দেশ বিদেশ
পুরোপুরি চালু হচ্ছে পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্প বাড়বে ট্রেন চলাচল
স্টাফ রিপোর্টার
৮ নভেম্বর ২০২৪, শুক্রবারঅবশেষে পুরোপুরি চালু হচ্ছে পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্প। চলতি নভেম্বরের মধ্যেই ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত পুরো রেললাইনটি চালু করা হবে। এতে করে ঢাকা থেকে যশোর-খুলনা ও যশোর-বেনাপোলের দূরত্ব কমার পাশাপাশি কমে আসবে যাতায়াতের সময়। ফলে একই ট্রেনকে সকাল-বিকাল করে দুইবার চালানোর কথাও চিন্তা করা হচ্ছে। বর্তমানে মেগা এই প্রকল্পে মাত্র ৪টি ট্রেন চলছে। নভেম্বরে চালু করার পর থেকে এই রুটে ট্রেনের সংখ্যাও বাড়ানো হবে। দেশের মেগা প্রকল্পগুলোর একটি পদ্মা সেতু রেল সংযোগ। ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই প্রকল্পের কাজ তিন ভাগে ভাগ করে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এরমধ্যে প্রথম ধাপে ঢাকা থেকে মাওয়া ৪০ কিলোমিটার, দ্বিতীয় ধাপে মাওয়া থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ৪২ কিলোমিটার এবং তৃতীয় ধাপে ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত ৮৭ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেললাইন নির্মাণ করা হয়েছে। প্রকল্পের কাজ এখন প্রায় শেষ। চলতি ১৫ থেকে ২০শে নভেম্বরের মধ্যে পুরোদমে রেললাইন চালু করার অপেক্ষায় রয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। প্রকল্প সূত্র জানায়, ঢাকা থেকে ফরিদপুর-কুষ্টিয়া হয়ে বর্তমানে খুলনার দূরত্ব ৪১২ কিলোমিটার। এই পথে যেতে রেলের সময় লাগে ১০ ঘণ্টা। প্রকল্পটি চালু হলে এই পথে দূরত্ব কমবে ১৭৫ কিলোমিটার। এ ছাড়া সময় বাঁচবে ৫ ঘণ্টার মতো। আর ঢাকা থেকে যশোর হয়ে বেনাপোল পর্যন্ত বর্তমান দূরত্ব ৩৫৬ কিলোমিটার। এই পথে যেতে সময় লাগে ৮ ঘণ্টা। প্রকল্পটি চালু হলে এই পথেও ১৮৪ কিলোমিটার পথ কমে যাবে। ফলে মাত্র সাড়ে ৩ ঘণ্টায় ঢাকা থেকে বেনাপোল পৌঁছানো যাবে।
রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, এই প্রকল্পটি পুরোপুরি চালু হলে যশোর-ঢাকা রুটে পদ্মবিলা রেল জংশন দিয়ে ট্রেন চালানো হবে। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিচালক মো. আফজাল হোসেন বলেন, আগামী ২০শে নভেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি পুরোদমে চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যেসব ট্রেন ঢাকা থেকে বেনাপোল যাবে সেগুলো তো যশোর স্টেশন হয়েই চলাচল করবে। আর যে ট্রেনগুলো খুলনা যাবে সেগুলো পদ্মবিলা জংশন ঘুরে। এর কারণ হলো খুলনার ট্রেনগুলো যশোর স্টেশন গেলে ইঞ্জিন ঘুরিয়ে খুলনা যেতে হবে। এতে ৪০ মিনিট থেকে কখনো কখনো একঘণ্টা সময় বেশি লাগবে। এতে যাত্রাপথে সময় বাড়বে। সেদিক বিবেচনায় পদ্মবিলা হয়েই খুলনার ট্রেনগুলো চলাচল করবে।
রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে পদ্মা রেল সংযোগ সেতু দিয়ে মাত্র ৪টি ট্রেন চলছে। এরমধ্যে সুন্দরবন এক্সপ্রেস, বেনাপোল এক্সপ্রেস ও মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেন তিনটি আন্তঃনগর ও নকশিকাঁথা এক্সপ্রেস ট্রেনটি কমিউটার। পদ্মা সেতু দিয়ে চলতি বছরেই ট্রেন বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে রেলওয়ের। ঢাকা-যশোর-খুলনা, ঢাকা-যশোর-বেনাপোল এবং ঢাকা-ফরিদপুর-দর্শনা এই চার রুটে ট্রেনগুলো চালানো হবে। নতুন রেলপথে সময় কম লাগায় সকাল-বিকাল করে একই ট্রেনকে দুইবার চালানোর কথাও চিন্তা করা হচ্ছে। এই পরিকল্পনার মধ্যে আছে খুলনা-ঢাকা-খুলনা রুটের সুন্দরবন এক্সপ্রেস, চিত্রা এক্সপ্রেস, ঢাকা-বেনাপোল রুটের বেনাপোল এক্সপ্রেস। এছাড়া আন্তঃদেশীয় মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের রুট পরিবর্তন করে পদ্মা সেতু হয়ে বেনাপোল পর্যন্ত চালানো হতে পারে। বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী বলেন, আগামী ২০শে নভেম্বরের দিকে পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্প চালু হতে পারে। তখন থেকে ১০ থেকে ১২টার মতো ট্রেন চালানো যাবে। খুলনা, বেনাপোল ও আগের রুটে এই ট্রেনগুলো চলাচল করবে।
২০১৬ সালের ৩রা মে একনেক সভায় পদ্মা সেতুর ওপর রেললাইন স্থাপনে ৩৪ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকায় এ প্রকল্পের অনুমোদন দেয় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। তখন এ প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত। তবে ২০১৮ সালের ২২শে মে প্রকল্পটির ব্যয় ৪ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা বাড়িয়ে প্রায় ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকায় একনেক সভায় প্রথম সংশোধনী অনুমোদন দেয়া হয়। জমি অধিগ্রহণে জমির দাম তিনগুণ হয়ে যাওয়ায় ব্যয় বেড়ে যায়। ওই সংশোধনীতে মেয়াদ ২ বছর বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। পরে করোনাভাইরাস মহামারিতে কাজের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হলে দুই বছর মেয়াদ বাড়িয়ে এই সময়সীমা নির্ধারণ করা হয় ২০২৪ সাল পর্যন্ত।