১৯৪৫ সালে জাপানে পারমাণবিক বোমা ফেলার সিদ্ধান্তের সঙ্গে। তিনি বলেন, আপনি যদি অনেক পেছনে যান, এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনার কথা মনে করিয়ে দেয়। হ্যারি ট্রুম্যানের ছবি এখন লবিতে, এক সুন্দর স্থানে টাঙানো, যেখানে এটি থাকা উচিত ছিল। সেটি অনেক যুদ্ধ থামিয়ে দিয়েছিল এবং এটিও অনেক যুদ্ধ থামিয়েছে।

হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট জানান, দুই নেতা ‘মধ্যপ্রাচ্যে ঘটে চলা ইতিবাচক অগ্রগতি’ নিয়ে আলোচনা করবেন। প্রেসিডেন্টের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হলো গাজায় যুদ্ধ শেষ করা এবং সকল জিম্মির মুক্তি নিশ্চিত করা। ইসরাইল যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে, সেই প্রস্তাব হামাসকে পাঠানো হয়েছে। আমরা আশা করছি, হামাস এটি গ্রহণ করবে। আমরা চাই, সকল জিম্মিকে মুক্ত করা হোক। লেভিট জানান, যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য ও যুক্তিসঙ্গত। ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এই সপ্তাহে কাতার সফর করবেন। সেখানে ইসরাইলি কর্মকর্তারা হামাসের সঙ্গে পরোক্ষ আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই আলোচনায় কাতার ও মিশরের প্রতিনিধি দলও অংশ নিচ্ছে।

রবিবার রাতে ট্রাম্প ভবিষ্যদ্বাণী করেন একটি চুক্তি ‘খুব কাছাকাছি’ এবং এ সপ্তাহেই তা হতে পারে। নেতানিয়াহুও বলেন, তার এই সফর কাতারে চলমান আলোচনাকে আরও এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে। তবে আলোচনার পথে বেশ কিছু বড় বাধা রয়েছে। ইসরাইল ও হামাস মূলত দ্বিমত রয়েছে এই চুক্তি কেবল সাময়িক যুদ্ধবিরতি, নাকি পূর্ণ যুদ্ধ সমাপ্তির পথ খুলে দেবে তা নিয়ে। হামাসের শীর্ষ নেতারা ইসরাইলি হামলায় নিহত হওয়ায় সংগঠনটি এখন নতুন নেতা ইজ্জুদ্দিন আল-হাদিদের অধীনে। তিনি বলেন, ইসরাইলের সেনা পুরোপুরি গাজা থেকে সরে না যাওয়া পর্যন্ত সকল জিম্মিকে মুক্তি দেয়া হবে না। নেতানিয়াহু আবারও দাবি করেছেন, হামাসকে পুরোপুরি বিলুপ্ত, অস্ত্রহীন ও নির্বাসিত হতে হবে। তবে তার এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে হামাস।
যখন তাকে প্রশ্ন করা হয়, ইসরাইল কি এমন কোনো শান্তিচুক্তি চায় যা পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের সুযোগ দেবে না, তখন নেতানিয়াহু বলেন, আমরা আমাদের ফিলিস্তিনি প্রতিবেশীদের সঙ্গে শান্তি স্থাপন করব- যারা আমাদের ধ্বংস করতে চায় না। আমাদের নিরাপত্তা ও সার্বভৌম ক্ষমতা আমাদের হাতেই থাকবে। কেউ যদি বলে, ‘এটি একটি পূর্ণ রাষ্ট্র নয়’, তাহলে আমরা বলব, আমরা পাত্তা দিই না।

এই সংঘাতে ইতিমধ্যেই ৫৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। হাজার হাজার গুরুতর আহত। অসংখ্য মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন। তারা মারা গেছেন বলে ধরে নেয়া হয়। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় প্রায় ১২০০ ইসরাইলি ও বিদেশি নাগরিক নিহত হয়। প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করে হামাস। এর পরেই গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরাইল। একইসঙ্গে ওই অঞ্চলে উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়, যখন ইরানের পরমাণু কর্মসূচি পুনরায় শুরু হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। সোমবার ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর বৈঠকের ঠিক কয়েক ঘণ্টা আগে, ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের ওপর বিমান হামলা চালায় ইসরাইল। হুতি বিদ্রোহীরা একদিন আগেই একটি লাইবেরিয়ায়-নিবন্ধিত পণ্যবাহী জাহাজে ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র ও গ্রেনেড হামলা চালায়। এর ফলে ২২ জন ক্রু জাহাজ পরিত্যাগ করতে বাধ্য হন।

ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানায়, তারা হোদাইদা, রাস ইসা ও সালিফ বন্দরে এবং রাস কানাতিব বিদ্যুৎকেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে। এগুলো হুতিদের অস্ত্র পরিবহনের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল। ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ এক্সে লিখেছেন, তেহরানের ভাগ্যই ইয়েমেনের ভাগ্য। এটা ইঙ্গিত করে যে হুতিরাও ইরানের মতোই আক্রমণের মুখে পড়বে। এছাড়া সোমবার গাজার উত্তরে একটি বিস্ফোরণে ৬ জন ইসরাইলি সেনা নিহত ও কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। 

এটি ছিল জানুয়ারিতে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শুরুর পর নেতানিয়াহুর তৃতীয় হোয়াইট হাউস সফর, যা বিশ্বের অন্য কোনো নেতার চেয়ে বেশি। নৈশভোজের আগে স্টিভ উইটকফ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে বৈঠক করেন নেতানিয়াহু। মঙ্গলবার তার হাউস স্পিকার মাইক জনসনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে। ওদিকে নেতানিয়াহুর সফরের বিরুদ্ধে হোয়াইট হাউজের বাইরে প্রায় দু’ডজন বিক্ষোভকারী গাজায় হামলার প্রতিবাদে অবস্থান নেন। এ সময় তারা নানা রকম স্লোগান দেন। লেভিট বলেন, নেতানিয়াহু বিশ্বাস করেন, এই অঞ্চল শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে যেতে পারে। তবে এর জন্য যুদ্ধ থামানো, জিম্মিদের মুক্তি এবং হামাসের সম্মতি প্রয়োজন।

নৈশভোজে আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল ইসরাইল-সিরিয়া সম্পর্ক এবং আব্রাহাম অ্যাকর্ডস সম্প্রসারণ। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ইসরাইল ও কয়েকটি আরব দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করা হয় এই চুক্তিতে। গত মাসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সিরিয়ার উপর দীর্ঘদিনের মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন, যাতে সিরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারাকে দেশ পুনর্গঠনের সুযোগ দেয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলেছেন, সিরিয়া ও ইসরাইলের মধ্যে সীমান্ত উত্তেজনা হ্রাস করার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা চলছে। নেতানিয়াহু বলেন, ইসরাইল ছাড়ার আগে তার মনে হয়েছিল, শান্তির বৃত্ত সম্প্রসারণের সুযোগ এখন আমাদের কল্পনার চেয়েও অনেক বড়।
 

পাঠকের মতামত

Joke of the century .

Fazle Ahmed
৮ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ১:৪৩ অপরাহ্ন

ফিলিস্তিনিদের নিজ জন্মভুমি থেকে সরিয়ে অন্য দেশে পাঠানো হবে আর গাজায় নির্মিত হবে আমেরিকার টুরিস্ট রিসোর্ট - বাহ কি চমৎকার ভাবনা !!!

কাজী মুস্তাফা কামাল
৮ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ১১:৪৭ পূর্বাহ্ন

বিশ্বজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বিশ্বজমিন সর্বাধিক পঠিত

রাশিয়ার নিরাপত্তা কাউন্সিলের ডেপুটি চেয়ারম্যান/ একাধিক দেশ ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র দিতে প্রস্তুত

নেতানিয়াহুর ভূয়সী প্রশংসা করলেন ট্রাম্প/ ইরানের ৩ পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলা

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status