দেশ বিদেশ
‘ছাত্রদের রাজাকারের বাচ্চা বলেননি হাসিনা, গণহত্যায় দালিলিক প্রমাণ দিতে ব্যর্থ’
স্টাফ রিপোর্টার
৮ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবারবৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের রাজাকারের বাচ্চা বলেননি শেখ হাসিনা। তার বক্তব্যকে অপব্যাখ্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন শেখ হাসিনার মামলায় রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানিতে অংশ নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে এসব কথা বলেন তিনি। আগামী ১০ই জুলাই অভিযোগ গঠনের বিষয়ে আদেশ দেয়ার জন্য দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল। গতকাল দ্বিতীয়দিনের মতো শুনানি শেষে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন ৩ সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এদিন ধার্য করেন। এই মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও অপর দুই আসামি হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশন পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আবেদন জানান। তবে পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন অভিযোগ থেকে হাসিনার অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন। এ মামলায় গ্রেপ্তার একমাত্র আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন। তার পক্ষে আইনজীবী ছিলেন যায়েদ বিন আমজাদ। শুনানিতে আসামিপক্ষের রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন ট্রাইব্যুনালকে বলেন, জুলাই-আগস্ট আন্দোলন চলাকালীন ছাত্রদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলেননি শেখ হাসিনা। তার বক্তব্যের অপব্যবহার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ কল্পিত, ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। উনার রাজনৈতিক দর্শন ও দীর্ঘ বছরের শাসনামলে করা তার প্রশংসনীয় কাজগুলো দেখে তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে এসব অভিযোগ আনা হয়েছে। তিনি যদি চাইতেন রাজাকারদের হত্যা করবেন, তাহলে তিনি ইতিপূর্বেই তা করে ফেলতে পারতেন। কেননা তিনি দীর্ঘ ১৬ বছর দেশ শাসন করেছেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটির সাবেক মেয়র তাপসের সঙ্গে করা হাসিনার ফোনালাপটিও সঠিক নয়। রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র শহীদ আবু সাঈদের হত্যার নির্দেশ দেয়ার তথ্যটিও সঠিক নয়।
মামলার ৪র্থ ও ৫ম নম্বর অভিযোগ হচ্ছে ৫ই আগস্টে রাজধানীর চানখাঁরপুলে ও আশুলিয়ায় গুলি করে ছাত্র-জনতাকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু সেদিন হাসিনা দেশ ছাড়ার পরে এসব অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল। সুতরাং এসব অভিযোগের সঙ্গে হাসিনার সম্পর্ক নেই। তাই অভিযোগের প্রাইমাফেসি না থাকায় মামলার দায় হতে শেখ হাসিনাসহ আসামিদের অব্যাহতির আবেদন করছি। শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম সাংবাদিকদের বলেন, জুলাই-আগস্টে গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় প্রসিকিউশন ইতিপূর্বে শুনানি শেষ করেছেন। আজকে আসামি পক্ষের শুনানিতে দাঁড়িয়ে স্টেট ডিফেন্স কাউন্সিল ৫টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থেকে অব্যাহতির আবেদন জানিয়েছেন। তারা মূলত ২টি পয়েন্ট উল্লেখ করেছেন। তারা বলেন- ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন একটি যুদ্ধাপরাধ আইন। এই আইন যুদ্ধকালীন সময়ে সংঘটিত অপরাধের জন্য প্রণয়ন করা হয়েছিল। আমরা বলেছি, এই আইনের ৩ নম্বর ধারার ১নং উপ-ধারায় স্পষ্ট করে বলে দেয়া আছে এই আইন প্রণয়নের আগে কিংবা পরে বাংলাদেশের সীমানার মধ্যে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের বিচার সম্পন্ন করা যাবে। সুতরাং এই আইনের কোথাও বলা হয়নি যে এটি যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে বিচারের উদ্দেশ্যই প্রণয়ন করা আইন। তারা দ্বিতীয় পয়েন্টে যা বলেছেন তা হচ্ছে- এই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা। পরে বিজ্ঞ চিফ প্রসিকিউটর বলেন, আনীত অভিযোগ সত্য নাকি মিথ্যা সেটি নিরূপণের সময় এখন নয়। সত্য-মিথ্যা নিরূপণ হবে মামলার ট্রায়ালে। যদি মিথ্যা হয় তাহলে বিচারের মাধ্যমে সেটি প্রমাণ করা যেতে পারে। বিচারের এই পর্যায়ে অভিযোগের আইনগত কোনো ত্রুটি আছে কিনা সেটি দেখতে হবে। সুতরাং স্টেট ডিফেন্সের সাবমিশন গ্রহণযোগ্য নয়।