ঢাকা, ২ জুন ২০২৫, সোমবার, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৪ জিলহজ্জ ১৪৪৬ হিঃ

বাংলারজমিন

মেলার নামে মানুষের পকেট কাটাই বিল্লালের পেশা

স্টাফ রিপোর্টার, কুমিল্লা থেকে
১ জুন ২০২৫, রবিবার
mzamin

কুমিল্লায় কুটির শিল্প ও বাণিজ্যমেলায় লটারির নামে চলছে রমরমা জুয়া। এই উপলক্ষে প্রতিদিন র‌্যাফল ড্র নামে পাঁচটি রঙের ২০ টাকা মূল্যের টিকিট বিক্রি চলছে কুমিল্লার সর্বত্র। মেলা শুরুর প্রথম দিকে মাইকিং করে কুমিল্লা মহানগরসহ বিভিন্ন উপজেলায় টিকেট বিক্রি করলেও এখন পায়ে হেটে নগরীর অলি-গলি, স্কুল-কলেজের সামনে, গ্রামের পাড়া-মহল্লায় ও হাট-বাজারে পুরোদমে চলছে বিক্রি। অবৈধভাবে প্রতিদিন প্রায় অর্ধকোটি টাকার টিকিট বিক্রি হচ্ছে। মোটরসাইকেল, টিভি, ফ্রিজ, ল্যাপটপ, স্বর্ণসহ ছোট-বড় বহু পুরস্কারের চটকদার বিজ্ঞাপনে ক্রেতাদের মনোযোগ আকর্ষণ করা হচ্ছে। প্রকাশ্যে ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরাসরি সমপ্রচার করে তাদের কার্যক্রম পরিচালানা করা হলেও অজ্ঞাত কারণে প্রশাসন নীরব। আর এসবের নেপথ্যে একজনের নাম তিনি বিল্লাল হোসেন। যিনি ৫ই আগস্টের পূর্বে ছিলেন আওয়ামী লীগের এমপি বাহারের কাছাকাছি। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মেলার আয়োজকের নাম বিল্লাল হোসেন। তিনি ৫ই আগস্টের পূর্বে ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা। যেখানেই যেতেন পরিচয় দিতেন আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে। কিন্তু ৫ই আগস্টের পরে বদলেছেন রূপ। তিনি এখন ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দেন। শুধু মেলার নামে মানুষের পকেট কাটাই বিল্লালের কাজ। এভাবেই হয়েছেন কাঁড়ি কাঁড়ি টাকার মালিক। বিভিন্ন সূত্র ও মেলা সংশ্লিষ্ট কয়েকজন জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় কুমিল্লায় যত মেলা হতো সব মেলাই পরিচালনা করতো এই বিল্লাল। তৎকালীন সময় জেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে সরকারের যেকোন প্রতিষ্ঠানের আয়োজনের সব মেলার ঠিকাদার ছিলেন বিল্লাল। ওই সময় সাবেক এমপি বাহারের সাথে তাকে একাধিক মেলার উদ্বোধন করেতও দেখা যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিল্লালের নিকটজনদের অনেকে জানান, বিল্লাল আওয়ামী লীগের আমলে মেলার আয়োজন করে যা পেতেন তা একটি অংশ নেতাকর্মীদের দিতেন। সেজন্য খরচও বেশি দেখাতেন। অনেক কর্মকর্তা মেলার খরচ বৃদ্ধির কথা বললেও পরে সাবেক এমপির ধমকে চুপ হয়ে যেতেন। আর ৫ই আগস্টের পর বিল্লাল সুর বদলেছেন। এখন তিনি স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের পেশিশক্তি ব্যবহার করে মেলার আয়োজন করছেন। এসব মেলার লাভের অংশ দিচ্ছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের। এদিকে পুরস্কারের লোভে লাভের নেশায় সর্বস্বান্ত হচ্ছে নিম্নআয়ের মানুষ। এই নেশায় ধরেছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণীদের। এর প্রভাব পড়েছে শিক্ষার্থীদের পড়া-লেখায়ও। 
গত ২৪ এপ্রিল আনুষ্ঠানিক ভাবে জাঙ্গালীয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মেলার উদ্বোধন হয়। চলবে আগামী ১৪ই জুন পর্যন্ত। দৈনিক ১২-১৫শ’ টাকা হাজিরায় সিটি কপোরেশনসহ জেলাজুড়ে প্রায় ২৫০ কর্মীর মাধ্যমে লটারির টিকেট বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতি কর্মী ৮শ’ থেকে ১ হাজার টিকেট বিক্রি করছেন বলে সূত্র জানিয়েছে। সে হিসেবে একদিনে টিকেট বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০লাখ টাকার। 
দীর্ঘদিন ধরে চলা এই কার্যক্রমে প্রশাসনের নীবর ভূমিকা সাধারণ মানুষের মনে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। তাদের দাবী বাণিজ্য মেলার নামে প্রকাশ্যে জেলা জুড়ে লটারির নামে টিকিটে বিক্রি করে জুয়া খেলা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায়না। এতে নিঃস্ব হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষ। পড়া লেখায় মনোযোগ হারাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। লটারীর নামে জুয়ার আসন বন্ধে দ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন নগরবাসী।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে টিকেট বিক্রেতাদের একজন বলেন, মেলা শুরু থেকে বিভিন্ন স্থানে ২৫০-৩০০ কর্মী লটারির টিকিট বিক্রি করে আসছেন। বিনিময়ে আমাদেরকে ১২-১৫শ’ টাকা হাজিরা দেয়া হয়। টার্গেটের বেশি বিক্রি করতে পারলে বোনাসও দেওয়া হয়। প্রতিজনে গড়ে ৮শ’ থেকে ১ হাজার টিকেট বিক্রি করি। সেই হিসেবে একদিনে টিকিট বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ লাখ টাকার। এ বিষয়ে জানতে বিল্লাল হোসেনকে, একাধিক ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। তাই তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status