ঢাকা, ৯ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার, ২৬ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শাওয়াল ১৪৪৬ হিঃ

বাংলারজমিন

ঘুষের হাট রায়পুর সাব রেজিস্ট্রার অফিস

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
২৭ মার্চ ২০২৫, বৃহস্পতিবারmzamin

নেই কোনো নিয়োগপত্র। ভয় নেই চাকরি হারানোর। অথচ তার দাপটের কাছে অসহায় রায়পুর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের দলিল লেখক ও গ্রাহকরা। বলা চলে সাব-রেজিস্ট্রার ইউনুস সোহেলের সব অবৈধ লেনদেন নিয়ন্ত্রণ করেন ঝাড়ুদার সোহেল। যদিও দৈনিক ৬০ টাকা মজুরির চাকরিজীবী তারপরও অনেক সময় দেখা যায় তিনি চেয়ার টেবিল নিয়ে বসে থাকেন অফিসারের মতো। এমনই ব্যক্তিরা হচ্ছেন রায়পুর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের নৈশপ্রহরী কাম ঝাড়ুদার সোহেল ও নকলনবিশ কামরুল ইসলাম। রায়পুর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের দৈনিক ৬০ টাকা বেতনের নৈশপ্রহরী কাম ঝাড়ুদার সোহেল। যদিও তার দায়িত্ব রাতে কিন্তু তাকে দেখা যায় এজলাস চলাকালীন সময়ে সাব-রেজিস্ট্রার ইউনুস সোহেলের ঠিক ডান পাশে। সেখান টেবিলে ভর করে দাঁড়িয়ে থেকে কি এমন কাজ করেন আর কেনই বা সাব-রেজিস্ট্রার একজন নৈশপ্রহরীকে এত ঘনিষ্ঠ ভেবে প্রশ্রয় দেন প্রশ্ন জনমনে? দলিল সম্পাদন, বালাম বহির অনাধিকার চর্চা আর তল্লাশি প্রতিবেদনের জন্য অতিরিক্ত অর্থ দাবিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে নৈশপ্রহরী কাম ঝাড়ুদার সোহেলের বিরুদ্ধে। তার কথাবার্তায় মনে হয় দাপ্তরিক কার্যক্রম যেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এমন একটি ভিডিও ক্লিপও পাওয়া গেছে। সেখানে দেখা যায়, বালাম বহি বের করে কলম হাতে কি যেন খুঁজেই চলছে অভিযুক্ত সোহেল আর নকলনবিশ কামরুল ইসলাম। ভ্রুক্ষেপ নেই সেবাগ্রহীতাদের দিকে। সে সময়ের সাব- রেজিস্ট্রার আবুল কালাম ছিলেন সোহেলের অপকর্মের হোতা। তাদের অপকর্ম জানাজানি হলে দুদক অভিযান চালিয়ে সাব-রেজিস্ট্রার আবুল কালাম আজাদের ও সোহেলের মোবাইল অফিসের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র জব্দ করে। এত সমালোচনার পরও আবুল কালাম আজাদ পুনরায় লক্ষ্মীপুর জেলায় আসার তদবির চালান।

অভিযোগ রয়েছে সোহেলের অপকর্ম ধামাচাপা দিতে ২০শে অক্টোবর সে সময়ের জেলা রেজিস্ট্রার লোকমান হোসেন তাকে কমলনগরে বদলি করা হয়। কিন্তু সোহেল কর্মকর্তাদের বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে কমলনগর না এসে রায়পুর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসেই থেকে যান। পরে ২৯শে অক্টোবর সোহেলকে বরখাস্ত করা হয়। পুনরায় বরখাস্ত আদেশ রাতের অন্ধকারে প্রত্যাহার করেন তৎকালীন জেলা রেজিস্ট্রার লোকমান। আবার তাকে পুনর্বহাল রাখেন রায়পুর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে। এরপর থেকে চলছে পুরনো কারবার। জেলা জুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে কতো টাকার বিনিময়ে ঝাড়ুদার সোহেলের একমাসে তিন আদেশ। এ ছাড়া রায়পুর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের অফিস সহকারী (কেরানি) আছমা আকতারের ঘুষ বাণিজ্য ওপেন সিক্রেট। ঘুষের টাকা তিনি অফিসের টেবিলের নিচে রেখে হিসাব করতে দেখা যাচ্ছে। আছমা আকতারের পরিবারের সাতজন সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে কর্মরত। আছমাদের মতো একই কাজ করছেন রামগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের অফিস সহকারী ফরিদ, চন্দ্রগঞ্জের শাহ আজিজুর রহমান রাসেল।
অপরদিকে, রায়পুর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে যোগদানের পর থেকেই সপ্তাহে ৩ দিন অফিস করছেন উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার মো. ইউনুস সোহেল। যোগদানের পর থেকেই এমনিভাবেই সপ্তাহে দু’দিন বিনা ছুটিতে অফিসে না এসেই নিজের ইচ্ছামতো চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

জানা গেছে, রামগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রার মো. সিরাজুল হক। যোগদানের পর থেকেই তিনি সপ্তাহে রবি, সোম ও মঙ্গলবার অফিস করছেন, বাকি দু’দিন ঢাকায় থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে। রামগতি, কমলনগর, চন্দ্রগঞ্জসহ লক্ষ্মীপুর জেলার সবক’টি সাব-রেজিস্ট্রার অফিস সরকারি নিয়ম মোতাবেক ৫ দিন করে নিয়মিত অফিস করার কথা থাকলেও কেউ করেন রোববার, সোমবার, কেউ করেন সোমবার/মঙ্গলবার, কেউ মঙ্গলবার, বুধবার। বেশির ভাগ বুধ ও বৃহস্পতিবার তাদের না পেয়ে সেবাপ্রত্যাশীরা ভোগান্তিতে পড়েন।

সেবাপ্রত্যাশী কয়েকজন জানান, সাব-রেজিস্ট্রার কোনো দিন অফিস করেন কিংবা না করেন তা আমাদের জানা নেই। লোকমুখে শুনি তিনি ৩ দিন অফিস করেন। কিন্তু প্রতি বুধ ও বৃহস্পতিবার নিজ কার্যালয়ে থাকেননি তারা। সেবাপ্রত্যাশীদের অভিযোগ, সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের কর্মকর্তারা অফিসিয়াল কাজের নানা অজুহাত দেখিয়ে এবং কোনো ধরনের ছুটি ছাড়াই অফিসের কিছু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে প্রতি সপ্তাহে দু’ তিনদিন বাইরে থাকেন। তবে এসব বিষয়ে অভিযুক্তদের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইলে যোগাযোগ করলেও কল রিসিভ না করায় তাদের মতামত পাওয়া যায়নি।
জেলা সাব-রেজিস্ট্রার সাবিকুন নাহার তার সঙ্গে অফিসে কয়েকবার দেখা করতে গেলে তাকে অফিসে পাওয়া যায়নি। ফোন দিলেও ফোন রিসিভ করেননি।

পাঠকের মতামত

দেশের প্রতিটা সেক্টর দূষিত। ১৫/২০ হাজার জেলখানা বানাতে হবে, এগুলোকে আজীবন খাওয়া দাওয়া ছাড়া রেখে দিতে। এত ঘুষ যখন খায়, তখন আর অন্য কিছু খাওয়ার দরকার নেই।

সোহাগ
২৭ মার্চ ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১০:৪২ পূর্বাহ্ন

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: news@emanabzamin.com
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status