দেশ বিদেশ
বিকল্প চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নে ১২ দফা প্রস্তাবনা উপস্থাপন
স্টাফ রিপোর্টার
৮ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার
ইউনানী আয়ুর্বেদিক হারবাল ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নে ১২ দফা প্রস্তাবনা দিয়েছে বাংলাদেশ আয়ুর্বেদিক মেডিসিন ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশন। গত ৩রা জুলাই স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের কাছে প্রস্তাবগুলো তুলে ধরেন সংগঠনটির সভাপতি বাংলাদেশ ইউনানী মেডিকেল এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান ড. হাকীম মো. ইউছুফ হারুন ভূঁইয়া। এ সময় তার সঙ্গে একটি প্রতিনিধিদলও উপস্থিত ছিল। বাংলাদেশ বোর্ড অব ইউনানী আয়ুর্বেদিক সিস্টেমস্ অব মেডিসিন-এর চেয়ারম্যান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মিসেস মল্লিকা খাতুন, বাংলাদেশ আয়ুর্বেদিক মেডিসিন ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশন বামা’র সাধারণ সম্পাদক ডা. মিজানুর রহমান, হাকীম হাবিবুর রহমান, ইউনানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ আ.খ. মাহবুবুর রহমান সাকী, হামদর্দ বাংলাদেশের পরিচালক তথ্য ও গণসংযোগ আমিরুল মোমেনীন মানিক, পরিচালক হামদর্দ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ ব্রি. জে. (অব.) মাহবুব আনোয়ার ও হামদর্দ বাংলাদেশের আইন উপদেষ্টা, সাবেক সিনিয়র জেলা জজ মোহাম্মদ কাওসার প্রতিনিধিদলে ছিলেন। স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সঙ্গে আলাপকালে প্রতিনিধিদল জানায়, কোভিড-১৯ পরবর্তী বিশ্বে নতুন করে ইউনানী আয়ুর্বেদিক হারবাল ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যবস্থার অপরিহার্যতা প্রমাণিত হয়েছে। বিগত কোভিড চলাকালীন অবস্থায় হামদর্দ বাংলাদেশ তাদের নিজস্ব ওষুধ ব্যবহার করে বিপুল সাফল্য পায়। ফলে এলোপ্যাথিক সেক্টরের প্রায় ১২ হাজার চিকিৎসক কোভিড আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করলেও, এই সেক্টরের কোনো চিকিৎসক বা সংশ্লিষ্ট একজন ব্যক্তিও এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেনি। উপদেষ্টাকে তারা আরও জানান, দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশে এই খাতটি অবহেলিত ও উন্নয়নবঞ্চিত।
বিকল্প চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নে দাবি ও প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে রয়েছে-
১. গত ৪৩ বছরে ইউনানী আয়ুর্বেদিক হারবাল ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি করা হয়নি। তাই অবিলম্বে জরুরিভিত্তিতে বিকল্প চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
২. ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর যে প্রক্রিয়া ও বিধিবদ্ধ আইনি কাঠামোয় এলোপ্যাথিক সেক্টরকে নিয়ন্ত্রণ করে, একই প্রক্রিয়ায় ইউনানী আয়ুর্বেদিক হারবাল ও হোমিওপ্যাথিক সেক্টরকেও তদারকি করে। এলোপ্যাথিক সেক্টর, তাদের ওষুধসমূহ বিদেশে রপ্তানি করে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সুযোগ পেলেও এক্ষেত্রে ইউনানী আয়ুর্বেদিক হারবাল ও হোমিওপ্যাথিক সেক্টর বৈষম্যের শিকার। তাই যত দ্রুত সম্ভব সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করে ইউনানী আয়ুর্বেদিক হারবাল ও হোমিওপ্যাথিক ওষুধ বিদেশে রপ্তানির সুযোগ দিতে হবে।
৩. স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন বিকাশ ও অগ্রগতির জন্য প্রতি অর্থবছরেই প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করে। পাশাপাশি বিদেশি অনেক সংস্থাও মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অনুদান প্রদান করে থাকে। কিন্তু এসব অনুদান ও বরাদ্দকৃত অর্থের সামান্য অংশ ব্যয় করা হয় না ইউনানী আয়ুর্বেদিক হারবাল ও হোমিওপ্যাথিক সেক্টরের জন্য। এ খাতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করতে হবে।
৪. প্রতি বছরই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বরাদ্দ দিয়ে থাকে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে ইউনানী আয়ুর্বেদিক হারবাল ও হোমিওপ্যাথিক সেক্টরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো নামমাত্র বরাদ্দ পায়। এই বরাদ্দ বাড়াতে হবে।
৫. এলোপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যবস্থার তদারকি এবং নিয়ন্ত্রণের জন্য বিএমডিসি থাকলেও বিকল্প চিকিৎসা খাতের জন্য কোনো কাউন্সিল নেই। সে কারণে ভয়াবহ অবহেলা ও বঞ্চনার শিকার হচ্ছে এই স্বাস্থ্য খাতটি। অবিলম্বে কাউন্সিল গঠন করে ইউনানী আয়ুর্বেদিক হারবাল ও হোমিওপ্যাথিক সেক্টরের অগ্রগতি উন্নয়নে উদ্যোগ নিতে হবে।
৬. ভারতে বিকল্প চিকিৎসা ব্যবস্থাকে আলাদা গুরুত্ব দিতেই আয়ূশ নামে মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বাংলাদেশেও এই খাতের অপরিহার্যতা ও প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় একটি পৃথক হারবাল মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা অত্যন্ত জরুরি বিষয়।
৭. ইউনানী আয়ুর্বেদিক হারবাল ও হোমিওপ্যাথিক সেক্টরের চিকিৎসকদের নৈতিকতা, চিকিৎসার মানন্নোয়ন এবং প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্থার সঙ্গে সমমর্যাদা দিতে অবিলম্বে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বিধি বা নীতি তৈরি করতে হবে।
৮. ইউনানী আয়ুর্বেদিক হারবাল ও হোমিওপ্যাথিক সেক্টরের জন্য সরকার পরিচালিত স্বতন্ত্র ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
৯. উপমহাদেশের ভারত ও পাকিস্তানে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের পাশাপাশি শত শত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউনানী আয়ুর্বেদিক হারবাল তথা বিকল্প চিকিৎসা শিক্ষা ব্যবস্থার বিকাশে স্বতন্ত্র ফ্যাকাল্টি রয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় ২০১২ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতিক্রমে এবং ইউজিসি’র সিলেবাস অনুমোদনসাপেক্ষে হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশে ইউনানী আয়ুর্বেদিক ফ্যাকাল্টি চালু হয়। কিন্তু সম্পূর্ণ নিয়ম নীতি লঙ্ঘন করে ২০২৩ সালে উক্ত ফ্যাকাল্টিকে ইনস্টিটিউটের অধীনস্থ করার নির্দেশনা দেয়া হয়, যা উচ্চশিক্ষার বিকাশে ভয়াবহ অন্তরায়। অতএব, সরকার অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ইউনানী আয়ুর্বেদিক ফ্যাকাল্টি চালুর পূর্বের নিয়ম বহাল রাখতে হবে।
১০. ইউনানী আয়ুর্বেদিক হারবাল ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শিক্ষা সেক্টরে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগের বিধান থাকলেও নিয়োগ হচ্ছে সীমিত পরিসরে। শিক্ষকদের পদোন্নতি ও সব সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
১১. সরকারি ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি ৩টি প্রতিষ্ঠানের জন্যও মেধাতালিকা প্রকাশ করে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের তালিকাভুক্তির প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করতে হবে।
১২. জেলা-উপজেলা এবং প্রত্যেক ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একজন করে ইউনানী আয়ুর্বেদিক বা হোমিও চিকিৎসক নিয়োগ দিতে হবে।