খেলা
প্রথমবার এশিয়ান কাপের মূল পর্বে বাংলাদেশ
স্পোর্টস রিপোর্টার
৩ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার
র্যাঙ্কিংয়ে দুই দলের ব্যবধান ৭৩ ধাপ! সবশেষ দেখাতেও বাংলাদেশের জালে ৫ গোল দিয়েছে মিয়ানমার। এবারের খেলা আবার মিয়ানমারের মাঠে! তবে মাঠের বাইরের এসব পরিসংখ্যানকে স্রেফ বুড়ো আঙুল দেখালেন আফঈদা-ঋতুপর্ণারা। ৯০ মিনিটের খেলায় মিয়ানমারের ওপর পুরোটা সময়েই দাপট দেখালো এবং শেষে তুলো নিলো কাক্সিক্ষত জয়। নারী এশিয়ান কাপে শক্তিধর মিয়ানমারকে হারালো বাংলাদেশ। গতকাল ইয়াংগুনে স্বাগতিকদের ২-১ গোলে হারায় পিটার বাটলারের শিষ্যরা। দুই অর্ধে গোল করে বাংলাদেশের জয়ের নায়ক ঋতুপর্ণা চাকমা। এই জয়ে প্রথমবারের মতো এএফসি উইমেন’স এশিয়ান কাপের মূল পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করলো বাংলাদেশের মেয়েরা।
মিয়ানমারের ইয়াংগুনের থুয়ান্না স্টেডিয়ামে ম্যাচের ১৯তম মিনিটে দলকে এগিয়ে নেওয়ার পর ৭২তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ঋতুপর্ণা। আর শেষ দিকে ব্যবধান কমান মিয়ানমারের উইন উইন। এর আগে প্রথম ম্যাচে বাহরাইনের বিপক্ষে বাংলাদেশ কুড়ায় ৭-০ গোলের জয়। টানা দুই জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে ‘সি’ গ্রুপে শীর্ষে উঠলো বাংলাদেশ। তুর্কমেনিস্তানকে ৮-০ গোলে উড়িয়ে বাছাই শুরু করা মিয়ানমারের পয়েন্ট দুই ম্যাচে ৩। গ্রুপে বাংলাদেশের শেষ ম্যাচ আগামী শনিবার তুর্কেমেনিস্তানের বিপক্ষে। তবে এই ম্যাচ খেলার আগেই এশিয়ান কাপের মূল পর্বে জায়গা নিশ্চিত করলো বাটলারের শিষ্যরা।
কেবল গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হলেই খেলা যাবে এশিয়ান কাপ। সেখানে ‘সি’ গ্রুপে মূল দাবিদার ছিল মিয়ামনার ও বাংলাদেশ। আরও নির্দিষ্ট করে বলা যায়, এক টিকেটের দাবিদার। এমন দুই দলের খেলায় শুরু থেকেই ছিল প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস। তবে মিয়ানমারকে শুরু থেকেই চাপের মুখে রাখে বাংলাদেশের আক্রমণভাগ। দ্বিতীয় মিনিটে বাইলাইনের একটু ওপর থেকে মনিকা চাকমার ক্রস গ্লাভসে জমান মিয়ানমার গোলকিপার। অষ্টাদশ মিনিটে পায়ের কারিকুরিতে দুই ডিফেন্ডারের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে যেতে চেয়েছিলেন শামসুন্নাহার জুনিয়র। কিন্তু বক্সের ঠিক ওপরেই তাকে ফাউল করলে ফ্রি কিক দেন রেফারি। ঋতুপর্ণার ফ্রি কিক রক্ষণ দেয়ালে প্রতিহত হওয়ার পর তারই ফিরতি নিচু শট দূরের পোস্ট দিয়ে জালে জড়ায়। ২৪তম মিনিটে পোস্টের বাধায় দ্বিগুণ হয়নি ব্যাবধান। বাম প্রান্ত থেকে ঋতুপর্ণার ক্রসে ছোট বক্সের ভেতরে শামসুন্নাহার জুনিয়র ট্যাপ করলেও বল পোস্টে লেগে প্রতিহত হয়। ৩১তম মিনিটে ফিউ ফউ উইনের দূরপাল্লার ফ্রি কিক সহজেই ফেরান বাংলাদেশের গোলরক্ষক রুপনা চাকমা। ছয় মিনিট পর আক্রমণ আটকাতে পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে এসে বল ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হন বাংলাদেশ গোলরক্ষক রুপনা চাকমা। বলের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় খিন মো মো তুনের পায়ে। তবে মিয়ানমার অধিনায়কের শট বাইরে দিয়ে গেলে বেঁচে যায় বাংলাদেশ। প্রথমার্ধের শেষ দিকে শান থ থ ভালো জায়গায় বল পেয়েও দূরের পোস্টের অনেক বাইরে মেরে হতাশা প্রকাশ করেন। এরপর প্রতিপক্ষের ট্যাকলে পড়ে যাওয়ার পর মাথার পেছন দিকে বার বার হাত দিতে দেখা যায় শামসুন্নাহার জুনিয়রকে। তার চোখে মুখে ফুটে ওঠে ব্যথা পাওয়ার ছাপ। কিছুক্ষণ চিকিৎসা নেওয়ার পর উঠে দাঁড়ান তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত বড় সমস্যা হয়নি। বাকি সময়েও খেলেছেন তিনি। ৭২তম মিনিটে আরেকবার জাদু দেখান ঋতুপর্ণা। প্রতিপক্ষের বক্সের একটু ওপরে বা পাশ থেকে বল পেয়ে একটু এগিয়ে এক ডিফেন্ডারের সামনে থেকে বাম পায়ে শট নেন ঋতুপর্ণা। বল হাওয়ায় ভেসে গোলরক্ষককের মাথার উপর দিয়ে জড়িয়ে যায় জালে। ৫ মিনিট পরই দলকে বিপদ থেকে রক্ষা করেন রুপনা। সতীর্থের থ্রু পাস পেয়ে মাইয়াত এহিন বক্সে ঢুকে পড়েন। পরিস্থিতি বুঝে দ্রুত ছুটে গিয়ে এই ফরোয়ার্ডের পথ আগলে দাঁড়ান রুপনা। ডজে তাকে ফাঁকি দিতে চাইলেও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ মাইয়াত। ঝাঁপিয়ে বল গ্লাভসে নেন দুইবারের উইমেন’স সাফ জয়ী এই গোলকিপার। এরপর সময় যত গড়াতে থাকে, রক্ষণ জমাট রাখায় আরও মনোযাগী হয় বাংলাদেশ। তবে ৮৮তম মিনিটে ম্যাচে ফেরার উপলক্ষ পায় মিয়ানমার। সতীর্থের আড়াআড়ি ক্রসে আনমার্কড থাকা উইন উইন নিখুঁত টোকায় পরাস্ত করেন রুপনাকে। তবে এরপর দলের আর কোনো বিপদ হতে দেননি বাংলাদেশের ফুটবলাররা।