দেশ বিদেশ
সংস্কার না হলে ফ্যাসিবাদ ফিরে আসতে পারে: ড. আলী রীয়াজ
স্টাফ রিপোর্টার
২১ মার্চ ২০২৫, শুক্রবারসংস্কার শুধু সরকারের ইচ্ছার বিষয় নয় উল্লেখ করে সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি ড. আলী রীয়াজ বলেছেন, এটি রাজনৈতিক দল এবং নাগরিকদের বহুল আকাঙ্ক্ষিত বিষয়। তাই সংস্কারের বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা ও নাগরিক সনদ প্রণয়ন করতে হলে নাগরিকদের সোচ্চার হতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্যদিয়ে সরকার গঠিত হলেও ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থা ফিরে আসতে পারে। গতকাল সকালে সিরডাপ অডিটোরিয়ামে নাগরিক সংগঠন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর উদ্যোগে আয়োজিত ‘রাষ্ট্র সংস্কারে রাজনৈতিক ঐকমত্য ও নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে লিখিত প্রবন্ধ পাঠ করেন সংস্থাটির কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার।
ড. আলী রীয়াজ বলেন, রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্নটি উঠার কারণ হলো, বিগত ১৫ বছরে বাংলাদেশে ভঙ্গুর প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও ভঙ্গুর করে ফেলা হয়েছে। স্বাধীনতার পর বিগত ৫৪ বছরে কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়নি। আমরা দেখেছি, বিগত ১৫ বছরে বিচার বিভাগকে কীভাবে ধ্বংস করা হয়েছে। সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন না হলে, প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে পুনর্গঠিত করা না হলে সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্যদিয়ে সরকার গঠিত হলেও ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থা ফিরে আসতে পারে। তাই বাংলাদেশে ভবিষ্যতে স্বৈরতন্ত্রের পুনরুত্থান ঠেকাতে কাঠামোগত পরিবর্তন করতে হবে, জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র গড়ে তুলতে হলে সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, শেখ হাসিনা দেশে স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই ব্যবস্থায় পৌঁছাতে তার ১৫ বছর লেগেছে। তিনি নির্বাচন ব্যবস্থা ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ভেঙে দিয়েছিলেন। ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের কারণে শেখ হাসিনার পলায়নের পর আমাদের রাষ্ট্র কাঠামোকে নতুন করে গড়ে তোলার এক অপূর্ব সুযোগ তৈরি হয়েছে। এ লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কাজ করছে, যাতে একটি নাগরিক সনদ তৈরি করা যায়। তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকারের তিনটি ম্যান্ডেট। একটি হলো, স্বৈরাচারী ব্যবস্থা যাতে আবার ফিরে আসতে না পারে সেজন্য কতোগুলো গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার করা, দ্বিতীয়ত মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষীদের বিচারের আওতায় আনা, তৃতীয়ত একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন আয়োজন করা। এগুলো একইসঙ্গে হতে পারে, কোনোটি অপরের সঙ্গে সংঘর্ষিক নয়।
অনুষ্ঠানে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক বলেন, বিচার বিভাগ নিয়ে অতীতে বিভিন্ন প্রশ্ন ও বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন তার প্রতিবেদনে এসব বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করেছে এবং প্রয়োজনীয় সুপারিশ তুলে ধরেছে। আমি মনে করি, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার বলেন, অতীতে সংস্কার একটি গালিতে পরিণত হলেও সংস্কার এখন বহুল আকাঙ্ক্ষিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে। আমি মনে করি, সংস্কারের পূর্বে আমাদের রাষ্ট্র ভাবনা কেমন হবে তা পরিষ্কার করা উচিত। আমাদের দুর্ভাগ্য যে, বাংলাদেশে কখনোই রাষ্ট্র ভাবনা ও রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে সুচিন্তিত উদ্যোগ নেয়া হয়নি। স্বাধীনতার পর সংবিধান প্রবর্তনের অল্প কিছুকাল পরেই এতে নানান সমস্যা পরিলক্ষিত হয়েছে। ফলে সংবিধানে অনেকগুলো সংশোধনী আনতে হয়েছে। কিন্তু বেশির ভাগ সংশোধনী আনা হয়েছে ব্যক্তিস্বার্থে। বিগত ১৬ বছরের অভিজ্ঞতার ফলে সংস্কার একটি অনিবার্য বাস্তবতা এবং এক্ষেত্রে একটি স্ট্যান্ড তৈরি হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
পাঠকের মতামত
100% right