ঢাকা, ৪ জুলাই ২০২৫, শুক্রবার, ২০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৭ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

খেলা

সাপ নয় রানের খরায় কাঁপলো লিটনরা

ইশতিয়াক পারভেজ (কলম্বো, শ্রীলংকা থেকে)
৪ জুলাই ২০২৫, শুক্রবার
mzamin

কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে সবুজ ঘাসের মধ্যে হলুদ সাপের ছোটাছুটি হয়তো লঙ্কানদের জন্য নতুন কিছু নয়। কিন্তু গতকাল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে যা ঘটলো, তা টাইগারভক্তদের মনে সত্যিকারের আতঙ্ক ছড়িয়েছে। ম্যাচের একপর্যায়ে টিভিতে যখন সাপ তাড়ানোর দৃশ্য ভেসে উঠলো, তখন কি মাঠে থাকা ক্রিকেটাররা ভয় পেয়েছিলেন? সে উত্তর অজানা, তবে সত্যিকারের আতঙ্কটা ছড়িয়েছিল টাইগারদের ব্যাটিংয়ের সময়। ১৬.২ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের স্কোর যখন ১০০, তখন তানজিদ হাসান ও নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাটে জয়ের স্বপ্ন দেখছিল পুরো বাংলাদেশ। কে জানতো, এর পরেই শুরু হবে এক ভয়াবহ ব্যাটিং বিপর্যয়? মাত্র ২৭ বলের ব্যবধানে মেহেদি হাসান মিরাজের দল হারায় ৭ উইকেট, যেখানে যোগ হয় মাত্র ৫ রান! ১০০/১ থেকে দেখতে দেখতেই স্কোরবোর্ড হয়ে যায় ১০৫/৮। এটি ওয়ানডে ইতিহাসে দ্বিতীয় থেকে অষ্টম উইকেট হারানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে কম রানে উইকেট হারানোর রেকর্ড, যা বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে এক কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে। শান্তর রানআউটের পর যেভাবে একের পর এক উইকেট পড়েছে, তাতে বিস্মিত দলের পেসার তাসকিন আহমেদ।

তিনি বলেন, ‘দুই জন সেট ব্যাটসম্যান (তানজিদ ও শান্ত) আউট হয়ে যাওয়ায় কিছুটা আতঙ্ক তো ছড়িয়েছেই। তানজিদ আউটের পর আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। এরপর যে আউটগুলো হয়েছে, কিছুটা অপ্রত্যাশিত ছিল। যেভাবে আউট হয়েছি, এতটা বাজে দল আমরা নই। সবারই সামর্থ্য আছে। কিন্তু ওই বিপর্যয়টার জন্যই হেরে গেলাম।’ শান্তর রানআউট হয়তো কিছুটা ক্ষমাযোগ্য ছিল, কিন্তু লিটন দাস, তাওহীদ হৃদয় ও অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজের মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটসম্যানরা যেভাবে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এসেছেন, তার কোনো সহজ ব্যাখ্যা নেই। ব্যাখ্যা দিতে পারেনি তাসকিনও। যিনি প্রায় চার মাস পর ফিরে ৪ উইকেট নেন এই ম্যাচে।  ড্রেসিং রুমে কফি শেষ হতে না হতেই দলের পাঁচ উইকেট হারানোর দৃশ্য দেখে তিনি শুধু অকপটে নিজেদের ব্যর্থতা স্বীকার করে নিয়েছেন। হতাশ কণ্ঠে ক্ষমা চেয়েছেন সমর্থকদের কাছে। তিনি বলেন, ‘সমর্থক যারা আছেন, তারা চান আমরা ভালো করি। আমরাও চাই ভালোই করতে। এমন ফলাফলের পর যারা হোটেলে যাবে, কেউই স্বস্তিতে ঘুমাতে পারবে না। খারাপ লাগবেই। আমরা চেষ্টা করছি। সহজ ম্যাচটা দুর্ভাগ্যজনকভাবে হেরে গেছি। সমর্থকদের তাই সরি বলছি।’  বাংলাদেশের এমন শোচনীয় ব্যাটিং দেখে লঙ্কান ক্রিকেট ভক্তরা মাঠে ‘নাগিন নৃত্য’ পরিবেশন করে উল্লাস করেছে। টাইগারদের বিপর্যস্ত ব্যাটিং যেন প্রতিপক্ষের জন্য বিনোদনে পরিণত হয়ে। শ্রীলঙ্কার কাছে এই হার মানতে না পেরে কান্নায় ভেঙে পড়েন টাইগারদের পাড় ভক্ত শোয়েব আলী। তিনি বলেন, ‘মাঠে সাপ এটা কোনো বিষয় না। এটা দেখে ভয় পাওয়ার মতো কিছু ছিল না। কিন্তু ভয় পেয়েছি ব্যাটিং দেখে। এমনভাবেও হারতে পারে! লিটন দাস ০, তৌহিদ হৃদয় ১, এবং মিরাজ ০ রানে দ্রুতই প্যাভিলিয়নে ফেরেন, যা মিডল অর্ডারের মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়। ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা একাই ৪ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের মিডল অর্ডারকে ধসিয়ে দেন। অন্যদিকে কামিন্দু মেন্ডিস ১৯ রানে নেন ৩ উইকেট। তানজিদ হাসানের ৬১ ও জাকের আলীর লড়াকু ৫১ রান দলের জয়ের জন্য যথেষ্ট ছিল না। মাত্র ৩৫.৫ ওভারেই অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ।

অন্যদিকে পায়ের চোট কাটিয়ে প্রায় চার মাস পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরে ৪৭ রানে ৪ উইকেট শিকার করেন তাসকিন আহমেদ। তার দুর্দান্ত বোলিংয়েই লঙ্কানদের ২৪৪ রানে থামানো সম্ভব হয়। কিন্তু ব্যক্তিগত এই সাফল্য দলীয় বিপর্যয়ের কাছে ম্লান হয়ে যায়। ম্যাচ শেষে তিনি অকপটে বলেন, ‘এটাই আসলে খেলা, যেখানে ব্যক্তিগত অর্জনের চেয়ে দলের সাফল্য ব্যর্থতাই আগে আসে।’  অন্যদিকে লিটনের আউট হওয়ার ধরন ছিল বেশ দৃষ্টিকটু। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের গড় ২৯.৮৭ হলেও, সাম্প্রতিক সময়ে তার পারফরম্যান্স সেই গড়ের ধারেকাছেও নেই। ২০২৪ এবং ২০২৫ সাল জুড়ে তিনি রান করার জন্য রীতিমতো সংগ্রাম করছেন। এই বছরে খেলা ৫টি ওয়ানডে ইনিংসে তার মোট রান মাত্র ৬, যার মধ্যে ৩টিতেই তিনি শূন্য রানে আউট হয়েছেন। এটি তার ক্যারিয়ারের ১৫তম শূন্য, যা তার ফর্মহীনতাকে আরও প্রকট করে তুলেছে। তার শেষ ওয়ানডে ফিফটি ছিল ২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে। এরপর থেকে প্রায় ১৫ মাস এবং ১৩ ইনিংসে তিনি কোনো অর্ধশত রানের ইনিংস খেলতে পারেননি। সম্প্রতি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে তার রান ছিল যথাক্রমে ২, ৪ এবং ০। লিটন নিঃসন্দেহে একজন প্রতিভাবান ক্রিকেটার, কিন্তু তার বর্তমান ফর্মহীনতা কেবল তাকেই নয়, পুরো দলকেই চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে। এই ব্যাটিং ধস থেকে বাংলাদেশ দল কীভাবে ঘুরে দাঁড়ায়, এখন সেটাই দেখার বিষয়।

 

খেলা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

খেলা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status