খেলা
বিপিএলের পাওনা নিয়ে বাড়ছে হতাশা
দুর্বার রাজশাহীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন মোহাম্মদ হারিস
ইশতিয়াক পারভেজ
২৬ মে ২০২৫, সোমবার
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের ইতিহাস বদলে দেয়ার ওয়াদা করেছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নয়া সভাপতি ফারুক আহমেদ। কিন্তু বিপিএলের ১১তম আসর মাটিতে নামিয়ে এনেছে বিসিবি’র সুনাম। পূর্বের আসরগুলোতে ফিক্সিংয়ের কিছু অভিযোগ থাকলেও সেগুলো প্রমাণিত হয়নি। কিন্তু এবার তা মহামারি আকার ধারণ করেছে। এরই মধ্যে স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করে চলছে তদন্ত। অন্যদিকে আগের ১০ আসরের মতো এবারো ক্রিকেটাররা এখনো বুঝে পায়নি তাদের সম্মানী। বেশির ভাগ দলই এখন পর্যন্ত তাদের পাওনা টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ। চ্যাম্পিয়ান দল ফরচুন বরিশাল ছাড়া বাকি ছয় দলের ক্রিকেটাররা এখনো পাওনা টাকা বুঝে পায়নি বলে জানা গেছে। এর মধ্যে বিপিএলের এবারের আসরকে কলুষিত করা দল দুর্বার রাহশাহী ও চিটাগং কিংস দেশি-বিদেশি ক্রিকেটারসহ ম্যানেজম্যান্টের শতভাগ টাকা বুঝিয়ে দেয়নি।
বিসিবি ও বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের নিয়ম অনুসারে শতভাগ পাওনা পরিশোধের শেষ সময় ছিল ৮ই মার্চ। কিন্তু প্রায় তিন মাস অতিবাহিত হলেও এখনো এই দুটি দল পাওনা পরিশোধ করেনি। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বিষয় হলো বর্তমানে দুর্বার রাজশাহীর মালিক শফিকুর রহমান ধরাছোঁয়ার বাইরে। এরই মধ্যে দলটির পাকিস্তানি ক্রিকেটার মোহাম্মদ হারিস দৈনিক মানবজমিনকে জানিয়েছেন তিনি কড়া ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। জানাবেন চিঠি দিয়েও। পাকিস্তান থেকে মুঠোফোনে মোহাম্মদ হারিস বলেন, ‘তিন মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো আমি ৭৫ শতাংশ অর্থ পাইনি। দলটির কারো সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। আমি বিসিবিকে বিষয়টি জানানোর পাশাপাশি কঠিন ব্যবস্থা নিবো।’ জানা গেছে ৮ই মার্চ বিসিবি’র বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে ১০০% টাকা পরিশোধ করার কথা ছিল দুর্বার রাজশাহীর। সেই সময় দলটির পক্ষ থেকে কোনোরকমে একটা ইমেইল করে এক মাস সময় বাড়াতে চায় তারা, কিন্তু বিসিবি সাড়া দেয়নি সেই ইমেইলে। এরপরও সেই ইমেইল অনুযায়ী ৮ই এপ্রিলের মধ্যে নিজেদের বকেয়া টাকা পরিশোধের কথা ছিল রাজশাহী কর্তৃপক্ষের। কিন্তু, টাকা তারা শোধ করেনি, উপরন্তু ৮ই এপ্রিলের পর থেকে সকলের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে দায়িত্বরতরা।
পাওয়া যাচ্ছে না দলটির মালিক শফিকুর রহমান ও ম্যানেজার মেহরাব হোসেন অপি ও অপারেশন ইনচার্জ জায়েদ আহমেদকে। এখন পর্যন্ত দেশি ক্রিকেটারদের ২৫, বিদেশি ক্রিকেটারদের পাওনা ৭৫ টিম ম্যানেজমেন্টের পাওনা ৬০ ও টিমবয়দের পাওনা ৫০ শতাংশ টাকা। গেল ঈদুল ফিতরের আগে দলটির মালিকপক্ষ ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে টাকার জন্য বার বার যোগাযোগ করা হলেও কেউ সাড়া দেয়নি। এমনকি ঈদুল আজহার আর ১০ দিন বাকি থাকলেও দলটির কাউকে খুঁজে পাচ্ছে না ক্রিকেটারসহ টিম ম্যানেজম্যান্টের কেউই। অন্যদিকে চিটাগং কিংসের পাওনা পরিশোধ করছে বিসিবি। দলটি আসরের রানার্স আপ হয়েছে। বিপিএল থেকে সেই সুবাদে তাদের প্রাইজমানি পাওনা ছিল দেড় কোটি টাকা। বিসিবি সেটি এই ফ্র্যাঞ্জাইজি মালিককে না দিয়ে ক্রিকেটারদের টাকা পরিশোধ করছে বলে জানিয়েছে বিসিবি’র একটি সূত্র। তবে এখনো ক্রিকেটারদের শতভাগ পাওনা মেটানো সম্ভব হয়নি বলেই জানিয়েছে সূত্রটি। এছাড়াও এবার প্রতিটি দলের সঙ্গে বিসিবি টিকিট থেকে পাওয়া লভ্যাংশ শেয়ার করেছে। যার পরিমান ৪৫ লাখ টাকা। তবে বিসিবি সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই টাকা থেকেই যতটা সম্ভব ক্রিকেটারদের পরিশোধ করে দেয়া হবে। কিন্তু ঝামেলা হয়েছে কিংস ও রাজশাহীর পাওনা এতটাই যে এখান থেকেও তা পরিশোধ করা কঠিন হয়ে যাবে।
ফরচুন বরিশালের মিডিয়া ম্যানেজার সিকান্দার আলী জানিয়েছেন তারা ক্রিকেটার থেকে ম্যানেজম্যান্টসহ সকলেরই শতভাগ টাকা পরিশোধ করেছেন। তিনি বলেন, ‘ফরচুন বরিশালের সবশেষ আসরের কোনো পাওনাই আর বাকি নেই। দলটির সবার টাকাই শতভাগ পরিশোধ করে দিয়েছে।’ এখনো পুরো টাকা পরিশোধ করেনি রংপুর রাইডার্স, খুলনা টাইগার্স, ঢাকা ক্যাপিটালস, সিলেট স্ট্রাইকার্স, চিটাগং কিংস ও দুর্বার রাজশাহী। এর মধ্যে শুধু রাজশাহীর ফ্র্যাঞ্জাইজি মালিক লাপাত্তা। একটি সূত্রে জানা গেছে, বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল ও বিসিবি’র পক্ষ থেকে বার বার যোগাযোগ করা করা হলেও দলটির মালিক ও অপারেশন ইনচার্জের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে ক্রিকেট বিশ্লেষকরা মনে করেন দলগুলোর পাওনা পরিশোধে এমন গড়িমসি ও ঘাপলার দায় এড়াতে পারে না বিসিবি। কারণ, তারাই দল বাছাইয়ের ক্ষেত্রে দিয়েছে দুর্বলতার পরিচয়। বিশেষ করে রাজশাহীর মালিকানা নিয়ে আছে নানা অভিযোগ যা নিয়ে বিসিবি ও বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল এখন প্রশ্নবিদ্ধ।