দেশ বিদেশ
আলোচনা সভায় ব্যবসায়ীরা
চাঁদাবাজি বন্ধ হলে মূল্যস্ফীতি কমবে
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বৃহস্পতিবারদেশে দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি চলমান রয়েছে। এটা কমানো সম্ভব হচ্ছে না। তবে চাঁদাবাজি বন্ধ হলে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে বলে মনে করেন দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, আগের মতো এখনো যাত্রাবাড়ী-কাওরান বাজারসহ অন্যান্য বাজারে চাঁদাবাজি হচ্ছে, কে তুলছে এসব চাঁদা? পরিবহনের চাঁদা বন্ধ হয়নি। পরিবহন-বাজারে চাঁদাবাজি বন্ধ হলে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে।
বুধবার রাজধানীর মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) কনফারেন্স হলে জাগো নিউজ আয়োজিত ‘ভোক্তার কাঁধে বাড়তি করের বোঝা: উত্তরণে করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় এসব কথা বলেন ব্যবসায়ীরা। এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, গণমাধ্যম থেকে শুনেছিলাম প্রতি রাতে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেড় কোটি টাকা চাঁদা পেতেন। এখন তো পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু চাঁদাবাজির কী পরিবর্তন হয়েছে? এখনো যাত্রাবাড়ীসহ অন্যান্য বাজারে চাঁদাবাজি হচ্ছে, কারা করছে, এটা বন্ধ করতে হবে। এটা বন্ধ না হলে মূল্যস্ফীতি কমবে না, কারণ পণ্যের দাম বাড়তি থাকবে। তিনি বলেন, পরিবহনের চাঁদাবাজিও বন্ধ হয়নি। আমাদের রপ্তানিমুখী শিল্পের পণ্যের গাড়ি শরীফ মেলামাইন কাঁচপুর ব্রিজ নারায়ণগঞ্জের কয়েকটি পয়েন্টে আটকানো হয়। সেখানে হয়রানি করা হচ্ছে রপ্তানিকারকদের। এ পয়েন্টগুলোয় গাড়ি আটকে এলসি’র কপি, ইউডি’র কপি চাওয়া হচ্ছে অথচ সেগুলো সব সময় নিয়ে যাওয়া কি সম্ভব? এরপরেই জরিমানা করা হচ্ছে, যেটার কোনো কারণ নেই। এসব অন্যায়ভাবে হয়রানি বন্ধ করা হোক। এ কারণে শিপমেন্ট বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, অনেক ব্যবসায়ী সঙ্গে সঙ্গে আমাকে জানালো আমি কথা বলি, সমাধানও হয়। সেটা ক’জনের সমাধান হবে। গতকালও ৩৯টি কোম্পানির গাড়ি আটকানো হয়েছিল। ৫/৬ জনেরটা ছাড়ানো সম্ভব হয়েছে। এই হয়রানি বন্ধ করা হোক।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য জিরো ভ্যাট বলা হলেও নানা অজুহাতে ভ্যাট বসানো হয়। হঠাৎ এক ব্যবসায়ীর ১১ কোটি টাকার ভ্যাট রেডি করছে কোনো সই ছাড়াই। পরে সেটার নেগোসিয়েশনের জন্য বলা হয়, পরে হয়তো সেটা ২/৩ কোটিতে দাঁড়ায়। রপ্তানির স্বার্থে, দেশের ভ্যাটের নামে হয়রানি চান না ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় মাস পূর্ণ হয়েছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমার মনে হয়, এ সময়ে অর্থনীতিতে সফলতা নেই বললেই চলে। আমাদের মৌলিক সমস্যা যেমন উচ্চ মূল্যস্ফীতি অথবা প্রবৃদ্ধির ধীরগতির কারণে অর্থনীতি অনেকটাই স্থবির হয়ে গেছে। অন্যান্য যেসব সমস্যা আছে সেখানেও খুব একটা সফলতা নেই। ফলে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকারের নেয়া অর্থনৈতিক নীতিগুলোর একটা সাধারণ ধরন রয়েছে। সেটা হচ্ছে, ভুল সময়ে ভুল সিদ্ধান্ত নেয়া। জানি না, সেটি কেন হচ্ছে। তার একটা বড় উদাহরণ, অর্থবছরের মাঝপথে ভ্যাটের হার বাড়ানো। এটা একটা ভুল সিদ্ধান্ত, ভুল সময়ে নেয়া হয়েছে।
খাদ্যপণ্যকে ভ্যাটমুক্ত রাখার দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ অটো বিস্কুট অ্যান্ড ব্রেড ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি শফিকুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, ‘কর ভ্যাটের জাঁতাকলে বিস্কুটের প্যাকেট আর কতো ছোট করবো আমরা? প্যাকেটে বিস্কুটের পরিমাণ আর কতো কমাবো? এভাবে ছোট আর কমাতে কমাতে খালি প্যাকেট দিতে হবে।’
কর ভ্যাটের হার যুক্তিযুক্ত করা হলে দেশ সুন্দরভাবে চলবে বলে মন্তব্য করেন প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সিইও আহসান খান চৌধুরী। তিনি বলেন, দেশকে এগিয়ে নিতে কর্মসংস্থান ও রাজস্ব বাড়াতে ব্যবসায়ীদের দরকার আছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সরকারের যোগাযোগ বাড়াতে হবে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেছেন, বছরে কোটি টাকা আয় করেন, এমন ৬৭ শতাংশ মানুষ করজালের বাইরে। দুই-তৃতীয়াংশ মানুষের আয় কোটি টাকার বেশি হলেও তারা করজালে নেই। এমন ফাঁপা করজাল বা ক্ষুদ্র করজাল দিয়ে কর-জিডিপি’র অনুপাত বাড়ানো যাবে না।
বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস এসোসিয়েশনের (বাপা) সভাপতি এম এ হাশেম বলেন, কর বৃদ্ধির কারণে ভোক্তাকেও বেশি দামে খাবার কিনতে হবে। কম দামে বিস্কুট, কেকসহ প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য মিলবে না। কৃষকের মতো সাধারণ মানুষও ভুগবে। সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন দেশের শ্রমজীবী, প্রান্তিক কৃষক ও নিম্ন আয়ের মানুষ। সরকারকে এটা চিন্তা করতে হবে।
জাগো নিউজ ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কে এম জিয়াউল হকের সঞ্চালনায় গোলটেবিলে বক্তব্য দেন সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী, পলিসি এঙচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এম মাসরুর রিয়াজ, রাজস্ব বোর্ডের সাবেক সদস্য রেজাউল হাসান, নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আশরাফ আহমেদ, তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল, কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি নাজের হোসাইন, এসিআই ফুডসের প্রধান ব্যবসা কর্মকর্তা ফারিয়া ইয়াসমিন, এসএমসি এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফ উদ্দিন নাসির, বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস এসোসিয়েশনের (বাপা) সভাপতি এম এ হাশেম, অর্থনীতি বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইআরএফ সভাপতি দৌলত আকতার মালা, সাবেক ব্যাংকার সাইফুল হোসেন ও সুপারমার্কেট ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন।