দেশ বিদেশ
ছাত্রদল নেতা জনিকে গুম ও হত্যা
ট্রাইব্যুনালে সাবের হোসেনসহ ৬২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ
স্টাফ রিপোর্টার
৩০ জুন ২০২৫, সোমবারখিলগাঁও থানা ছাত্রদলের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান জনিকে গুম ও হত্যার অভিযোগে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও এমপি সাবের হোসেন চৌধুরীসহ ৬২ জনের নাম উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে অভিযোগ দেয়া হয়েছে। রোববার সকালে নিহত জনির বাবা ইয়াকুব আলী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে অভিযোগ দায়ের করেন।
এতে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালের ১৯শে জানুয়ারি সকাল আনুমানিক ৮টা ১৫ মিনিটের দিকে নুরুজ্জামান জনি ও তার সহপাঠী মইনসহ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ছোট ভাই মনিরুজ্জামান হীরাকে দেখতে যান। কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ফেরার পথে আসামিরা জনি ও মইনকে ডিবি পরিচয় দিয়ে অবৈধভাবে আটক করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে নির্যাতন চালায়। পরে তাদের ডিবি ঢাকা মেট্রোপলিটন দক্ষিণ কার্যালয়ে নিয়েও নির্যাতন চালানো হয়। বাদীর অভিযোগ- তখন নুরুজ্জামান জনির সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মুনিয়া পারভিনসহ তার মামা ও আত্মীয়স্বজনরা খিলগাঁও থানা, ডিবি দক্ষিণ অফিস, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অফিসসহ বিভিন্ন থানায় খোঁজেন। দু’দিন খোঁজাখুঁজির পরও জনির কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। অভিযোগে আরও বলা হয়, ২০শে জানুয়ারি রাত আনুমানিক ৩টা থেকে সাড়ে ৩টার দিকে খিলগাঁও থানার জোড়াপুকুর খেলার মাঠের আশপাশের মানুষজন এক ব্যক্তির চিৎকার ও আর্তনাদ শুনতে পান। অভিযোগে বলা হয়, নির্যাতনের একপর্যায়ে জনি পানির জন্য এবং বাঁচাও, বাঁচাও বলে চিৎকার করতে থাকেন। ভোর রাতে বাদীসহ সাক্ষী ও প্রতিবেশীরা খিলগাঁও থানার জোড়াপুকুর মাঠের দিকে গিয়ে পুলিশের উপস্থিতি দেখতে পান দাবি করে। তারা বলেন, নুরুজ্জামান জনি পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। তার মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। পরে বাদী ও সাক্ষীরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে যান এবং সেখানে গিয়ে দেখতে পান নুরুজ্জামানের বুকের বামে, ডান দিকে, দুই হাতের তালুতে ১৬টি গুলির চিহ্ন। তার পুরো শরীর গুলিতে ঝাঁঝরা করে ফেলেছে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। উপস্থিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জিজ্ঞাসা করলে তারা কর্কশ ভাষায় গালিগালাজ করেন। মরদেহ গ্রহণ না করলে মামলা দেয়ার হুমকি দেন বলেও বাদী অভিযোগ করেন।
অভিযোগে বলা হয়, সেদিন পুলিশি হেফাজতে থাকাবস্থায় জনি হাতে হ্যান্ডকাফ পরা ও দড়ি দিয়ে বাঁধা অবস্থায় ছিল। তার কোমরের উপরিভাগে একটি, বুকের মাঝে ৩টি, বুকের ডানপাশে ৩টি সহ মোট ১৬ থেকে ১৭টি গুলির চিহ্ন পাওয়া যায়। এতে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, জনিকে পরিকল্পিতভাবে আসামিদের হেফাজতে নিয়ে শারীরিক নির্যাতন করা হয়। পরবর্তীতে তাকে ক্রসফায়ারের নামে নাটক সাজিয়ে হত্যা করা হয়। নিহত জনির বাবা ইয়াকুব আলী বলেন, আমার ছেলের হত্যার পর আমি থানায় মামলা দিতে গেলে আসামিরা আমাকে মামলা দিতে বাধা দেন। এমনকি মামলা দিলে আমাকেও নির্যাতন করে ছেলের মতো ক্রসফায়ার দেয়া হবে বলে হুমকি দেন। আওয়ামী ফ্যাসিস্টের পতনের পর ২রা সেপ্টেম্বর আমি খিলগাঁও থানায় মামলা দেই। কিন্তু পুলিশ এখনো কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। তাই প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটন ও ন্যায়বিচারের স্বার্থে আমি ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করেছি।