ঢাকা, ৫ জুলাই ২০২৫, শনিবার, ২১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৮ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

বাংলারজমিন

৪৫ বছর ধরে পথে পথে বাঁশি বিক্রি করে সংসার চালান বাবলু

দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) প্রতিনিধি
২ জুলাই ২০২৫, বুধবার

জীবনের বাঁশির সুর মানব জীবনের দুঃখ-আনন্দ,  প্রেম-বিরহ এবং প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের গভীরতা প্রকাশ করে। তাই বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর কবিতার সঙ্গে পোড়াদহের বংশীবাদক বাবলুর জীবন যেন এক সূত্রে গাঁথা। প্রায় মাঝে-মধ্যে বংশীবাদক বাবলুকে দেখা যায় চুয়াডাঙ্গা, দামুড়হুদা, দর্শনাসহ বিভিন্ন শহরে ও গ্রামগঞ্জে। ঠিক তেমনি মঙ্গলবার দেখা মেলে দামুড়হুদা বাসস্ট্যান্ডে। জীবনের ৪৫ বছর বাঁশি বাজিয়ে ও বিক্রি করে পার করছেন পোড়াদহের ইয়াকুব আলীর ছেলে বাবলু।
বয়স ৬০ ছুঁই ছুঁই। এই বয়সে শহর, গ্রাম, রেলস্টেশন আর পথে পথে ঘুরে বাঁশির সুর তুলে বিক্রি করছেন বাঁশের বাঁশি। প্রকার ভেদে প্রতিটি বাঁশি বিক্রি করেন ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়। কীভাবে বাঁশি বাজাতে হয় তা আবার ক্রেতাকে সুন্দরভাবে শিখিয়ে দেন। সেই ১৫ বছর বয়সে গ্রামের ওস্তাদ ইস্রাফিলের কাছে বাবলুর বাঁশি বাজানো শেখা। সেই থেকে সুরও আয়ত্ত করেছেন কয়েকশ’ গানের। পল্লীগীতি, ভাওয়াইয়া, লালনগীতি, বিচ্ছেদ ও পুরনো বাংলা সিনেমার গানের সুরও তুলতে পারেন বাবলু। দীর্ঘদিন ধরে পথে পথে, বাজারে, রেলস্টেশনে, পার্কে, বাঁশি বিক্রি করেন। অনেক সময়  বাঁশি বাজিয়েও অনেকে টাকা দেন  শ্রোতারা। কীভাবে বাঁশি বাজাতে হয়, তা আবার ক্রেতাকে শিখিয়ে দেন। এ দিয়ে যা আয় হয়। তাই দিয়ে সংসার চালান বাবলু। দুই মেয়ে ছেলে আর স্ত্রী নিয়ে তার সংসার। লেখাপড়া তেমন কিছু জানলেও প্রাথমিক গণ্ডি পার করতে পারেনি। 
জন্মের পর থেকেই  দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত বাবলু। যার কারণে পড়ালেখা হয়নি। অল্প বয়স থেকেই আয় রোজগারের দিকে ঝুঁকতে হয়েছে তাকে। এখনো তাই বেশি আয়ের আশায় এক শহর থেকে আরেক শহর ও এক গ্রাম হতে অন্য গ্রামের পথে পথে সংসারের ব্যয় মিটানোর জন্য বাঁশি বিক্রি করে থাকেন বাবলু। বাঁশি বিক্রি করে যা আয় হয় তা দিয়ে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া ও সংসার চালান বাবলু। বাবলু বলেন, প্রতিদিন সকালে পোড়াদহ থেকে ট্রেনযোগে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন শহরে ও গ্রামে বাঁশি বাজিয়ে, বাঁশি বিক্রি করে থাকি। প্রতিদিন গড়ে খরচ খরচা বাদে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা থাকে।  তা দিয়ে কোনোমতে সাংসার চলে যায়। পথে পথে ঘুরে বাঁশির সুর তোলা আর মানুষকে আকৃষ্ট করাই আমার ব্যবসা। কেউ বাঁশি শুনে খুশি হয়ে এক কাপ চা খেতে বলে। আবার কেহ বকশিস দেয়। কেউবা বাঁশি কিনে নেয়।
এ সময় বাবলু আক্ষেপ করে বলেন, অনিশ্চিত জীবন নিয়েই দেশের দরিদ্র মানুষেরা বেঁচে আছেন। জন্মই যেন আজন্ম পাপ। তাই অনেক সময় নীরবে বসে বসে কাঁদে আর বেদনার সুর তোলেন এই বংশীবাদক। কথা শেষ হতেই বাঁশিতে সুর তোলেন, পুরাতন সিনেমার গান ‘ওরে ও বাঁশি আওয়ালা আমারি মনে জ্বালা, সইতে যে আর পারি না, পিরিত মানেই যন্ত্রণা’।

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status