ঢাকা, ২ জুন ২০২৫, সোমবার, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৪ জিলহজ্জ ১৪৪৬ হিঃ

বাংলারজমিন

সিলেট চেম্বারে বিরোধ তুঙ্গে

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
২৯ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার

সিলেট চেম্বার নিয়ে ব্যবসায়ীদের দ্বন্দ্ব ফের তুঙ্গে। একপক্ষ বর্তমান পরিষদ ভেঙে নতুন করে নির্বাচন চাইছে। অপরপক্ষ চাইছে; বর্তমান পরিষদকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব পালনের সুযোগ দিতে। এ নিয়ে শুরু হয়েছে আইনি লড়াই। আদালতের নির্দেশে প্রশাসক বসেছেন চেম্বারে। তবে এতে চলমান সংকট দূর হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা জানান- বর্তমান পরিষদের নেতারা আদালতের মাধ্যমে চেম্বারের কর্তৃত্ব ফিরে পেতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। সিলেট চেম্বার হচ্ছে সিলেট অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন। সব মত ও পথের ব্যবসায়ীদের সংমিশ্রণ রয়েছে চেম্বারে। ২০২৪ সালের ২০শে জানুয়ারি সিলেট চেম্বারের বর্তমান পরিষদ বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছিল। বলা হয়; ‘কম্প্রমাইজ’ ইলেকশনে সিলেকশনে পরিচালক পর্যদ নির্বাচিত হন। এই পদ্ধতি গ্রহণ করেননি অনেক ব্যবসায়ী। তারা জানিয়েছেন; বিনা ভোটে সিলেট চেম্বারের পরিচালক সিলেকশনের ঘটনা গেল বার প্রথমই হয়েছে। এতে ব্যবসায়ীদের ভোটের অধিকার হরণ করা হয়েছে। এতে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন সাবেক সভাপতি তাহমিন আহমদ। ৫ই আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর সিলেট চেম্বারে সংকট দেখা দেয়। চেম্বার সভাপতি ও আওয়ামী লীগ নেতা তাহমিন আহমদ মামলার আসামি হওয়ায় তিনি চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর পরিচালনা পর্ষদ বসে মুজিবুর রহমান মিন্টুকে সভাপতি নির্বাচিত করেন।

 এই অবস্থায় চেম্বারে বর্তমান পরিষদকে অবৈধ ঘোষণা করে আন্দোলনে নামেন ব্যবসায়ীরা। এতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি, সিলেট ও মহানগর ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা। আন্দোলনের একপর্যায়ে তারা আল্টিমেটামও দেন। পরে অবশ্য রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়। এই অবস্থায় তিন মাস চলার পর আমেরিকা চলে যান চেম্বারের সভাপতি মুজিবুর রহমান মিন্টু। তার স্থলাভিষিক্ত হিসেবে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হন ফয়েজ হাসান ফেরদৌস। এ সময় বিএনপি নেতা আব্দুস সামাদ তুহেলকে সিনিয়র সহ-সভাপতি করা হয়। এদিকে- বর্তমান পরিষদকে অবৈধ ঘোষণা করতে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন বিক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য হাইকোর্ট চেম্বারে প্রশাসক নিয়োগের নির্দেশ দেন। জেলা প্রশাসক থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফারজাহানা আক্তার মিতাকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু প্রশাসক বসতে না বসতেই উচ্চ আদালতের আরেক আদেশে বর্তমান পরিচালনা বডি চেম্বারের কর্তৃত্ব নেন। এদিকে- এই অবস্থা চলমান থাকা কালে আমেরিকা থেকে সিলেটে আসেন সাবেক সভাপতি মুজিবুর রহমান মিন্টু। তিনি ফের চেম্বারের সভাপতির দায়িত্ব নেন। ওদিকে- আদালতের লড়াইয়ে চেম্বারের পরিচালনা পর্যদের বাইরে থাকা ব্যবসায়ী নেতারা প্রশাসক নিয়োগের ব্যাপারে আদেশ পান। আদালতের আদেশে গত ২১শে মে সিলেট চেম্বারের প্রশাসকের দায়িত্ব নেন পূর্বের প্রশাসক অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। বর্তমানে তিনি এ দায়িত্ব পালন করছেন। তবে আদালতের আইনি লড়াই শেষ হয়নি।

 বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের নেতারা চেম্বারে নিজেদের কর্তৃত্ব নিতে চেম্বার জজ আদালতে আপিল করেছে। আগামী সপ্তাহে তাদের আপিলের শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। সিলেট চেম্বারের বর্তমান পরিষদের বিরুদ্ধে মাঠে আন্দোলনে রয়েছেন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি সিলেট জেলা সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান রিপন। তিনি সহ ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ গত মঙ্গলবার চেম্বার প্রশাসকের কাছে কয়েকটি দাবি উপস্থাপন করে স্মারকলিপি দিয়েছেন। সিলেট চেম্বারের আসন্ন নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক করার দাবি জানিয়ে এ স্মারকলিপি দেয়া হয়। স্মারকলিপিতে চেম্বার নির্বাচন বিষয়ে ৪ দফা প্রস্তাবনা উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রস্তাবের মধ্য রয়েছে- বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে অবৈধভাবে সাধারণ সদস্যদের ভোটাধিকার খর্ব করে গঠিত সিলেট চেম্বারের পরিচলনা পর্ষদ কর্তৃক তাদের ইচ্ছেমতো বিধিবহির্র্ভূতভাবে যে সকল সদস্য নিবন্ধিত করেছে তা যাচাই-বাছাই করে বাতিল করা। বিদায়ী অনির্বাচিত পরিষদ বিগত দিনে প্রকৃত ও ভালো ব্যবসায়ীদের চেম্বারের সদস্য করেনি দাবি করে তারা বলেন- প্রকৃত ব্যবসায়ী যাতে চেম্বারের সদস্য হয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে চেম্বারের প্রতিনিধি-পরিচালক নির্বাচন করতে পারে সে বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। 

বিগত সময়ে যে পর্ষদ চেম্বারের দায়িত্বে ছিল তারা যথাযথ প্রক্রিয়ায় কোনো বার্ষিক সাধারণ সভা করেনি এবং যথাযথ অডিটও হয়নি- এই বিষয়ে যথাযথ গুরুত্বারোপ করা। বিদ্যমান পরিস্তিতিতে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাদের মতামত গ্রহণক্রমে চেম্বারের সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনা করা। ব্যবসায়ী নেতা আব্দুর রহমান রিপন জানিয়েছেন- সিলেটের ব্যবসায়ীদের ন্যায্য অধিকার ও স্বার্থরক্ষায় একটি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক চেম্বার পরিচালনা পর্ষদ গঠন জরুরি। আমরা আশা করি প্রশাসক সিলেটের সর্বস্তরের ব্যবসায়ীদের দাবিগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবেন। প্রশাসকও আশ্বস্ত করেছে তিনি এসব বিষয় নিয়ে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলবেন। ব্যবসায়ী নেতারা জানিয়েছেন- এখনো চেম্বারের পরিচালক পদে একাধিক মামলার আসামিরা রয়েছে। তারাই পেছন থেকে সব কলকাঠি নাড়ছে। স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা দেবাংশু দাস মিঠু, যুবলীগ নেতা রিমাদ আহমদ রুবেল ও শান্ত দেব সহ আরও দুই জন বর্তমান কমিটিতে বহাল রয়েছেন। তাদের কারণেই সর্বস্তরের ব্যবসায়ীদের আপত্তির দাবি প্রকট হচ্ছে বলে দাবি করেন তারা। বর্তমান পরিষদের নেতারা জানিয়েছেন- চেম্বারের কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করতে বারবার চেষ্টা করা হচ্ছে। চেম্বারকে গতিশীল রাখতে তারা আইনিভাবে পদক্ষেপ নিচ্ছেন। এদিকে সিলেট চেম্বারের সাবেক সভাপতি ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদ জানিয়েছেন- সিলেট চেম্বার একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। বর্তমান পরিষদকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেয়া উচিত। পরিচালনা পর্ষদ নিয়ে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি করা কাম্য নয় বলে দাবি করেন তিনি।  

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status