খেলা
‘লঙ্কান ক্রিকেট মিউজিয়াম’ টাইগার ক্রিকেটের আক্ষেপ
ইশতিয়াক পারভেজ, কলম্বো থেকে
৩ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার
শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটের ‘লর্ডস’! হ্যাঁ, সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব (এসএসসি) ক্রিকেট গ্রাউন্ডকে এই নামেই ডাকা হয়। এখান থেকেই পরিচালিত হয় লঙ্কা ক্রিকেট। এক কথায় শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের ‘সদর দপ্তর’ সঙ্গে আঁতুড়ঘর বললেও ভুল হবে না। প্রবেশ মুখের পাশে লেখা শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট মিউজিয়াম। এখানেই সাজানো হয়েছে এদেশের ক্রিকেটের অর্জন। ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখা মিলে থরে থরে সাজানো লঙ্কান ক্রিকেটের ইতিহাস। কি নেই সেখানে! অতীত আর বর্তমানের সব স্মৃতি যেন বর্ণনা করছে এখানকার ক্রিকেটের জাগরণের গল্প। যেখানে দাঁড়িয়ে গর্বিত হয় শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটপ্রেমীরা। কিন্তু আপনি একজন বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমী হিসেবে করবেন আক্ষেপ। পুড়বেন নিজ দেশে এমন ইতিহাসের একসারিতে দেখতে না পারার ভীষণ দহনে। কে নেই সেখানে! তাদের প্রথম অধিনায়ক বান্দুলা ওয়ার্নাপুরা থেকে শুরু করে বর্তমান অধিনায়ক। আছে তাদের নারী ক্রিকেটের ইতিহাসও। সেখানে আছে তাদের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় দুই অর্জন ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ট্রফি। হ্যাঁ, এখানে এসে দুটি আক্ষেপ তো এখন বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমী হিসেবে পোড়াবেই। কারণ এখন পর্যন্ত টাইগারদের ভাগ্যে জোটেনি আইসিসি’র কোনো ট্রফি। শুধু কি তাই! এমন একটি জাদুঘর নেই যেখানে দাঁড়িয়ে দেখতে পাবেন টাইগার ক্রিকেট একনজরে।
দরজা খুলে ঢুকতেই আপনার চোখে পড়বে ১৯৫২ থেকে ২০২৫, সিলন থেকে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের সব অর্জনের গল্প। থরে থরে সাজানো ৯৬ বিশ্বকাপসহ মোট ১৫০টি ট্রফি। আছে টেস্ট ক্রিকেটের ‘হল অফ ফেম’। ৬টি ভিন্ন ডিজাইনের এশিয়া কাপের ট্রফির পাশাপাশি ২০১৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ট্রফিরও দেখা মিলবে এখানে। যা কিনা তারা জিতেছে ভারতকে হারিয়ে বাংলাদেশের মাটিতে। সেবার টাইগার ক্রিকেটে ছিল অনেক জল্পনা-কল্পনা। নিজেদের মাটিতে বিশ্বকাপ। আর টাইগারদের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা দল। কিন্তু নিজেদের মাটিতে ডুবেছে হতাশায়। সেখানে শ্রীলঙ্কা নিজেদের দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জিতে নিয়ে ঘরে ফেরে। এই ট্রফির গায়ে ছোট করে লেখা বাংলাদেশের নামও। লঙ্কার ক্রিকেট জাদুঘরে সাজানো আছে তাদের গর্বের প্রতীক হয়ে। এই ট্রফিটা পার হতেই আপনার চোখে পড়বে তাদের ক্রিকেটের মোড় ঘুরিয়ে দেয়া অর্জন ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা। এক কথায়, লঙ্কান ক্রিকেটের আদর্শলিপি থেকে শুরু করে মহাকাব্য, গোটা ইতিহাসের সংগ্রহশালা এই জাদুঘর। জাদুঘরে ঢুকতেই দেয়ালে লাগানো বোর্ডে লেখা পুরো ইতিহাস। কোন বছর কী হয়েছে, তার ছোট্ট রোডম্যাপ দেয়া এখানে। ডান পাশে কাঁচের বড় বাক্সে রাখা বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক সিরিজের ট্রফিও।
শ্রীলঙ্কার পাঁচটি আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা রয়েছে। তার মধ্যে সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব স্টেডিয়াম এবং পি. সারা ওভাল রয়েছে তামিল ইউনিয়ন ক্রিকেট অ্যান্ড অ্যাথলেটিক ক্লাবের অধীনে। বাকি তিনটির নিয়ন্ত্রণে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ড। সামনের কক্ষ থেকে ভেতরে পা ফেলতেই দেখা মেলে ছয় ধরনের ছয়টি এশিয়া কাপ ট্রফির। ১৯৮৬ সালে প্রথমবার শ্রীলঙ্কা জেতে জন প্লেয়ার এশিয়া কাপ গোল্ড লিফ ট্রফি। বর্তমান ট্রফিগুলোর রয়েছে আলাদা বিশেষত্ব। চরম অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে এই শিরোপা জয় গোটা জাতিকে করেছিল উজ্জীবিত। মজার বিষয় হলো, এশিয়া কাপের সবগুলো ট্রফি ছিল ভিন্ন ধরনের। এর পেছনেই আছে টেস্ট কর্নার। ‘হল অফ ফেম’ জুড়ে খোদাই করা আছে লঙ্কান জার্সিতে টেস্ট খেলা ক্রিকেটারদের নাম। আন্তর্জাতিক ও ঘরোয়া ক্রিকেটসহ প্রায় ৫০০ ট্রফি আছে লঙ্কানদের। এই মিউজিয়ামে আছে দেড়শ’ ট্রফি। বাকিগুলো আছে তাদের বোর্ডে একটি স্টোরে বিশেষভাবে সংরক্ষিত করে রাখা। লঙ্কার জাদুঘরে আলাদাভাবে নজর কাড়বে একটা স্কোরবোর্ড। যার উপরে লেখা ‘নাইন্টি সিক্স চ্যাম্পস’ আর ‘ওয়ান ক্রিকেট ওয়ান ন্যাশন’ এর স্লোগান। যে স্লোগান এই দেশের প্রতিটি মানুষকে এক সুরে জেগে ওঠার স্বপ্ন দেখায়। একজন বাংলাদেশি হিসেবে যা দেখে হয়তো বের হয়ে আসবে দীর্ঘশ্বাস। অনেক স্মৃতি খুঁজতে গিয়ে হয়তো একসঙ্গে তা খুঁজে পাবেন না। প্রতিদিনই শ্রীলঙ্কার এই জাদুঘরে ভীড় জমায় সাধারণ মানুষ থেকে নতুন প্রজন্মের ক্রিকেটার আর ক্রিকেট স্বপ্ন নিয়ে বড় হওয়া শিশুরা। বলতেই পারেন যেখান থেকে আমাদের শিশুরা সত্যি বঞ্চিত!
পাঠকের মতামত
সাফল্য না এলে রং মেখে লাভ কী