ঢাকা, ২ জুন ২০২৫, সোমবার, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৪ জিলহজ্জ ১৪৪৬ হিঃ

দেশ বিদেশ

শেখ হাসিনার শাসনামলে গুমের শিকার ৭৩০ জন

গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের অর্থনৈতিক পুনর্বাসনের দাবি

স্টাফ রিপোর্টার
১ জুন ২০২৫, রবিবার

গুম প্রতিরোধে কার্যকর আইন করা এবং ভবিষ্যতে যেন গুমের সংস্কৃতি ফিরে না আসে সেজন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা। পাশাপাশি গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের অর্থনৈতিক পুনর্বাসনের এবং বাংলাদেশ থেকে গুম হয়ে ভারতে কোনো ব্যক্তি থেকে থাকলে কূটনৈতিকভাবে তাদের ফিরিয়ে আনার দাবিও করেন বক্তারা।
গতকাল সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ এর ব্যানারে গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক সপ্তাহ উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে গুমের শিকার ব্যক্তিদের বিচার ও সন্ধানের দাবিতে বক্তারা সরকারের কাছে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। অধিকারের সভাপতি তাসনিম সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে গুমের শিকার পরিবারের সদস্যরা, সাংবাদিক ফাইজুল হাকিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শরিফুল ইসলাম, সাংবাদিক শহীদুজ্জামান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
আলোচনা সভায় প্রবন্ধ পাঠ করেন অধিকারের জ্যেষ্ঠ গবেষণা কর্মকর্তা তাসনীম ফাহমিনা। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে গুমের তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু হয়। এ সময় থেকে ২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট পর্যন্ত শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে ৭৩০ জন ব্যক্তি গুমের শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে গুমের পর বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ৮৩ জন এবং গুম থেকে ফেরত না আসা ব্যক্তির সংখ্যা ১৬২ জন। তাসনীম ফাহমিনা আলোচনা সভায় অধিকারের পক্ষ থেকে বেশকিছু দাবি তুলে ধরেন। বলেন, গুম প্রতিরোধে কার্যকর আইন প্রণয়ন করা, যে খসড়া করা হয়েছে তাতে জনগণের মতামতকে গুরুত্ব দেয়া, যারা গুম থেকে আর ফেরত আসেননি তাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার সত্য উদ্‌ঘাটন করা এবং ভারতে কোনো গুমের শিকার ব্যক্তি থেকে থাকলে কূটনৈতিকভাবে তাদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা।
এ ছাড়াও তিনি গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারকে অর্থনৈতিক পুনর্বাসনেরও দাবি জানান। ফাহমিনা বলেন, গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের দিকে আমরা তেমন খেয়াল করছি না। কিন্তু গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তির পক্ষে আমরা বিচার চাইছি। তারা এখন ‘ল্যাফট ইনচার্জ এবং ল্যাফট বিহাইন্ড অন্ড’ অর্থাৎ তারা যে দায়িত্ব সমাজের জন্য রেখে গেছেন তা পালন করতে হবে। গুমের শিকার পরিবারের সদস্যরা করুণা চান না। তারা অধিকার চান।
আলোচনা সভায় বিশেষ বক্তা ছিলেন আলোকচিত্রী ও দৃক গ্যালারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল আলম। তিনি বিগত সরকারের আমলে গুম সংক্রান্ত একটি ছবি প্রকাশ করার কারণে তাকে এবং তার প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের র?্যাব কীভাবে হেনস্তা করেছিল তা সভায় তুলে ধরেন। এ ছাড়াও সভায় গুম থেকে ফেরত আসা সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান বলেন, গুমের সব আলামত নষ্ট করে দেয়া হয়েছে। আয়না ঘর ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। কারা করছে এগুলো। ১০ মাসে অন্তর্বর্তী সরকার গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের জন্য কিছুই করেনি।
গুম থেকে ফিরে আসা আহমাদ বিন কাসেম আরমান বলেন, গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা অভাবের কথা মুখ ফুটে বলতে পারেন না। তিনি গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের অর্থনৈতিক পুনর্বাসনের দাবি জানান। বর্তমান সরকার গুম কমিশন গঠন করায় কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘মায়ের ডাক’ সহ বিভিন্ন সংগঠন গুমের ব্যাপারে কথা বলছেন। 
কিন্তু পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিদের হারিয়ে কেমন চলছে তাদের সংসার। তাদের আর্থিক অবস্থার খবর, বাসা ভাড়া, সন্তানের স্কুলের বেতন কি তারা দিতে পারছেন। এসব পরিবারের খবর কি কেউ নিচ্ছেন।
তিনি বলেন, প্রয়োজনে তাদের পুনর্বাসনের জন্য আলাদা কমিশন বা কমিটি গঠন করা হোক। তিনি বলেন, আমার বাসার উপর ছাদ আছে। কিন্তু অনেকের তা নেই। অনেকের প্রিয়জন ফিরে এলেও তাদের অনেকের প্রিয়জন এখনো আসে নাই। অনেকে আছেন যারা ছাত্র অবস্থাতেই গুমের শিকার হয়েছিলেন। তারা এখন চাকরি পাচ্ছেন না। তাদের এখনো ভয় কাটে নাই।
তিনি বলেন, এখনো কথা বলতে আমরা ভয় পাই। ভীতির পরিবেশ এখনো বিদ্যমান। কিছু অংশে বেশি। আমার মূল কথা হলো- যাদের পরিবারের সদস্যরা গুম হয়েছিলেন, কিন্তু এখনো ফিরে আসে নাই তাদের নির্দিষ্ট করে বলা উচিত কি পেয়েছিল তাদের সঙ্গে। যদি সেটা সম্ভব নাও হয়, তাদের পুনর্বাসনে সরকারকে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান জামায়াতের সাবেক কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীর ছেলে আহমাদ বিন কাসেম আরমান।

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status