বাংলারজমিন
লাখাইয়ে কাবিখা প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ
লাখাই (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি
৪ জুলাই ২০২৫, শুক্রবারহবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার ৫ নম্বর করাব ইউনিয়নে কাবিখা (কাজের বিনিময়ে খাদ্য) প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ের কাজে ব্যবহৃত সাইনবোর্ডে প্রয়োজনীয় তথ্য, বিশেষ করে প্রকল্পের ব্যয় উল্লেখ না থাকায় স্থানীয় জনগণের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। এমনকি গ্রামবাসীর নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত সড়কেও রহস্যজনকভাবে কাবিখা প্রকল্পের সাইনবোর্ড লাগিয়ে অর্থ আত্মসাতের চেষ্টার অভিযোগ করছেন স্থানীয়রা। জানা গেছে, প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রতিটি রাস্তায় দৃশ্যমান সাইনবোর্ড লাগানো বাধ্যতামূলক এবং তাতে প্রকল্পের ব্যয়, রাস্তার দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও প্রকল্পের সভাপতির নাম উল্লেখ থাকার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু ওই ইউনিয়নের বহু স্থানে লাগানো সাইনবোর্ডে শুধুমাত্র প্রকল্পের নাম ও সভাপতির নাম উল্লেখ থাকলেও প্রকল্পের বরাদ্দকৃত অর্থ বা রাস্তার বিস্তারিত তথ্য অনুপস্থিত। এভাবেই দীর্ঘদিন ধরে কাজ চললেও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন (পিআই) অফিস এসব বিল পরিশোধ করে যাচ্ছে, যা নিয়ে সচেতন মহল প্রশ্ন তুলেছে।
তবে, চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে ৫ নম্বর করাব ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মনতৈল গ্রামে। স্থানীয় আক্তার মিয়ার দোকান থেকে মনতৈল বড় কাল পর্যন্ত একটি রাস্তা তিন থেকে চার মাস আগে গ্রামবাসী নিজেদের উদ্যোগে প্রায় ৩১ হাজার টাকা ব্যয়ে মাটি ভরাট করে সংস্কার করে। অথচ গত ৩০শে জুন হঠাৎ করে এই রাস্তার পাশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার কাবিখা প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়, অর্থ বছর ২০২৪-২৫ লেখা একটি সাইনবোর্ড লাগানো হয়। এই সাইনবোর্ডেও কোনো অর্থের পরিমাণ, রাস্তার আয়তন বা সময়সীমা উল্লেখ ছিল না। এলাকাবাসীর দাবি, এই রাস্তায় কাবিখা প্রকল্পের আওতায় কোনো কাজই করা হয়নি। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, সাইনবোর্ড লাগানোর পর ৭-৮ ট্রলি মাটি এনে রাস্তার কিছু অংশে ফেলা হয়, যা “শাক দিয়ে মাছ ঢাকার” মতোই বলে মনে করছেন তারা। এই প্রকল্পে ৩.২১০ টন চাল বরাদ্দ দেখানো হয়েছে।
প্রকল্পের সভাপতি ও ইউপি সদস্য তাসলিমা আক্তার জানান, সাইনবোর্ড থেকে শুরু করে যাবতীয় সবকিছু চেয়ারম্যান সাহেব করেছেন। আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। তবে তিনি জানান, এই রাস্তায় যে বরাদ্দকৃত টাকা এসেছে, তা থেকে গ্রামবাসী নিজেদের অর্থে যে মাটি ভরাট করেছে, সেই টাকা তাদের দিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে এবং বাকি টাকা পরিষদে রেখে দেয়া হবে। এই সিদ্ধান্ত কে নিয়েছে জানতে চাইলে তিনি ইউপি চেয়ারম্যান কুদ্দুস সাহেবের নাম উল্লেখ করেন। এটি নিয়ম বহির্ভূত কি না জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে অজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
৫ নম্বর করাব ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস বলেন, আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি প্রকল্পের টাকা থেকে গ্রামবাসীর জন্য যে টাকা ব্যয় করে রাস্তার মাটি ভরাট করেছে সেই টাকা ফেরত দেবো। এটি নিয়মে আছে কি না জানতে চাইলে তিনি সঠিক উত্তর দিতে পারেননি। তিনি সাবেক মেম্বার আলী আকবরকে সঙ্গে নিয়ে এই সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানান।
এ ব্যাপারে সাবেক ইউপি সদস্য আলী আকবরের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, প্রায় একমাস আগে চেয়ারম্যান আমাকে বিষয়টি জানিয়েছেন। চেয়ারম্যান বলেছেন, যাদের টাকায় রাস্তাটি হয়েছে তাদের টাকা ফেরত দিয়ে দেবে। তবে চেষ্টা করে দেখি একটি প্রকল্প এ রাস্তা দিয়ে আনতে পারি কি না।
স্থানীয়দের প্রশ্ন- যখন তারা নিজেদের অর্থ ও শ্রমে রাস্তার কাজ করেছেন, তখন কেন সেই রাস্তায় কাবিখা প্রকল্পের সাইনবোর্ড লাগানো হবে? যেখানে সাইনবোর্ডে বরাদ্দকৃত ব্যয় ও বিস্তারিত তথ্য থাকা বাধ্যতামূলক, সেখানে এগুলো ছাড়া কীভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বিল অনুমোদন করছেন, তা নিয়ে জনগণের মধ্যে সংশয় তৈরি হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম রাকিব সাইনবোর্ডে রাস্তার দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ না থাকা সত্ত্বেও কীভাবে বিল পরিশোধ করা হচ্ছে, এই প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। তিনি বলেন, এগুলো আস্তে আস্তে অভ্যস্ত হবে। সঠিক তদারকি না করার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি আবারো সদুত্তর দিতে ব্যর্থ হন। প্রকল্পের বরাদ্দকৃত টাকা থেকে গ্রামবাসীর ব্যয় করা অর্থ ফেরত দেয়ার কোনো নিয়ম আছে কি না জানতে চাইলে তিনি এ ধরনের কোনো নিয়ম নেই বলে জানান।