দেশ বিদেশ
অপারেশন সিঁদুর কি পেলো!
মানবজমিন ডেস্ক
৯ মে ২০২৫, শুক্রবার
অপারেশন সিঁদুর। মঙ্গলবার মধ্যরাতের পর গর্জে উঠলো ভারতের যুদ্ধবিমান। একের পর এক টার্গেটে হামলা চালাতে লাগলো। তাতে পাকিস্তানে ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীরে কমপক্ষে ৩১ জন নিহত হয়েছেন। ধ্বংস হয়েছে বেশ কিছু স্থাপনা। এসব টার্গেটে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে মসজিদ ও বাড়িঘর। কেন এই হামলা চালালো ভারত? এ প্রশ্নের জবাবে অনলাইন বিবিসি লিখেছে, ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অপারেশন সিঁদুর নামে এই হামলাগুলো ২২শে এপ্রিল ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার জন্য দায়ীদের ‘জবাবদিহি’ করার প্রতিশ্রুতির অংশ। এই হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে পাকিস্তান। এর জবাবে ভারত যে হামলা চালিয়েছে তাকে ‘বিনা উস্কানিতে’ করা হয়েছে বলে বর্ণনা করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ। তিনি বলেছেন- এই জঘন্য আগ্রাসনের শাস্তি থেকে অব্যাহতি পাবে না। বুধবার তিনি বলেন, পেহেলগাম হামলার সঙ্গে পাকিস্তান সম্পর্কিত নয়। তার দেশকে ভুল কারণে অভিযুক্ত করা হয়েছে। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে হামলায় কমপক্ষে ৩১ জন নিহত এবং ৫৭ জন আহত হয়েছেন। ভারতীয় সেনাবাহিনী জানিয়েছে, সীমান্তে তাদের পাশে পাকিস্তানি গোলাগুলিতে কমপক্ষে ১৫ জন বেসামরিক লোক নিহত এবং ৪৩ জন আহত হয়েছেন। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা পাঁচটি ভারতীয় বিমান এবং একটি ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করেছে। ভারত এই দাবির কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। এর প্রেক্ষিতে বুধবার রাতে শরীফ বলেন, বিমান বাহিনী তাদের প্রতিহত করেছে- যা ছিল ‘আমাদের পক্ষ থেকে তাদের প্রতি একটি জবাব’।
ভারত কোথায় আঘাত করেছিল?
বুধবার ভোরে দিল্লি জানিয়েছে, পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীর এবং পাকিস্তান উভয় স্থানেই নয়টি ভিন্ন স্থান টার্গেট করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এই স্থানগুলো ‘সন্ত্রাসী অবকাঠামো’। এসব স্থানে হামলা পরিকল্পিত এবং নির্দেশিত ছিল।
তারা জোর দিয়ে বলেছে, পাকিস্তানি কোনো সামরিক স্থাপনায় আঘাত করেনি ভারত। হামলার প্রাথমিক পর্যায়ে পাকিস্তান বলেছে, তিনটি ভিন্ন এলাকায় হামলা চালানো হয়েছে। তা হলো- পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরের মুজাফ্ফরাবাদ ও কোটলি এবং পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের ভাওয়ালপুর। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আইএসপিআরের মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী পরে বলেছেন, ছয়টি স্থানে হামলা চালানো হয়েছে। বুধবার ভোরে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ জিওটিভিকে বলেন, বেসামরিক এলাকায় হামলা চালানো হয়েছে, তিনি আরও বলেন, ভারত যে ‘সন্ত্রাসী শিবির লক্ষ্যবস্তু’ করার দাবি করেছে, তা মিথ্যা।
ভারত কেন আক্রমণ শুরু করলো?
মনোরম রিসোর্ট শহর পেহেলগামে গুলিবর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পারমাণবিক অস্ত্রধারী প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে কয়েক সপ্তাহ ধরে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার পর এই হামলা চালানো হয়েছে। ২২শে এপ্রিল একদল সন্ত্রাসীর হামলায় ২৬ জন নিহত হন। দুই দশকের মধ্যে এই অঞ্চলে বেসামরিক নাগরিকদের উপর এটি ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ আক্রমণ। ২০১৯ সালে ভারত ৩৭০ ধারা বাতিল করার পর থেকে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর এটিই প্রথম বড় আক্রমণ। ৩৭০ ধারায় কাশ্মীরকে স্বায়ত্তশাসন দেয়া হয়েছিল। তা বাতিলের সিদ্ধান্তের পর, এ অঞ্চলে বিক্ষোভ দেখা দেয়। কিন্তু উগ্রপন্থা হ্রাস পায়। পর্যটকদের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। সেখানে হত্যাকাণ্ড ভারতে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দেয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, দেশটি ‘পৃথিবীর শেষ প্রান্ত পর্যন্ত’ সন্দেহভাজনদের খুঁজে বের করবে এবং যারা এটি পরিকল্পনা করেছে এবং বাস্তবায়ন করেছে তাদেরকে ‘তাদের কল্পনার বাইরেও শাস্তি দেয়া হবে’। তবে, ভারত প্রাথমিকভাবে পেহেলগামে হামলার পেছনে কোনো গোষ্ঠীর হাত আছে বলে মনে করেনি।
কিন্তু ভারতীয় পুলিশ অভিযোগ করেছে, হামলাকারীদের মধ্যে দু’জন পাকিস্তানি নাগরিক। দিল্লি অভিযোগ করেছে, পাকিস্তান এসব উগ্রপন্থিদের মদত দিচ্ছে। ইসলামাবাদ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারা বলেছে, ২২শে এপ্রিলের হামলার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। ৭ই মে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি বলেন, পাকিস্তান-ভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়বা গোষ্ঠী এই হামলা চালিয়েছে। এরপর থেকে দুই সপ্তাহে উভয় পক্ষ একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে কূটনীতিকদের বহিষ্কার, ভিসা স্থগিত করা এবং সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ করা। কিন্তু অনেকেই আশা করেছিলেন, এটি সীমান্ত পার হয়ে কোনো ধরনের হামলার দিকে এগিয়ে যাবে। ২০১৯ সালে পুলওয়ামা হামলার পরে এমনটা দেখা গেছে।
কাশ্মীর কেন দ্বন্দ্বের কেন্দ্রে?
ভারত ও পাকিস্তান উভয়েই পুরো কাশ্মীরের মালিকানা দাবি করে। কিন্তু ১৯৪৭ সালে বৃটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতার পর বিভক্ত হওয়ার পর থেকে উভয় দেশই কেবল আংশিকভাবে এর শাসন করে। তারা এ নিয়ে দুটি যুদ্ধ করেছে। কিন্তু সম্প্রতি সন্ত্রাসী আক্রমণ দু’টি দেশকে যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে। ভারত-শাসিত কাশ্মীরে ১৯৮৯ সাল থেকে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ চলছে। সেখানে উগ্রপন্থিরা নিরাপত্তা বাহিনী এবং বেসামরিক নাগরিক উভয়কেই লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে। ২০১৬ সালে উরিতে ১৯ জন ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার পর ভারত নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে ‘জঙ্গি ঘাঁটি’ লক্ষ্য করে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক শুরু করে। ২০১৯ সালে পুলওয়ামায় বোমা হামলায় ৪০ জন ভারতীয় আধা-সামরিক সদস্য নিহত হন। তার ফলে বালাকোটের গভীরে বিমান হামলা চালানো হয়। ১৯৭১ সালের পর পাকিস্তানের অভ্যন্তরে হামলার পর এটিই প্রথম এ ধরনের অভিযান।