ঢাকা, ৮ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১২ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

দেশ বিদেশ

রাষ্ট্র সংস্কার প্রশ্নে কোন কোন ক্ষেত্রে ঐকমত্য-মতানৈক্য জানালো বিএনপি

স্টাফ রিপোর্টার
৮ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার

রাষ্ট্র সংস্কার প্রশ্নে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় কোন কোন বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে মতানৈক্য রয়েছে তার পরিসংখ্যান দিয়েছে বিএনপি। রোববার রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ৬টি সংস্কার কমিশনের সঙ্গে আলোচনার সর্বশেষ অবস্থানের কথা জানান। বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রম নিয়ে আগ্রহ ও প্রত্যাশা যেমন অনেক তেমনি হতাশা ও উৎকণ্ঠাও রয়েছে জনমনে। বিএনপি’র পক্ষ থেকে আমরা যেমন ৬টি সংস্কার কমিশনের কার্যক্রম সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছে তেমনি ঐকমত্য কমিশনের প্রতিদিনের আলোচনায় আমাদের প্রতিনিধিরা কার্যকর অংশগ্রহণ করে চলেছেন। বিভিন্ন বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছার জন্য আমাদের প্রতিনিধিরা সভায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা এবং অনেক বিষয়ে ছাড় দিয়ে হলেও একমত হয়ে কমিশনের ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার প্রয়াসকে সহযোগিতা করেছেন। তিনি বলেন, দীর্ঘ আলোচনার পর সংস্কার কমিশনগুলো যেসব প্রস্তাব পেশ করেছেন, তার বিপরীত কিংবা নতুন নতুন প্রস্তাব উত্থাপন এবং তা নিয়ে অনেক সময় অচলাবস্থা সৃষ্টির কারণে কার্যক্রম বিলম্বিত হচ্ছে। ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার আগ্রহী বলেই আমাদের প্রতিনিধিরা ধৈর্য ধরে আলোচনা শুনছেন এবং তথ্য প্রমাণ ও যুক্তি দিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে কমিশনকে সহযোগিতা করছেন। তিনি বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ কতিপয় প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করার নামে জনগণের নির্বাচিত সংসদ, নির্বাচিত সরকার তথা রাষ্ট্র কাঠামোকে দুর্বল ও অকার্যকর করার কোনো প্রস্তাবের যুক্তিসঙ্গত বিরোধিতা সংস্কারের মূল উদ্দেশ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বলে আমরা মনে করি। জনগণের দ্বারা নির্বাচিত জনগণের কাছে দায়বদ্ধ এবং জনগণকে জবাবদিহিতা করতে বাধ্য কোনো সরকারকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় দুর্বল ও অকার্যকর করা অবশ্যই সংস্কারের মূল আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ফলে এমন কোনো প্রয়াসে সমর্থন জানানো সংস্কারের মূল উদ্দেশ্যের পরিপন্থি বলে তা থেকে বিরত থাকার অর্থ সংস্কার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা নয় বরং এই প্রক্রিয়াকে সহযোগিতা করা।
পুলিশ সংস্কার কমিশন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, এই কমিশনের বিষয়ে এখনো আলোচনায় আসেনি। তবে ওই কমিশনে দলের নেতৃবৃন্দ যতটুকু জানিয়েছেন তা হলো র‌্যাব বিলুপ্তিসহ প্রায় সব বিষয়েই ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা হয়েছে। 
দুর্নীতি দমন কমিশনের বিষয়ে তিনি বলেন, কতিপয় ছাড় দিয়ে ৪৭টি সুপারিশের ৪৬টিতেই বিএনপি সম্মতি জানিয়েছে। শুধু ২৯নং সুপারিশে আইনের মাধ্যমে করার পরিবর্তে আমরা আদালতের অনুমতি নেয়ার বিদ্যমান বিধান অব্যাহত রাখার কথা বলেছি। বিএনপি মনে করে, এটা না হলে দুর্নীতি দমন কমিশনের কার্যক্রমকে অহেতুক বিলম্বিত করার সুযোগ সৃষ্টি হবে।
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, এই কমিশনের ২০৮টি সুপারিশর মধ্যে ১৮৭টি প্রস্তাবে বিএনপি একমত হয়েছে, ৫টিতে আংশিক একমত হয়েছে আর ৫টি সুপারিশে ভিন্নমত প্রদান করেছে। ১১টি প্রস্তাবে বিএনপি একমত হতে পারেনি, যেগুলো দেশে প্রদেশ সৃষ্টি, পদোন্নতি ও অন্যান্য প্রশাসনিক অসঙ্গতির বিষয়ে। পদোন্নতির বিষয়ে আপিল বিভাগের রায় কার্যকর রয়েছে।
বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশনের বিষয়ে তিনি বলেন, এই কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ ৮৯টি সুপারিশের মধ্যে ৬২টি সুপারিশে বিএনপি একমত হয়েছে এবং ৯টিতে আংশিকভাবে একমত, ১৮টিতে ভিন্নমত পোষণ করে যুক্তিসহ পরামর্শ দিয়েছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বিষয়ক সকল প্রস্তাবে বিএনপি একমত হয়েছে। তবে এর কিছু বিষয়ে নির্বাচিত সংসদে আইন প্রণয়ন কিংবা ইতিমধ্যে কোনো অধ্যাদেশ হলে তা সংসদে রিটিফাই ও সাংবিধানিক সংশোধনীর প্রয়োজন হবে।
নির্বাচনী ব্যবস্থা বিষয়ক সংস্কার কমিশন প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই কমিশনের ২৪৩টি সুপারিশের মধ্যে ১৪১টিতে বিএনপি একমত হয়েছে এবং ১৪টিতে আংশিকভাবে একমত, ৬৪টিতে ভিন্নমতসহ একমত হয়েছে। অর্থাৎ এসব বিষয়ে পরিবর্তনে একমত হয়ে বিভিন্ন আইনে ও বিধিতে সংশোধনী অধিকতর কার্যকর হবে তা প্রস্তাব করেছে বিএনপি। কমিশনের ২৪টি বিষয়ে বিএনপি একমত হতে পারিনি। নির্বাচনী ব্যবস্থা সংক্রান্ত ১২টি আইন ও ৬টি নীতিমালা আছে। এ বিষয়ে রাষ্ট্রীয় সংবিধানেও নির্দিষ্ট বিধান আছে। এসব প্রস্তাবের বেশ কয়েকটি বাস্তবায়নযোগ্য নয় এবং কয়েকটি নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালনে স্পষ্টতই বাধা সৃষ্টি করে তাদের সাংবিধানিক স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করবে। বিএনপি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আনীত সকল প্রস্তাবে একমত হয়েছে। 
সংবিধান সংস্কার কমিশনের বিষয়ে তিনি বলেন, সংবিধান সংস্কার কমিশনের ১৩১টি সুপারিশে বিএনপি দফাওয়ারি মতামত দিয়েছে। অধিকাংশ সুপারিশে একমত হয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘৭০’ অনুচ্ছেদ ও প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ, দুই বিষয়েই আমরাই ছাড় দিয়েছি। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নির্দিষ্ট করে দেয়ার বিধান বিশ্বের কোথাও না থাকার পরেও ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার স্বার্থে বিএনপি সম্মত হয়েছে। আর প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিষয়েও বিএনপি তাদের প্রস্তাব থেকে সরে এসে একমত হয়েছে। জাতীয় সংসদে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির পদ বিরোধী দলকে দেয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ৪টিসহ আসন সংখ্যার অনুপাতে সভাপতির পদ দিতেও তারা সম্মত হয়েছে। রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা সংক্রান্ত আর্টিকেল ৪৯ পরিবর্তনে আমরা সম্মত হওয়ায় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা হয়েছে। এ ছাড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন, ন্যায়পাল আইন যুগোপযোগী করা, জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা বিন্যাসে সংস্কার আনার জন্য সংবিধানের সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদ সংশোধন  ও আইনের মাধ্যমে বিশেষায়িত কমিটি গঠনেও বিএনপি একমত হয়েছে। বিভাগীয় পর্যায়ে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সম্মত হয়ে বিএনপি তা বিচার বিভাগের সঙ্গে আলোচনার মাধমে বাস্তবায়নে পরামর্শ দিয়েছে। কারণ ইতিপূর্বে ১৯৮৮ সালে এমন উদ্যোগকে উচ্চ আদালত বাতিল করে দিয়েছিল।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, মিডিয়ার কিছু অংশ ও কিছু ব্যক্তিত্বরা তারা বিএনপি’র সংস্কার সম্পর্কে বিভিন্ন রকম কথা বলছেন যেগুলো সঠিক নয়। বিএনপি’র কমিটমেন্ট টু রিফর্মস, এটা কোয়েশন করার কোনো সুযোগ নেই। বিএনপি হচ্ছে সেই দল যে, ২০১৬ সালে বেগম খালেদা জিয়া ভিশন-২০৩০ তিনি সংস্কারের কথা বলেছিলেন। তারপরে বিএনপি ’২২ সালে ২৭ দফা এবং অন্যান্য দলের সঙ্গে আলোচনা করে ’২৩ সালে ৩১ দফা সংস্কার কর্মসূচি আমরা দিয়েছি। এটাতে আমরা আন্তরিক বলেই কিন্তু ৩১ দফা নিয়ে সারা দেশে অসংখ্য প্রোগ্রাম করেছি, জনগণের কাছে যাওয়া হয়েছে, সুধী সমাজ, সুশীল সমাজের কাছে যাওয়া হয়েছে, তাদেরকে বলা হয়েছে। আজকে একটা মহল, একটা চক্র অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বিএনপিকে সংস্কারবিরোধী বলে প্রচার করার একটা অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
১৫ বছরের গণতন্ত্র ফেরানোর আন্দোলনে বিএনপি’র শক্ত অবস্থানের কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের কতো কর্মসূচি, কতো সমাবেশ, কতো লাঠিপেটা আপনারা দেখেছেন, আপনারা কাভার করেছেন। এখন বিএনপিকে নিয়ে এই প্রশ্নটা কেন করে? এটাকে উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত ছাড়া আমি কী বলবো? বিএনপিকে মেলাইন করা, তাকে ভুলভাবে চিত্রিত করার প্রচেষ্টা চালানো মাত্র। 
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও সালাহউদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
 

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status