দেশ বিদেশ
কানাডায় কার্নি ও লিবারেল পার্টির অসাধারণ জয়
মানবজমিন ডেস্ক
৩০ এপ্রিল ২০২৫, বুধবারকানাডার জাতীয় নির্বাচনে জয় পেয়েছে মার্ক কার্নি নেতৃত্বাধীন লিবারেল পার্টি। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে শুল্ক আলোচনায় জোরালো ভূমিকা রাখতে দলটির যে সংখ্যাগরিষ্ঠাতা প্রয়োজন তা পূরণ হয়নি। ভিন্ন এক রাজনৈতিক পরিবেশে ২৮শে এপ্রিল ভোট দিয়েছে কানাডার জনগণ। জয় পাওয়ার পর মার্ক কার্নি প্রথম ভাষণে সমর্থকদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, (যুক্তরাষ্ট্রের) প্রেসিডেন্ট (ডনাল্ড) ট্রাম্প আমাদেরকে (কানাডা) ভেঙে ফেলার চেষ্টা করছেন, যাতে আমাদেরকে (কানাডা) নিজেদের বলে দাবি করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু তা কখনো হতে দেবো না। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স, অনলাইন বিবিসি। নির্বাচনে আগে ধারণা করা হচ্ছিল, কানাডার পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হবেন রক্ষণশীল দলের পিয়েরে পোইলিভরে। কিন্তু তিনি নিজের আসনে পরাজিত হওয়ার পথে আছেন বলে প্রক্ষেপণে বলা হচ্ছে। ওদিকে মার্ক কার্নির জয়কে কানাডার রাজনীতির ইতিহাসে অসাধারণ জয় বলে অভিহিত করেছেন বিবিসির সাংবাদিক লিসি ডচেট। কানাডার হাউস অব কমন্সের জন্য মোট নির্বাচনী আসনের সংখ্যা ৩৪৩টি। এর মধ্যে কোনো দল যদি ১৭২টি আসনে জয় পায় তাহলে তারা হাউস কমন্সে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। এক্ষেত্রে ছোট ছোট দলগুলোর সমর্থন ছাড়াই তারা দেশ শাসনের সুযোগ পায়। স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, বুথ ফেরত ফলাফল থেকে জানা গেছে- লিবারেলরা ১৬১টি আসনে জয় পেয়েছে। অন্যদিকে কনজারভেটিভরা পেয়েছে ১৫০টি আসন। কানাডার সর্বপশ্চিমের প্রদেশ হচ্ছে বৃটিশ কলাম্বিয়া। সবচেয়ে বেশি সময় ধরে এখানে ভোট গ্রহণ হয়েছে। এই প্রদেশের ওপরই লিবারেলদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের ভাগ্য ঝুলে আছে। এখানে বলে রাখা ভালো, কানাডার সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে কোনো সরকারই আড়াই বছরের বেশি স্থায়ী হয় না। জরিপকারী সংস্থা অ্যাঙ্গাস রিড ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট শচি কুর্ল রয়টার্সকে বলেছেন, লিবারেলদের জয়ের পেছনে তিনটি বিষয় কাজ করেছে। সেগুলো হচ্ছে বিরোধী কনজারভেটিভ দল, ট্রাম্পের শুল্ক এবং প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ট্রুডোর সরে যাওয়া। এসব কারণেই অনেক বামপন্থি ও ঐতিহ্যবাহী উদারপন্থি ভোটারদের দলে ধরে রাখতে পেরেছে লিবারেলরা। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে কার্যকরী বিষয় ছিল দিন দিন অজনপ্রিয় হয়ে পড়ায় প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে জাস্টিন ট্রুডোর পদত্যাগ। এ বছরের শুরুতে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বেশ কিছু মন্তব্য কানাডার জনগণের মধ্যে দেশপ্রেমের গতি বাড়িয়ে দেয়। তার মধ্যে একটি ছিল- কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য করার প্রস্তাব। সেসময় এর কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন কার্নি। পাশাপাশি তিনি কানাডার ওপর ট্রাম্পের অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের বিষয়ে কঠোর অবস্থান ব্যক্ত করেন এবং তা মোকাবিলা করার অঙ্গীকার করেন। তিনি বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরতা কমাতে কানাডাকে বিলিয়ন বিলিয়ন অর্থ ব্যয় করতে হবে। তবে সেসময় টানা নয় বছরের উদারপন্থি শাসনের অবসানের জন্য কার্নির কিছুটা বিরোধিতা করেছিলেন রক্ষণশীলরা। মার্ক কার্নি এর আগে ব্যাংক অব কানাডা ও ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের গভর্নর ছিলেন এবং সমপ্রতি রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন। লিবারেলদের মধ্যমপন্থি অবস্থানকে সামনে এনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। নির্বাচনের সময় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধ, শুল্ক বৃদ্ধি এবং কৌশলগত হুমকিকে কাজে লাগিয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন তিনি।
লিবারেল দল এবং মার্ক কার্নির এই জয়কে অকল্পনীয় বলে মন্তব্য করেছেন বিবিসির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক প্রধান প্রতিবেদক লিসি ডচেট। তিনি একে কানাডার রাজনীতির ইতিহাসে অসাধারণ মুহূর্ত বলে অভিহিত করেছেন। ওদিকে মার্ক কার্নির জয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। রাশিয়ার পরেই কানাডায় ইউক্রেনের সবচেয়ে বেশি অভিবাসী অবস্থান করেন। তিনি এঙে দ্ব্যর্থহীন সমর্থন দেয়ার জন্য কানাডা ও এর জনগণকে স্মরণ করেন। তিনি কানাডার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন। কানাডার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে আগ্রহী চীন। অথচ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের সঙ্গে কানাডার ছিল টান টান সম্পর্ক। তারপরও পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে কানাডার সঙ্গে এমন সম্পর্কের কথা জানিয়েছে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে কার্নির জয়ে তারা সরাসরি অভিনন্দন জানানো থেকে বিরত থেকেছে। মন্ত্রণালয় বলেছে, পারস্পরিক সম্মান, সমতা এবং সুযোগ সুবিধার নীতির ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠতে এই সম্পর্ক। মার্ক কার্নির জয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার, ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন, আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মিকায়েল মার্টিন, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ। উরসুলা ভন ডার লিয়েন কানাডা ও ইউরোপের শক্তিশালী বন্ধনের উল্লেখ করেন। কার্নির সমর্থনে তিনি মুক্ত ও সুষ্ঠু বাণিজ্যের আশা প্রকাশ করেন। ইমানুয়েল ম্যাক্রন তার আচরিত শব্দ ‘এলবো-টু-এলবো’ অর্থাৎ কনুইয়ের সঙ্গে কনুই মিশিয়ে আপনার সঙ্গে কাজ করতে চাই বলে মন্তব্য করেছেন। আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আয়ারল্যান্ড ও কানাডার সম্পর্ক অনেক গভীর ও শক্তিশালী। এই সম্পর্ক গড়ে উঠেছে অভিন্ন মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করে। অ্যান্থনি আলবানিজ তার কমনওয়েলথ অংশীদার মার্ক কার্নির প্রশংসা করেছেন। বলেছেন, বৈশ্বিক এক অনিশ্চিত সময়ে আপনার সঙ্গে টেকসই বন্ধুত্বের ভিত্তিতে অব্যাহতভাবে কাজ করতে চাই।