দেশ বিদেশ
পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে- দুদক চেয়ারম্যান
স্টাফ রিপোর্টার
২ জুলাই ২০২৫, বুধবারপদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পে অনিয়মের যথেষ্ট উপাদান ও প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও গায়ের জোরেই অভিযুক্তদের মামলা থেকে দায় মুক্তি দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন। মঙ্গলবার বিকালে সংস্থাটির সেগুনবাগিচা প্রধান কার্যালয়ে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন ।
এক প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, পদ্মা সেতুর পরামর্শক নিয়ে যে বিভ্রান্তি ছিল সেটা নিয়ে মামলা হয়। মামলা উপাদানগুলো সঠিক থাকা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত আদালতে এফআরটি (ফাইনাল রিপোর্ট ট্রু) বা নিষ্পত্তি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
গত ডিসেম্বরে দায়িত্ব নেয়ার পর মামলাটি আবার চালু করা হয় জানিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, দায়িত্ব নেয়ার পর আমরা এটি পুনরায় বিবেচনা করি এবং আমাদের মনে হয় যে, এটা অনেকটা গায়ের জোরে মামলাটা বসিয়ে দেয়া হয়েছে। এই মামলাটিকে পুনরুজ্জীবিত করা প্রয়োজন। এজন্য আমরা নতুন করে তদন্ত শুরু করি।
২০১২ সালে বিশ্ব ব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির আশঙ্কায় অর্থায়ন স্থগিত করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক মহলের চাপের মুখে এসে একই বছরের ১৭ই ডিসেম্বর বনানী থানায় মামলা দায়ের করেন দুদকের তৎকালীন উপ-পরিচালক (বর্তমানে মহাপরিচালক) আবদুল্লাহ আল জাহিদ। মামলায় মোট সাতজনকে আসামি করা হয়। মামলায় আসামিরা হলেন, সেতু বিভাগের সচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, সেতু কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (নদী শাসন) কাজী মো. ফেরদৌস, সওজ-এর নির্বাহী প্রকৌশলী রিয়াজ আহমেদ জাবের, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড প্ল্যানিং কনসালটেন্ট লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং এসএনসি লাভালিনের স্থানীয় প্রতিনিধি মোহাম্মদ মোস্তফা, এসএনসি-লাভালিনের সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ ইসমাইল, আন্তর্জাতিক প্রকল্প বিভাগের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট রমেশ সাহ ও সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কেভিন ওয়ালেস।
মামলার প্রধান আসামি ছিলেন তৎকালীন সেতু বিভাগের সচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। তাকে গ্রেপ্তার করে সাময়িকভাবে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়, তবে পরে তিনি জামিনে মুক্তি পেয়ে পুনরায় চাকরিতে ফিরে আসেন। পদ্মা সেতুর অনিয়ম প্রসঙ্গে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, সরকারি বিধি-বিধান মেনে পিপিএ-পিপিআর পুরোপুরি অনুসরণ করেই কাজ করতে হয়। পিপিএ পিপিআর অনুসরণ করে যে কাজ করার কথা তাতে আমরা যে মূল্যায়ন কমিটি গঠন করি, সেই কমিটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে একাধিকবার পরিবর্তন করা হয়েছে। অসৎ উদ্দেশ্য কিংবা অপরাধপ্রবণতার কারণে এটি করা হয়েছে বলে জানান- দুদক চেয়ারম্যান। তিনি আরও বলেন, বড় প্রকল্প করতে গেলে একই জিনিস অনেকবার ব্যবহার করার সুযোগ থাকে সেক্ষেত্রে যে জিনিস একবার ক্রয় করলে বারবার ব্যবহার করতে পারি সেটা একাধিকবার ক্রয় দেখানো সমীচীন না। এ রকম কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। আমরা যখন যৌথ মূল্যায়ন করি কনসালটেন্টের তাদের যেসব সিভি মূল্যায়ন করার কথা ছিল, সেগুলো সেভাবে করিনি। এখানে অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়েছে। মূল্যায়নের বিভিন্ন জায়গায় পিপিএ-পিপিআর আমরা এভয়েড করেছি।আরও অভিযোগ তুলে ধরে তিনি বলেন, মূল্যায়ন কার্যক্রম চলাকালে মূল্যায়ন কমিটির সদস্যদের যে ম্যান্ডেটরি কিছু সাক্ষাৎ ও অন্যান্য তথ্য গ্রহণ করে পুরোপুরিভাবে বিষয়টি উদ্ঘাটন করা দরকার ছিল সেটা সেভাবে হয়নি।
মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেন, ফলশ্রুতিতে আমরা মনে করি আগের যে প্রতিবেদন বাধ্য হয়ে হোক আর যেভাবেই হোক যে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে সেটি ত্রুটিযুক্ত ও অসম্পূর্ণ। আমার তদন্তকারী কর্মকর্তা একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিবেদন দাখিল করবেন এবং মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হবে।
ওই সময় যারা প্রতিবেদন দিয়েছিল তাদের আবার ডাকা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথমবার যাদের আসামি করা হয়েছিল তাদের মধ্যে সাবেক সচিব মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া, তত্ত্বাবধয়ক প্রকৌশলী কাজী মোহাম্মদ ফেরদৌস, নির্বাহী প্রকৌশলী রিয়াজ আহমেদ জাবের, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোস্তফা, সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ ইসমাইল, এসএনসি লাভালিনের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। এখন তদন্ত করতে গিয়ে আরও নাম এলে তাদের অন্তর্ভুক্ত করবো। আর যদি এর মধ্যে কারও গাফিলতি আমরা পর্যবেক্ষণ করি সেটাকেও আমরা বিবেচনায় আনবো।তিনি বলেন, কমিশন এক ধরনের স্বাধীনতা ভোগ করে। এটা আমরা এক ধরনের ইমিউনিটিও থাকে। সেটা আমাদের বিবেচনায় আনতে হবে। তারপরও আমরা চেষ্টা করবো যদি কমিশনের হাতে কোনো ভ্রান্তি ত্রুটি ব্যত্যয় ঘটে থাকে সেটা শনাক্ত করবো।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে আমরা মনে করছি যে, এফআরটি হওয়াটা ঠিক হয়নি। অথবা আমরা ঠিকভাবে উপস্থাপিত করতে পারিনি। আমরা এখন তদন্ত প্রতিবেদনের উপর অপেক্ষা করবো।