খেলা
কোন পথে দেশের ক্রিকেট
চোখ বিসিবি’র ‘চেয়ারে,’ বলি মাঠের খেলা
ইশতিয়াক পারভেজ
২১ মে ২০২৫, বুধবার
শারজাহ মরুভূমিতে রূপকথার রাত নেমে আসে আরব আমিরাত ক্রিকেটে। টি-টোয়েন্টিত প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলুড়ে বাংলাদেশকে হারিয়ে দিয়েছে দলটি। সেটাও তাদের ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২০৫ রান তাড়া করে। এই প্রথম দুইশ’ রানের লক্ষ্য দিয়ে হারলো কোনো ম্যাচে টাইগাররাও। এ হারে স্তব্ধ দেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা। অবশ্য অবাক হওয়ার মতো ঘটনাও নয়। এমন হারের অনেক লজ্জা জুটেছে দেশের ক্রিকেটের ভাগ্য ললাটে। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে হারটি এখনো তরতাজা ক্ষত। গেল কয়েক বছরে এদেশের ক্রিকেটের সাফল্যের গ্রাফটা হয়েছে নিম্নমুখী। সবশেষ নিজেদের অন্যতম শক্তির জায়গা ওয়ানডে ক্রিকেটেও নেমেছে ধস। ৬ নম্বরে উঠে আসা দলটি ফিরেছে নিজেদের পুরনো অবস্থান ১০-এ। কিন্তু কেন দিনদিন এমন পতন! বোদ্ধারা মনে করেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) রাজনীতির বলি হচ্ছে মাঠের ক্রিকেট। ৫ই আগস্ট দেশে ঐতিহাসিক পালাবদলের পর আশা জেগেছিল নতুন করে। কিন্তু গেল ৯ মাসেও সেটি দেখা মিলেনি! কারণ এখনো নোংরা রাজনীতি থেকে বের হতে পারেনি দেশের ক্রিকেট। বেশির ভাগেরই চোখ বিসিবি চেয়ারে। নয়া সভাপতি ফারুক আহমেদেরও নড়বড়ে অবস্থা। তাকে দিন বদলের স্বপ্ন নিয়ে দায়িত্ব দেয়া হলেও তিনি ঝেড়ে ফেলতে পারেননি পুরনো জঞ্জাল। ক্রিকেট সংগঠক লুৎফর রহমান বাদল এমনটাই মনে করেন। দৈনিক মানবজমিনকে তিনি বলেন, ‘ক্রিকেটের সাফল্য হাতছাড়া তো হবেই। এখনো বিসিবি গেল ১৬ বছরের জঞ্জাল থেকে বের হতে পারেনি। মাথা (বিসিবি সভাপতি) পরিবর্তন হলেও এখনো রন্ধ্রে রন্ধ্রে রয়ে গেছে ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রতিনিধিরা। নিজেদের পছন্দমতো দল নির্বাচন করতে গিয়ে পাইপ লাইনে যে শূন্যতা তৈরি করে রেখে গেছে সেটিরই প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বাজেভাবে।’
২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপ থেকেই দেশের ক্রিকেটের সাফল্য যাত্রা উল্টোমুখী হতে শুরু করে। দলের ব্যর্থতার সঙ্গে তখন থেকেই প্রকাশ্যে আসে বিসিবি’র সঙ্গে ক্রিকেটারদের দূরত্বের বিষয়টি। শুধু তাই নয় জাতীয় দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলও ভয়ঙ্কর রূপ নেয়। সামনে চলে আসে চন্ডিকা হাথুরুসিংহে, সাকিব ও তামিমের দ্বন্দ্বের মধ্যদিয়ে। যার বাজে প্রভাব পড়ে ভারতের ওয়ানডে বিশ্বকাপে। ৯ ম্যাচে প্রাপ্তী মাত্র ২ জয়। কোনোরকম শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে অষ্টম দল হিসেবে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলার সুযোগ টিকে থাকে। এরপর নামতে নামতে এ বছর আবারো আইসিসি র্যাঙ্কিংয়ে টাইগারদের অবস্থান ১০-এ। কেন পাইপ লাইনে এমন শূন্যতা আর মাঠের ক্রিকেটে বিষবাষ্প? এ নিয়ে লুৎফর রহমান বাদল বলেন, ‘দেখেন গেল ১৬ বছর ক্রিকেটের নির্বাচক, কোচিং এই সবই নিয়ন্ত্রণ করতেন দুই-একজন পরিচালক। দল নির্বাচনে নিজেদের ক্লাবের ক্রিকেটারদের প্রাধান্য দেয়াই ছিল মূল লক্ষ্য। একজন পরিচালককেই দেখা গেছে অনেক দায়িত্বে। আপনারা লক্ষ্য করে দেখবেন আমাদের সময় যে ক্রিকেটাররা উঠে এসেছিল সেই মাশরাফি, সাকিব, তামিমরাই লম্বা সময় সার্ভিস দিয়ে এসেছে। নতুন করে তাদের বিকল্প তৈরি হয়নি। বিসিবি যারা চালিয়েছেন তাদের নজিরবিহীন দুর্নীতিতে পথ হারিয়েছে হারিয়েছে ক্রিকেট।’
গেল বছর গণআন্দোলনে দেশের সরকার পরিবর্তনের পর ক্রিকেটকে নতুন করে পথ দেখাতে সভাপতি হয়ে আসেন সাবেক ক্রিকেটার ফারুক আহমেদ। কিন্তু ৯ মাসে যে পরিস্থিতিতে নানা ইস্যুতে উঠেছে তাদের দিকে ব্যর্থতার আঙ্গুল। যতটা না মাঠের ক্রিকেট, তার চেয়ে বেশি আলোচনায় বিসিবি ‘সভাপতি পদ’। চারদিকে গুঞ্জন তার (ফারুক) পরিবর্তে সভাপতি হতে পারেন সদ্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলা তামিম। এ ছাড়াও শোনা যাচ্ছে কুতুবুদ্দিন আহমেদের নামও। সবশেষ চমক বিসিবি সভাপতি হতে পারেন দেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান আমিনুল ইসলাম বুলবুল। এমন পরিস্থিতিকে বাজে চর্চা বলে মনে করেন লুৎফর রহমান। তিনি বলেন, ‘দেশের ক্রিকেট এখনো পুরনো জঞ্জাল মুক্ত হয়নি। মাত্র ১০ জন পরিচালক নিয়ে চলছে ক্রিকেট বোর্ড। এখন যে পরিস্থিতি তার জন্য নয়া সভাপতি ফারুক দায় এড়াতে পারবেন না। তিনি চেষ্টা করছেন কিন্তু তাকে তো সহযোগিতা করার মতো কেউ নেই। উচিত ছিল দেশের সত্যিকারের ক্রিকেট প্রেমীদের নিয়ে এডহক কমিটি গঠন করা। আমি মনে করি আগে মাঠের ক্রিকেটকে না রক্ষা করে সভাপতি কে হবে, কে কোন চেয়ারে বসবেন, নির্বাচন কি হবে? তা আলোচনা একেবারেই বাজে চর্চা।’ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে যারা সভাপতি হিসেবে এসেছেন তাদের কোনো না কোনো কমতি ছিল। যেমন আ হ ম মোস্তাফা কামাল, নাজমুল হাসান পাপন তারা প্রশাসন চালাতে সক্ষম হলেও মাঠের ক্রিকেটার ছিলেন না। আবার বর্তমান সভাপতি ফারুক মাঠের ক্রিকেটার হলেও চালানোর মতো অভিজ্ঞতা তার নেই। তাহলে কেমন সভাপতি দেশকে দেখাতে পারবেন সঠিক পথ! বাদল বলেন, ‘এটি আমার ব্যক্তিগত মতামত দেশের ক্রিকেটের অভিভাবক যে হবেন তাকে মাঠের ক্রিকেটাও বুঝতে হবে, প্রাশাসন চালানোর অভিজ্ঞতাও থাকতে হবে আবার থাকতে হবে সৎভাবে ক্রিকেটে উন্নতি বিলিয়ে দেয়ার মানসিকতা। তাহলে ক্রিকেটের পরিবর্তন আসা সম্ভব।’