খেলা
দেশের ক্রিকেটে ঘুনপোকা
‘ক্রিকেটাররা এখন স্বপ্ন দেখে না’
ইশতিয়াক পারভেজ
২৫ মে ২০২৫, রবিবার
বাংলাদেশ ক্রিকেটে যেন ঘুনপোকা বাসা বেঁধেছে। কাঠের মতো উপরটা চকচক করলেও ভিতরে ভিতরে হচ্ছে ক্ষয়। উন্নতির গ্রাফটা নিম্নমুখী। তিন ফরম্যাটেই ব্যাটিং ব্যর্থতা দলকে কুরে কুরে খাচ্ছে। গতকাল শেষ হওয়া নিউজিল্যান্ড ‘এ’ দলের বিপক্ষে চারদিনের সিরিজ হেরেছে বাংলাদেশ ‘এ’ দল। সিলেটে প্রথম ম্যাচে হার, মিরপুরে টেনেটুনে ড্র! দুই ম্যাচেই টাইগার ব্যাটারদের দৃষ্টিকটু আত্মহনন। দায়টা আসলে কার! ম্যাচ শেষে অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহানের অজুহাতটা দেশের ক্রিকেট কালচার ও সুযোগসুবিধা নিয়ে। গেল কয়েক বছর ধরেই এই অজুহাতটা যেন অলিখিত কালচারেই পরিণত হয়েছে। যার সঙ্গে একমত নন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন। ক্রমাগত দলের ব্যর্থতার কারণটা তার কাছে ভিন্ন। দৈনিক মানবজমিনকে বাশার বলেন, ‘দেখেন আমার কাছে মনে হয় ক্রিকেটাররা এখন আর স্বপ্ন দেখে না। বিরাট কোহলি ভারতের অন্যতম ব্যাটার এখন। তামিম ইকবাল যখন খেলেছেন তিনি দলের এক নাম্বার ব্যাটার। আর সাকিব আল হাসান অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। তাদের নিজেদের একটা লক্ষ্য, স্বপ্ন ছিল এক নাম্বার হবো। আমি নিজে যখন খেলেছি আমারও তেমনই স্বপ্ন নিয়ে এগিয়েছি। কিন্তু আমি তো এখন ক্রিকেটাররা স্বপ্ন দেখে সেটি দেখতে পাই না। যখন নিজেকে সেরার তালিকায় রাখার চেষ্টা থাকবে তখন পাফরম্যান্সটাই বড় হয়ে সামনে আসবে অন্য কিছু নয়।’ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ‘এ’ দলের চার দিনের ম্যাচের সিরিজ শেষে অধিনায়ক নূরুল হাসান সোহান দেশের ক্রিকেট কালচারের পরিবর্তন চেয়েছেন।
সোহান ভারতের উদাহারণ টেনে বলেন, ‘২০২২ সালে আমাদের যে কোচ (শ্রীধরণ শ্রীরাম) ছিলেন ওনার কাছে জানতে চাই ভারতীয় ক্রিকেটাররা অভিষেকে এসেই ভালো করে, এত রান করে কীভাবে। উনি বলেছিলেন ভারতীয় ক্রিকেটাররা তাদের ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তা করে না। জাতীয় দলে না খেলতে পারলে আমরা চিন্তায়ে পড়ে যাই কিন্তু ওদের এই অবস্থা হয় না। তারা জাতীয় দলে সুযোগ না পেলেও আইপিএল, রঞ্জী, ভারতের বিভিন্ন ঘরোয়া লীগ এমনকি রাজ্য লীগ খেলেও ভালো অর্থ উপার্জন করে। এই জিনিসটা আমরাও চাই। কিন্তু ক্রিকেটাররাই এককভাবে এটা চাইলে তো হবে না।’ হাবিবুল বাশার সুমন অবশ্য মনে করেন এখন যত সুযোগ সুবিধা তার চেয়ে অর্ধেকে বেড়ে উঠেছেন সাকিব, তামিম, মাশরাফিরা। তাদের সময়টাতেও ছিল না এখনকার মতো জাঁকজমক। তিনি বলেন, ‘এটা তো সত্যি যে এখন যে সুযোগ সুবিধা বা অর্থবিত্ত তা সাকিব, তামিমদের সময় ছিল না। তারা তো অল্পতেই নিজেদেরকে আলোতে এনেছেন। আমাদের সময় তো আরো কম ছিল সুযোগ-সুবিধা। আমরা একটা টেস্ট খেলতাম চেষ্টা করতাম ম্যাচটা বাঁচাতে হবে। সাকিবরা যখন খেলেছে তাদের মধ্যে ছিল র্যাঙ্কিংয়ে এক থেকে দশে থাকতে হবে। এখনকার ক্রিকেটাররা কি সেই রকম স্বপ্ন দেখেন? আমার তো মনে হয় না। যদি নিজেদের ব্যক্তিগত লক্ষ্য ঠিক থাকে তাহলে অন্য কিছু ভাবার সুযোগ আসে না। সমস্যাটা ক্রিকেটারদের বড় স্বপ্ন দেখার ব্যর্থতাতেই।’
দলের ব্যাটিং ব্যর্থতা এখন দুশ্চিন্তার কারণ। যে কোনো ফরম্যাটে দল বেশির ভাগ ম্যাচ হারছে ব্যাটিংয়ের জন্যই। তাহলে কোটি কোটি টাকা খরচ করে এত এত স্পেশালিষ্ট কোচ এনে কী লাভ? প্রশ্ন হচ্ছে কোচরা কি অযোগ্য যে তারা শেখাতে পারছেন না? নাকি ক্রিকেটারদেরই ব্যর্থতা? এ নিয়ে বাশার বলেন, ‘আমার মনে হয় না কোচ বা কোচিংয়ে কোনো সমস্যা আছে। আগের চেয়ে অনেক অনেক ভালো এখন সুযোগ সুবিধা। যদি অর্থের কথা বলেন সেটাও কম নয়। একজন ক্রিকেটার জাতীয় দলে না খেললেও তার আয় বেশ ভালো। আমি বারবারই বলছি ক্রিকেটারদের লক্ষ্য স্থির করতে হবে। দলকে তারা কোথায় দেখতে চায় নিজেদের তারা কোথায় দেখতে চায়। এটি না হলে যেমন চলছে তাই হবে। ক্রিকেটারদের বড় স্বপ্ন দেখতে হবে। স্বপ্ন না থাকলে উন্নতিও হবে না।’
পাঠকের মতামত
দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে একজন ক্রিকেটারের কোনো অবদান আছে ? কাটুক ওদেরকে ঘুনপোকায়।