ঢাকা, ৬ জুলাই ২০২৫, রবিবার, ২২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৯ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

বাংলারজমিন

তিন মাসেও সন্ধান মেলেনি রংপুরের রুনজিনার

স্টাফ রিপোর্টার, রংপুর থেকে
৩১ অক্টোবর ২০২৪, বৃহস্পতিবার

জীর্ণশীর্ণ বাড়ির উঠানে বসে রুনজিনার ছবি হাতে কাঁদছেন মা কাজলী বেগম। বাড়ির উঠানে মনমরা হয়ে রয়েছে রুনজিনার তিন ভাইবোন। কাজলী বেগমের স্বামী অটোচালক ওহেদুল ইসলাম বাড়ি ফিরলেন। তার মুখেও অন্ধকারের ছাপ। কাজলী-ওহেদুলের সংসারের এমন দৃশ্য দু’একদিনের নয়। গত তিন মাস ধরেই এ দৃশ্য দেখে আসছে এলাকাবাসী। তাদের সংসারে রয়েছে ৪ সন্তান। কিন্তু কাজলী-ওহেদুলের বড় কন্যা বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী রুনজিনা বেগম (১৮) অপহরণ হয়েছে তিন মাস হলো। রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লহ্মীটারি ইউনিয়নের প্রত্যন্ত চর ইশোরকোল এলাকার ওহেদুল ইসলামের কন্যা রুনজিনাকে অপহরণকারী মাদক ব্যবসায়ী আব্দুল জলিলকে পুলিশ গ্রেপ্তার করলেও রুনজিনার সন্ধান এখনো পাওয়া যায়নি। জলিল পুলিশকে জানায়, রুনজিনাকে সিলেটে নিয়ে গিয়ে হারিয়ে ফেলে, কিন্তু তার পরিবারের দাবি তাকে কোনো যৌন পল্লীতে বিক্রি করে দিয়েছে জলিল। পুলিশ, গণমাধ্যমসহ দেশবাসীর কাছে বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী মেয়েকে উদ্ধারে সহযোগিতা কামনা করেছেন রনজিনার পরিবার ও এলাকাবাসী।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ৪ ভাইবোনের মধ্যে রুনজিনা সবার বড়। অন্য ভাই-বোনেরা স্বাভাবিক জীবন পেলেও রুনজিনা জন্মগতভাবে বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী। বাবা ওহেদুল ইসলাম অটো চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। সকালে তিনি অটো নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলে মা কাজলী বেগম তার ৪ সন্তান নিয়ে বাড়িতে থাকেন। প্রত্যন্ত চর এলাকায় পুরুষশূন্য বাড়ি হওয়ায় রুনজিনার দিকে কু-নজর দেয় মাদক ব্যবসায়ী চোর আব্দুল জলিল। চলতি বছরের শুরুতে এক রাতে রুনজিনার বাবা-মা প্রতিবেশীর বাড়িতে বিয়ের দাওয়াতে গেলে জলিল কৌশলে বাড়িতে ঢুকে রুনজিনাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। এতে রুনজিনা পালিয়ে গিয়ে আত্মরক্ষা করে এবং তার বাবা-মাকে বিষয়টি জানায়। এ ঘটনায় রুনজিনার বাবা গঙ্গাচড়া থানায় মামলা দায়ের করলে পুলিশ আব্দুল জলিলকে গ্রেপ্তার করে। ৭০ দিন জেল হাজতে থাকার পর জলিল জামিনে মুক্তি পেয়ে গত ২৭শে জুলাই রাতে পরিবারের সদস্যরা বাড়িতে ঘুমালে বিদ্যুৎ না থাকার সুযোগে জলিল ঘরের বেড়া কেটে রুনজিনার মুখ চেপে ধরে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এ সময় বোনেরা কান্নাকাটি শুরু করলে বাবা ওহেদুল ও মা কাজলী বেগম ঘরে এসে দেখে রুনজিনা নেই। তারা চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন জড়ো হয় এবং রুনজিনাকে খুঁজতে থাকে। পরবর্তীতে জলিলকে তার বাড়িতে খোঁজা হলে তাকেও পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় ওহেদুল ইসলাম বাদী হয়ে আব্দুল জলিলসহ অজ্ঞাত ২ জনকে আসামি করে গত ৩রা আগস্ট গঙ্গাচড়া থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার পর পুলিশ তথ্য প্রযুক্তির সহযোগিতায় সিলেট, সুনামগঞ্জ, লালমনিরহাট, পাটগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে জলিলের লোকেশন দেখতে পায়। পরিবারের সদস্যসহ পুলিশ ওইসব জেলায় গিয়ে অভিযান চালিয়ে সর্বশেষ পাটগ্রামে আব্দুল জলিলকে আটক করে পাটগ্রাম থানা পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়। পরে পাটগ্রাম থানা পুলিশ জলিলকে গঙ্গাচড়া মডেল থানায় হস্তান্তর করে। রুনজিনাকে উদ্ধারে পুলিশ আব্দুল জলিলকে দুইদিনের রিমান্ডে নেয়। এদিকে মেয়ে অপহরণের তিন মাস পেরিয়ে যাওয়ায় দিশাহারা হয়ে পড়েছে পরিবারের সদস্যরা। প্রত্যন্ত চর এলাকা থেকে যুবতী মেয়েকে অপহরণের ঘটনায় এলাকাবাসীর মাঝেও আতঙ্ক বিরাজ করছে।
‘এলাকার মাবিয়া বেগম (৪৫) বলেন, রুনজিনা কতা কবার পায় না, শুনবার পায় না। খুবে ভাল একটা চেংরি অয়। হামরা রুনজিনাক ফিরত চাই।’ 
শাপলা বেগম বলেন, রুনজিনা কীডন্যাপ হওয়ার পর থ্যাকি আইতোত হামরা ভয়োত ঘর থ্যাকি বেড়াই না। হামারও তো বেটি আচে। কোনদিন ক্যায় কীডন্যাপ করি নিয়া যায় এটা নিয়া হামরা আতঙ্কে আচি। 
এলাকার সিরাজুল ইসলাম বলেন, জলিল চাইরটা বিয়া করচে, ওয় গাঞ্জা বেচায়। খারাপ লোক গ্রামের সবায় জানে। 
কান্নায় ভেঙে পড়ে রুনজিনার মা কাজলী বেগম বলেন, মোর মাও নাই। পত্থম বেটি মোর। ওর মুখের দিকে তাকাইলে মুই মোর মায়ের মুখ দেখবার পাও। বেটি মোর মুখ দিয়া কিচু কবার পায় না। সেই বেটি আইজ তিন মাস ধরি নাই। কোটে আচে, কেমন আচে। বাঁচি আচে নাকি মরি গেচে এই টেনশন হামার লাগি আচে। আল্লাহ মোর বেটিক ফিরি দেও। তোমরা মোর বেটিক ফিরি দেও।
রুনজিনার বাবা ওহেদুল ইসলাম বলেন, জলিল চোরকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসা করলে সে বলতে পারবে রুনজিনা কোথায় আছে। জলিল লম্পট ৪৩ বছর বয়সী একটা লোক। তার ৪টি বউ থাকলেও কেউ তার সঙ্গে নেই। আমার ধারণা রুনজিনাকে জলিল মারে নাই। কোথাও বিক্রি করছে। আমি মেয়েকে ছাড়া অসহায়। আমার মেয়েকে পেতে আপনারা সবাই সাহায্য করেন।
এ ব্যাপারে গঙ্গাচড়া মডেল থানার ওসি আল এমরান মানবজমিনকে জানান, মামলার পর থেকে রুনজিনাকে উদ্ধারে পুলিশ দেশের বিভিন্ন জেলায় অভিযান চালিয়েছে। জলিলের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি। সেই তথ্যের সূত্র ধরে রুনজিনাকে উদ্ধারে অভিযান চলমান রয়েছে।

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status