খেলা
প্রেমাদাসায় বোলিং দাপট ‘নতুন বাংলাদেশের’
স্পোর্টস রিপোর্টার, (কলম্বো) শ্রীলঙ্কা থেকে
৩ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার
৩০ হাজার দর্শক আটবে প্রেমাদাসার গ্যালারিতে। কিন্তু বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার ম্যাচে সবমিলিয়ে পাঁচ হাজার দর্শক খুঁজে পাওয়াও কঠিন। কারণ, কলম্বোতে ছুটির দিন নয়। অফিস নিয়ে ব্যস্ত বেশির ভাগ। তবে যারা এসেছেন তাদের চিৎকারে মুখরিত স্টেডিয়াম। নিজের দলকে সমর্থন করছেনই আবার বাংলাদেশ ভালো করলেও করতালি দিয়ে অভিবাদন জানাচ্ছে সবাই। লঙ্কানদের ক্রিকেটপ্রেমটা এমনই। টসে জিতে বাংলাদেশকে বোলিংয়ে পাঠান লঙ্কান অধিনায়ক চারিথা আসালাঙ্কা। তবে বল হাতে তাকে শুরুতেই ভুল প্রমাণ করে দেন টাইগার বোলাররা। স্বোর বোর্ডে ২৯ রান তুলতেই তাসকিন আহমেদ, তানজিম সাকিবদের আঘাতে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে স্বাগতিকরা। প্রতিপক্ষ হলেও টাইগারদের এমন দুর্দান্ত বোলিংয়ে উল্লাস করতে কৃপনতা করেননি লঙ্কান ক্রিকেটপ্রেমীরা। অন্যদিকে ২০ বছর ও ৩৩১ ওয়ানডে পর প্রেমাদাসায় দারুণ লড়াই দিয়ে শুরু করেছে ‘নতুন বাংলাদেশ’। হ্যাঁ, সবশেষ এই স্টেডিয়ামেই মাশরাফি বিন মুর্তজা, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহীম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদদের কেউই ছিলেন না। এবার ২০ বছর পর আবারো এখানে তাদের ছাড়া নয়া অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজের চ্যালেঞ্জ শুরু। আর অধিনায়ক মিরাজকে দারুণ শুরু এনে দেন বোলাররা। টাইগারদের বোলিং তোপে ৪৯.২ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২৪৪ রান সংগ্রহ করে শ্রীলঙ্কা। ইনজুরি কাটিয়ে মাঠে ফিরেই ৪ উইকেট তুলে নেন তাসকিন আহমেদ। তিন শিকার আরেক পেসার তানজিম হাসান সাকিবের। ম্যাচের আগে থেকেই চলছিল জল্পনা-কল্পনা কেমন হবে নতুন বাংলাদেশের একাদশ! দু’জনের অভিষেক দিয়ে শুরু হলো যাত্রা। বাঁহাতি স্পিনার তানভীর ইসলাম ১৫১তম ও ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমনের ১৫২তম ওয়ানডে ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেক হয়। নাঈম শেখের সম্ভাবনা থাকলেও ইমনকেই সুযোগ দেন টিম ম্যানেজম্যান্ট। জ্বর আক্রান্ত রিশাদ হোসেন তাই তার পরিবর্তে তানভীরকে খেলানো হয়। অভিষেকেই তিনি তুলে নেন এক উইকেট। তাসকিন আহমেদ ৯.২ ওভারে ৪৭ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়ে দলের সেরা বোলার। নিশান মাদুশকা ৬, কামিন্দু মেন্ডিস ০, ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ২২, এবং মহেশ থিকশানাকে ১ রানে প্যাভিলিয়নের পথ দেখান তাসকিন। অবশ্য শুরুতেই স্বস্তি এনে দেন তরুণ পেসার সাকিব। পাথুম নিশাঙ্কাকে ০ রানে ফিরিয়ে তিনি দলকে ব্রেক থ্রু এনে দেন। এরপর মিলান রাত্নায়াকে (২২) এবং শেষদিকে সেট ব্যাটসম্যান চারিথ আসালাঙ্কাকে (১০৬) আউট করে শ্রীলঙ্কার বড় সংগ্রহের স্বপ্ন ভঙ্গ করেন। তবে, বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ অভিজ্ঞ পেসার মোস্তাফিজুর রহমানের ইনজুরি। ৪২তম ওভারে রানআপের মাঝপথেই তাকে মাঠ ছাড়তে দেখা যায় এবং ফিজিওর সঙ্গে তিনি প্যাভিলিয়নে ফেরেন। তার ইনজুরির কারণে বাংলাদেশ ডেথ ওভারে তার বোলিং সেবা থেকে বঞ্চিত হয়, যা দলের কিছুটা ছন্দপতন ঘটায়। ৬ ওভারে মাত্র ২৪ রান দিয়ে কোনো উইকেট না পেলেও তার বোলিং বেশ আঁটসাঁট ছিল। অভিষিক্ত বাঁহাতি স্পিনার তানভীর ইসলামও বেশ কার্যকরী ছিলেন। ১০ ওভারে ৪৪ রান খরচ করে এক উইকেট নেন তানভীর। তিনি ৫৫ রান করা কুশল মেন্ডিসের গুরুত্বপূর্ণ উইকেটটি নেন। অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ ১০ ওভারে ৪৭ রান দিয়ে উইকেটশূন্য থাকলেও নাজমুল হোসেন শান্ত তার পার্ট-টাইম বোলিংয়ে ১ উইকেট তুলে নেন। তিনি ২৯ রান করা জানিথ লিয়ানাগেকে আউট করেন।
শ্রীলঙ্কার ইনিংসে একাই লড়েছেন অধিনায়ক চারিথ আসালাঙ্কা। ১২৩ বলে ১০৬ রানের এক দায়িত্বশীল ইনিংস উপহার দেন তিনি। ৬টি চার ও ৪টি ছক্কায় সাজানো ছিল তার ইনিংস। টপ অর্ডারের দ্রুত পতনের পর আসালাঙ্কা শুরুতে মেন্ডিসের সঙ্গে ৪৫, জানিথ লিয়ানাগে ২৯ এবং মিলান রাত্নায়াকের সঙ্গে ২২ রানের ছোট ছোট কার্যকর জুটি গড়ে দলের স্কোর আড়াইশ’র কাছাকাছি নিয়ে যান। আসালাঙ্কার এটি আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে তৃতীয় সেঞ্চুরি।
প্রথমে ব্যাট করতে নেমে শ্রীলঙ্কা পাওয়ার প্লেতে ৩ উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়লেও, আসালাঙ্কার দৃঢ়তা ২৪৪ রান সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়। শেষদিকে বাংলাদেশের বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের লঙ্কানদের শেষ ৪ উইকেটের পতন হয় মাত্র ২০ রানের ব্যবধানে।