বাংলারজমিন
বিদ্যালয়ে ঢুকে শিক্ষার্থী ও নারী কর্মকর্তাকে পেটালেন যুবদল নেতা
স্টাফ রিপোর্টার, মানিকগঞ্জ থেকে
২ জুলাই ২০২৫, বুধবার
অভিযুক্ত যুবদল নেতা মো. মোর্শেদ কুলি খান মিনার
বিদ্যালয় চলাকালীন অবস্থায় এক শিক্ষার্থী ও নারী কর্মকর্তাকে দলবল নিয়ে বেধড়ক পিটিয়েছেন এক যুবদল নেতা। বর্তমানে তিনি আপসের মাধ্যমে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছেন। ঘটনাটি ঘটেছে মানিকগঞ্জের ঘিওর থানার ফুলহারা আঞ্চলিক উচ্চ বিদ্যালয়ে। অভিযুক্ত যুবদল নেতা মো. মোর্শেদ কুলি খান মিনার বড়টিয়া ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক। স্কুল চলাকালীন সময়ে জোরপূর্বক শিক্ষকদের রুমে ঢুকে ১৩ বছর বয়সী রিয়াদ নামে এক ছাত্রকে মেরে হাত ভেঙে দেন। সেই সঙ্গে তার মা ও বিদ্যালয়টির অফিস কর্মকর্তা ইয়াসমিন আক্তারকেও আঘাত করেন।
হামলার ঘটনায় অভিযোগ দায়ের করেছেন ইয়াসমিন আক্তার। পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেছেন মিনারও। অভিযোগ অনুযায়ী, মিনারের ছেলে এবং ভুক্তভোগী একই স্কুলে পড়াশোনা করে। মিনারের ছেলে ও ইয়াসমিন আক্তারের ছেলের কথাকাটাকাটি হয়। যা এক পর্যায়ে হাতাহাতির পর্যায়ে চলে যায়। দু’পক্ষই প্রথমে মারধর করার অভিযোগ করেন। এই বিষয়টিকে সামনে এনে গত রোববার মিনার স্কুলে গিয়ে হামলা করেন। রিয়াদ নিজেকে বাঁচাতে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কক্ষে যায়। মিনার ও তার দলবল শিক্ষকদের রুমে ঢুকে রিয়াদের ওপর চড়াও হয়। শিক্ষক এবং কর্মকর্তারা ফেরাতে আসলে তাদের ওপরও চড়াও হয়। ইয়াসমিনের গলায় থাকা স্বর্ণের চেইনটিও ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এরপর শিক্ষকরা তাদের বাঁচাতে রিয়াদ ও তার মাকে রুমের ভেতরে তালা দিয়ে রাখে। ভুক্তভোগীদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে হাসপাতালে নিয়ে যাবার সময় ফের আক্রমণ করা হয়। এমতাবস্থায় তাদেরকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য মানিকগঞ্জ মুন্নু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাদের অভিযোগ, ঘিওর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হলেও অদৃশ্য কারণে তদন্ত কর্মকর্তা ঘটনাটির মীমাংসা করে নিতে বলছেন। ইয়াসমিন আক্তার বলেন, আমরা অসহায় এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। মিনার এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী।
তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, ভূমি দখল, মাদক ব্যবসা, অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু ব্যবসাসহ নানাবিধ অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। মিনার এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী হওয়ার করণে স্কুলের প্রধান শিক্ষক শিল্পী আক্তারসহ কেউ মুখ খুলছেন না। এমনকি স্কুল চলাকালীন সময়ে স্কুলের ভেতরে এতবড় ঘটনা ঘটার পরেও স্কুলের পক্ষ থেকে কোনো আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এ বিষয়ে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক শিল্পী আক্তার অপারগতা প্রকাশ করেছেন।
জানা যায়, অভিযুক্তদের আত্মীয় বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি লোকমান হোসেন। তিনি বলেন, দুইপক্ষকে নিয়ে বসার প্রক্রিয়া চলছে। এখানে আপস ছাড়া আর কিছু করা নেই। এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা যা সিদ্ধান্ত নেবেন তাই হবে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সালামত হোসেন বলেন, আমি সরজমিন তদন্ত করেছি। প্রথমে দুই শিক্ষার্থীর মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। এরপর তা হাতাহাতির পর্যায়ে চলে যায়। স্কুল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সমাধানের কথা বলছে। আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছি। উপজেলা শিক্ষা অফিসার এবিএম আব্দুল হান্নান বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন। তাকে জানানো হলে তিনি অতিসত্বর খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত মিনার অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলেকে মেরেছে। আমি শুধু তাদের ফিরাইছি’।